জোট-ত্যাগের জন্য হাইকম্যান্ডের কাছে প্রদেশ কংগ্রেসের অনুমতি চাওয়াকে এ বার প্রকাশ্যে ‘কটাক্ষ’ করতে শুরু করলেন তৃণমূলের মন্ত্রীরা।
শুক্রবারের পর শনিবারও জোট ছাড়ার ব্যাপারে প্রদেশ কংগ্রেসের সিদ্ধান্তকে কার্যত ‘হুমকি প্রহসন’ বলে আক্রমণ করলেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। কংগ্রেসকে তাঁর পাল্টা হুঁশিয়ারি, “পদত্যাগের ব্যাপারে দিল্লি থেকে অনুমোদন আসার কথা বলে চমকানোর মানে কী? এ বার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ঢোকার আগে যদি কেউ জিজ্ঞাসা করেন অনুমোদন এল কি না, ওঁরা কী জবাব দেবেন?” হাইকম্যান্ডের কাছে ওই আবেদন কংগ্রেসের ‘অন্তর্দ্বন্দ্ব’ বলে মন্তব্য করে তৃণমূলের অপর এক মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কটাক্ষ, “আবেদন করেছে রাজ্য কংগ্রেস। মন্ত্রীরা কিছু বলছেন না। আসলে কংগ্রেসের যে সব নেতা মন্ত্রী হতে পারেননি, তাঁরাই এ সব বলছেন। তাঁরা নিজের নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গ করতে চাইছেন।”
সুব্রত ও ফিরহাদ দু’জনেই মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আস্থাভাজন’। তাদের ‘হুঁশিয়ারি’তে নিজে সরাসরি জবাব না-দিয়ে মন্ত্রীদের দিয়েই মমতা কংগ্রেসকে পাল্টা ‘কটাক্ষ’ করাচ্ছেন বলেই কংগ্রেসের ধারণা। কংগ্রেসের নেতারাও জানেন, তাঁদের মন্ত্রীদের মধ্যে কারা তড়িঘড়ি সরকার ছেড়ে আসার পক্ষপাতী নন। এবং সেই কারণেই খানিকটা ‘নমনীয়’ প্রদেশ কংগ্রেস। বিশেষত, সংবয়ং প্রণব মুখোপাধ্যায় যখন বলেছেন, তিনিও মমতার ‘সমর্থন’ চান।
এদিন উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরে দলের পঞ্চায়েতি রাজ সম্মেলনে তৃণমূলের নাম না-করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের আবেদন, “নিজেদের মধ্যে যতই বিভেদ থাকুক, তা ভুলে প্রণববাবুকে রাষ্ট্রপতি পদে সমর্থনের জন্য সব রাজনৈতিক দল এগিয়ে আসুক, সেটাই আমাদের অনুরোধ।”
হাইকম্যান্ডের কাছে জোট-ত্যাগের অনুমতি চাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কংগ্রেসের এই ‘পিছু’ হটাকে ‘পেটে খিদে মুখে লাজ’ বলে কটাক্ষ করেন ফিরহাদ। কংগ্রেস জোট ছাড়লেও যে তৃণমূল বিপাকে পড়বে না, তা বুঝিয়েই ফিরহাদের বক্তব্য, “কাউকে বেঁধে রাখিনি। কেউ যেতে চাইলে চলে যাক! মন্ত্রিসভায় থাকব আবার বিরোধিতা করব, এটা চলতে পারে না।” এর জবাবে অবশ্য পাল্টা কিছু বলতে চাননি প্রদীপবাবু। বস্তুত, প্রণববাবু রাষ্ট্রপতি না-হওয়া পর্যন্ত হাইকম্যান্ডও তৃণমূলের সঙ্গে প্রকাশ্যে ‘সুসম্পর্ক’ বজায় রাখার নির্দেশই প্রকারান্তরে দিয়েছে রাজ্য কংগ্রেসকে। প্রদীপবাবুর কথায়, “রাষ্ট্রপতি ভোট না-মিটলে হাইকম্যান্ড জোট ছাড়া নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে না বলে মনে হয়। ফলে এখন দলের সভা-সমাবেশে প্রণববাবুকে সমর্থনের জন্য তৃণমূলকে অনুরোধ করা হবে। যদিও এর সমীকরণ ভিন্ন। আর পাঁচটা ভোটের মতো রাষ্ট্রপতি ভোটের জন্য মাঠে-ময়দানে প্রচারের দরকার পড়ে না।”
আজ, রবিবার নদিয়ার কুপার্সে পুরভোটে কংগ্রেসের বিজয়োৎসব। কাল, সোমবার রাজারহাটে দলের কর্মী সম্মেলন এবং কংগ্রেস কাউন্সিলর মালা রায়ের বাড়িতে হামলার প্রতিবাদে দক্ষিণ কলকাতায় হাজরা মোড়ে সভা। সেখানে প্রদীপবাবু ছাড়াও দলের সাংসদ অধীর চৌধুরী, দীপা দাশমুন্সি, মৌসম বেনজির নূরের থাকার কথা। দেখার, সেই সভায় অধীর-দীপা-মৌসমরা কী বলেন।
|
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ধৃত মাতঙ্গিনী মহিলা সমিতির নেত্রী দেবলীনা চক্রবর্তীকে ফের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিল আদালত। ২০১০ সালে দক্ষিণ শহরতলির বিষ্ণুপুর থেকে মধুসূদন মণ্ডল, শচীন ঘোষাল-সহ পাঁচ মাওবাদী নেতা ধরা পড়েন। সম্প্রতি সিআইডি সেই মামলায় দেবলীনাকেও যুক্ত করে। শনিবার সেই মামলায় তাঁকে আদালতে হাজির করানো হয়। অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারক অমিতাভ মুখোপাধ্যায় তাঁকে ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। নন্দীগ্রাম থানার দু’টি মামলায় দেবলীনা অভিযুক্ত। তাই তাঁকে হলদিয়া জেলে রাখা হয়েছে। মামলার দিনে তাঁকে সেখান থেকেই আলিপুরে নিয়ে আসা হয়। আদালতে দেবলীনার আইনজীবী শঙ্কর মুখোপাধ্যায় জানান, বিষ্ণুপুরের মামলার এফআইআর বা চার্জশিটে কোথাও দেবলীনার নাম নেই। কিন্তু ৭০ দিন ধরে তাঁকে জেলে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁর দাবি, হলদিয়া থেকে এত দূরে গাড়ি চাপিয়ে আনার ফলে তাঁর মক্কেল প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি দেবলীনার জামিনের আর্জি জানান। যদিও তা মঞ্জুর হয়নি। |