সুইডেনের বিরুদ্ধে ৩-২ গোলে অসাধারণ জয়ের পরে বড় সমস্যায় ইংল্যান্ড কোচ রয় হজসন! গ্রুপের শেষ ম্যাচে ইউক্রেনের সঙ্গে ড্র করলেই কোয়ার্টার ফাইনাল মোটামুটি পাকা ইংল্যান্ডের। তবু হজসনের কপালে ভাঁজ। কারণ, ওয়েন রুনি।
দুই ম্যাচের সাসপেনশন কাটিয়ে ওঠা ওয়েন রুনিকে ইউক্রেন ম্যাচ থেকে পেয়ে যাচ্ছেন হজসন। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের তারকা স্ট্রাইকারকে না খেলানোর প্রশ্ন নেই। কিন্তু রুনিকে নামাতে হলে হজসনকে বসাতে হবে সুইডেন ম্যাচে গোল করা অ্যান্ডি ক্যারল আর ড্যানি ওয়েলবেকের মধ্যে কোনও এক জনকে। “ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রুনির মতো প্লেয়ার বড় ফারাক গড়ে দিতে পারে। তার থেকেও বড় কথা, রুনিকে বাদ দিলে ড্রেসিংরুমে খুনখারাপি হয়ে যাবে,” বলেছেন হজসন।
আপাতত মেজাজ বেশ ফুরফুরে ইংল্যান্ড কোচের। ইউরোয় আসার আগে স্ট্র্যাটেজি সংক্রান্ত নানা সমালোচনা হজম করতে হয়েছিল তাঁকে। ফ্রান্সের সঙ্গে ড্র করার পরে যা আরও জোরদার হয়। কিন্তু শুক্রবার সুইডেনের বিরুদ্ধে হজসনের মোক্ষম দু’টি চালে দুর্দান্ত ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দল। শুধু ঘুরেই দাঁড়ায়নি, অনেক বিশেষজ্ঞের বিচারে এই ইউরোর অন্যতম সেরা ম্যাচটা খেলেছে। হজসনের চিন্তার স্বচ্ছতা নিয়েও রাতারাতি হইচই পড়ে গিয়েছে ইংল্যান্ডে। অন্য দিকে, সুইডেন কোচ এরিক হ্যামরেন ইউরো থেকে দলের বিদায়ের সব দায় নিজের কাঁধে নিয়ে বলেছেন, “আমাদের অবস্থাটা অনেকটা ‘অস্ত্রোপচার সফল কিন্তু রোগী মৃত’ গোছের হল। ছেলেরা সত্যিই খুব ভাল খেলেছে। কিন্তু মাঠে আমাদের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর ছিল ইংল্যান্ড।” যার কৃতিত্ব অনেকটাই দাবি করতে পারেন হজসন।
হজসনের সেরা চালটা ৬০ মিনিটের মাথায় থিও ওয়ালকটকে বদলি নামানো। ইংল্যান্ড সেই সময় ১-২ পিছিয়ে। কিন্তু তেইশ বছরের আর্সেনাল উইঙ্গার নামার সঙ্গে সঙ্গে পাল্টাতে শুরু করে ম্যাচের রং। প্রথমে নিজে কুড়ি গজের দুর্দান্ত শটে গোল করে সমতা ফেরান। তার পরে ৭৮ মিনিটে ওয়ালকটের বাড়ানো পাস থেকেই জয়ের গোলটি করে যান ওয়েলবেক। “থিও ওই রকম দারুণ একটা গোলই শুধু করল না, অন্য গোলটার বলও সাজিয়ে দিল! ওর কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। খুব ভাল প্লেয়ার” বলেছেন উচ্ছ্বসিত হজসন। খেলা ঘোরানোর ক্ষেত্রে ওয়ালকটের উপর তাঁর প্রথম থেকেই আস্থা ছিল কি না জানতে চাওয়া হলে হজসন বলেন, “মাত্র এক মাস আগে দায়িত্ব নিয়েছি। আমি এখনও সবাইকে খুব ভাল করে চিনে উঠিনি। কার কোনটা শক্তি, কোনটা দুর্বলতা, সেগুলো আস্তে আস্তে বুঝছি।”
হজসনের দ্বিতীয় চাল লম্বা অ্যান্ডি ক্যারলকে নামানো। যাতে এরিয়াল বল খেলার ক্ষেত্রে সুইডদের দুর্বলতার সুযোগ নেওয়া যায়। নিখুঁত হেডে ইংল্যান্ডের প্রথম গোলটা করে গিয়ে, তাঁর উপর হজসনের আস্থার মান রাখেন লিভারপুলের স্ট্রাইকার। ম্যাচ জিতে ক্যারল আর ওয়েলবেককে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন ইংল্যান্ড কোচ। “ওরা যে ভাবে খেলল তাতে আমি ভীষণ খুশি,” বলেছেন তিনি। তবু রুনি এলে খুব সম্ভবত ক্যারলকেই বসতে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে রুনি-ওয়েলবেক ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড কম্বিনেশনেই আস্থা রাখবেন হজসন। সঙ্গে অ্যাশলে ইয়ংকে উইংয়ে ঠেলে দেওয়ার চিন্তাও রয়েছে। হজসনের কথায়, “রুনি এমন স্ট্রাইকার যে প্রয়োজনে অনেক নেমে গিয়ে খেলতে পারে। ফ্রান্স ম্যাচে আমাদের হয়ে অ্যাশলে ইয়ং বা আমাদের বিরুদ্ধে জ্লাটান ইব্রাহিমোভিচ যে ভূমিকাটায় ছিল। ওয়েন ফিরলে আমি খুব সম্ভবত অ্যাশলেকে উইংয়ে ঠেলে দেব।”
সুইডেন কিন্তু একটা সময় ইংল্যান্ডকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। ওলফ মেলবার্গের বাঁ-পায়ের গোলায় গোল শোধের পরে আবার মেলবার্গেরই হেড থেকে দ্বিতীয় গোল হজম করা। প্রথম গোলটা পরে রেফারি আত্মঘাতি দিলেও শেভচেঙ্কোদের মহড়া নিতে নামার আগে রক্ষণের এই ফাঁকফোকরগুলো হজসনকে ভাবাতে বাধ্য।
|