শেষ আটে গ্রিসের সঙ্গে চেক প্রজাতন্ত্র
দল হয়ে উঠতে না পেরেই
শূন্য হাতে ফিরল পোল্যান্ড

চেক প্রজাতন্ত্র-১ (জিরাসেক)
পোল্যান্ড-০
পোল্যান্ডের ফুটবলে এই মন্তব্য এখন সর্বকালের সেরা রসিকতা!
“পেট্রলের দামটা দিয়ে দেবেন আমায়। যদি আমায় গাছ দেখাতেই এখানে আনেন, তা হলে তো কাছের জঙ্গলে নিয়ে গেলেই পারতেন!”
বছর চারেক আগে রবার্ট লেবানদস্কির প্রতিভা দেখাতে বর্তমান জাতীয় কোচ স্মুদাকে একটা গ্রামে নিয়ে যান এক ভদ্রলোক। লোবানদস্কির ফুটবল দেখে হতাশ স্মুদা চেঁচিয়ে ওই কথাগুলো বলেছিলেন ভদ্রলোককে। তাঁর ক্লাব লেচ পোজনানে লেবানদস্কিকে নিতে চাননি স্মুদা।
সেদিনের সেই ‘গাছ’ লোবানদস্কি জাতীয় দলের এক নম্বর ফুটবলার, তাঁকে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে নেওয়ার জন্য ঝাঁপিয়েছেন ফার্গুসন। এবং স্মুদা পোল্যান্ডের জাতীয় কোচ।
বিখ্যাত পরিচালক রোমান পোলানস্কির অস্কারজয়ী সিনেমা ‘দ্য পিয়ানিস্ট’ এর মতো লেবানদস্কি স্মরণীয় ফুটবল সিনেমা তৈরি করবেন, আশায় ছিল সে দেশের জনতা। ইউরোর ৬০ বছরের ইতিহাসে একটাও ম্যাচ জেতেনি পোল্যান্ড। শুরুর দিকে বলা হচ্ছিল, ২০০৪ ইউরোর গ্রিস হতে পারে তারা। অনেক জায়গায় বেড়ে ওঠা ফুটবলার নিয়ে তৈরি পোল্যান্ড দলটা। প্রায়ই লেগে থাকে ঝামেলা। লেবানদস্কিই অনেককে নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। ইউরো বোঝাল, তাঁরা এখন দল হয়ে উঠতে পারেনি। মোক্ষম সময়ে জ্বলে উঠতে পারে না। কাকতালীয় ভাবে গ্রিস যে দিন রাশিয়াকে ছিটকে দিল, সে দিন পোল্যান্ডের ‘গাছ’ ফল দিতে পারল না।
ফুটবল ইতিহাসের বিচারে বোনিয়েক-লাটোর পোল্যান্ডের তুলনায় কয়েকশো মাইল এগিয়ে নেদভেদ-পোবরস্কির চেক প্রজাতন্ত্র। গত চারে একবার রানার্স, একবার তৃতীয় হয়েছে ইউরোয়। প্রথম কুড়ি মিনিট দেখে এটা বোঝা যায়নি পোল্যান্ডের বোরুসিয়ার ত্রয়ীর জন্য। সোভিয়েত ব্লকের পুরনো দেশ পোল্যান্ডের ফুটবল দলটাও বামপন্থা ভুলে পুরো দক্ষিণপন্থী। ডান দিক দিয়েই আক্রমণে উঠে বিব্রত করছিল মিনিট কুড়ি।
পোল্যান্ড-বধের নায়ক: মধ্যমণি জিরাসেক। ছবি: রয়টার্স
‘পিয়ানিস্ট’ হতে চাওয়া দলটার পিয়ানো স্তব্ধ হয়ে গেল তার পরেই। চেকরা শুরুর চাপটা নিয়ে উঠতে লাগল পাল্টা আক্রমণে। পোলিশরা ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে যেতে একটা সময় অদৃশ্য। চেক প্রজাতন্ত্রে পাঁচ জন ভিক্টোরিয়া প্লাজেনের ফুটবলার। স্পেনে বার্সেলোনা, জার্মানিতে বায়ার্ন যেমন জাতীয় দলটার মেরুদন্ড তৈরি করছে, তেমনই চেক দলটার ভিত গড়েছেন এঁরা। এ বার প্লাজেন ইউরোপিয়ান ফুটবলে চমকে দিয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলে। ওই বোঝাপড়াটা কাজে লাগিয়ে ঝাঁঝ ফেরাল চেকরা। রোসিস্কিকে ছাড়াই।
পুরনো চেকোস্লাভাকিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় দুই ক্রীড়াব্যক্তিত্ব বহু দিন ও দেশে থাকেন না। থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা এবং ইভান লেন্ডল এই ম্যাচটা দেখলে বুঝতে পারতেন, তাঁদের রক্ত এখনও বইছে চেক খেলোয়াড়দের মধ্যে। ঝড় ঝাপটা সামলে খাড়া হয়ে দাঁড়াতে পারেন। অন্য ম্যাচে গ্রিস রাশিয়াকে হারাচ্ছে দেখে, লেন্ডল বা মার্টিনার মেজাজে বিরতির পরে মরিয়া হয়ে উঠল চেকরা। না জিতলে তারাও ছিটকে যেত রাশিয়ার মতো।
চেক কোচ বিলেকের এত বদনাম ও দেশে, যে এক সমীক্ষায় ৯৬% লোকে বলেছে, তাঁকে ছাঁটাই করতে। ৩% লোকে বলেছেন, কোচকে মেরে ফেলতে। ১% অন্য এক ফুটবলারের সঙ্গে নাম গুলিয়ে ফেলেছেন। এক শতাংশও তাঁর পক্ষে নেই। সেই লোক এই ম্যাচটার পরে হয়তো এক শতাংশকে পক্ষে পাবেন। বিরতির পরে ম্যাচটা পুরো মুঠোয় নেওয়ার জন্য তাঁর ভূমিকা রয়েছে।
চেক সীমান্ত থেকে পৌনে দু’ঘণ্টা গাড়িতে পোল্যান্ডের ওরোক্লো শহর। ৫০ হাজার চেক সীমান্ত পেরিয়ে এসেছিলেন খেলাটা দেখতে। কার ভরসায়? ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সঙ্গে সম্পর্ক আছে বা ছিল, এমন তিন জনের ভরসায়। উতরে দিল তাঁদের চাপ নেওয়ার অভিজ্ঞতাও।
রাগবি স্কাল ক্যাপ পরা চেলসির পের চেক গত দুটো ম্যাচে ছটা শটে পাঁচটা গোল খেয়েছেন। আর্সেনালের রসিস্কি চোটের জন্য এগারোয় ছিলেন না। লিভারপুলের প্রাক্তন, আট বছর আগের ইউরোর সোনার বুট জয়ী, মিলান বারোসের ফুটবলে তিরিশ বছরেই সূর্যাস্তের ইঙ্গিত। ম্যাচটায় চেকরা চাপ বাড়াচ্ছিল, কিন্তু বারোসের ডাইরেক্ট ফুটবল, গতি, ড্রিবলিংয়ের ভয়ঙ্কর ব্যাপার আর দেখা যাচ্ছিল না। আগের ম্যাচের মতো এ দিনও তাঁর উদ্দেশে বিদ্রুপ ছুঁড়ল চেক গ্যালারি। চেকদের ভয়ঙ্কর করছিল ইথিওপিয়া জাত সাইডব্যাক থিওডোর গেব্রিসেলাসির ওভারল্যাপ। কেন এই প্রথম আফ্রিকা জাত কোনও কৃষ্ণাঙ্গকে খেলাচ্ছে চেকরা, তা বোঝা গেল আবার। গেব্রিসেলাসির সঙ্গে দুর্দান্ত লড়াই করলেন জিরাসেক ও পিলার। ৭২ মিনিটে টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা জিরাসেকেরই গোল। আশ্চর্য, প্রথম দিকের পোল্যান্ডকে তখনও পাওয়া গেল না। কী ভাবে যে তারা জেতার খিদে হারিয়ে ফেলল, কে জানে!
স্মরণীয় এক পোলিশ, জ্যোর্তিবিজ্ঞানী কোপারনিকাস বেঁচে থাকলে এটা তাঁর গবেষণার বিষয় হতে পারত!

নাটকীয় বিদায় রাশিয়ার
গ্রিস-১ (কারাগৌনিস)
রাশিয়া-০
ম্যাচের নায়ক গ্রিস অধিনায়ক কারাগৌনিসকে (দশ নম্বর জার্সি) নিয়ে উচ্ছ্বাস। ছবি: রয়টার্স
বিপক্ষ গোলের সামনে হারিয়ে ফেলা। গ্রিক-রক্ষণ ভাঙতে না পারার ব্যর্থতা। ফল, গ্রুপের শেষ ম্যাচে গ্রিসের কাছে হেরে ইউরো থেকে ছিটকে গেল রাশিয়া। যারা কিনা চেক প্রজাতন্ত্রকে চার গোল মেরে টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল। অনেক ফুটবল বিশেষজ্ঞই বলছিলেন, টুর্নামেন্টে রাশিয়া কালো ঘোড়া। অনেক দূর যাবে।
কী ভাবে ছিটকে গেলেন আর্শাভিনরা? গ্রিসের কাছে হারেই সব হিসাব উল্টে গেল। ইউরোর নিয়ম, দু’দলের পয়েন্ট সমান হলে গোলপার্থক্য নয়, দেখা হবে মুখোমুখি যুদ্ধে জয়-পরাজয়ের হিসাব। তিন ম্যাচে রাশিয়ার পয়েন্ট চার। গ্রিসেরও তাই। সে জন্য রাশিয়া বিদায় নিল।
হঠাৎ করেই গ্রুপের শেষ ম্যাচে ফিরে এল আট বছর আগের সেই রক্ষণাত্মক গ্রিস। আর্শাভিন-জাগোয়েভরা গোলের সুযোগ সে ভাবে তৈরিই করতে পারলেন না। উপরন্তু বিরতির আগে ইনজুরি টাইমে কারাগৌনিসের গোলে এগিয়ে যায় গ্রিস। তার পর আরও দুর্ভেদ্য হয়ে যায় গ্রিকদের রক্ষণ। রাশিয়া সেটা ভাঙতে পারেনি।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.