ইডেনের গ্যালারিতে দর্শকদের হাতে প্রথম মশাল জ্বলতে দেখা গিয়েছিল কবে?
হিরো কাপ ফাইনাল। সেই তিরানব্বইয়ের ঘটনা। কিন্তু তিনি পরিষ্কার বলে দিতে পারছেন, “দিওয়ালির সময় ছিল সেটা। প্রচুর বাজি পুড়েছিল আমরা জেতায়। সম্ভবত সেই প্রথম ইডেনের গ্যালারিতে মশাল জ্বলেছিল। আমার এখনও বেশ মনে আছে, একটা সময় ধোঁয়ায় ভর্তি হয়ে গিয়েছিল মাঠ। বল করার সময় বাউন্ডারি লাইনে যে ফিল্ডার ছিল তাকে প্রায় দেখাই যাচ্ছিল না।”
যিনি মনে করিয়ে দিলেন তিনি সেই ফাইনালের সেরা ভারতীয় বোলার। ১২ রানে ৬ উইকেট। শনিবার আনন্দবাজার পত্রিকার আয়োজনে নেতাজি ইন্ডোরে পৈলান গ্রুপের ‘এডুকোয়েস্ট’ অনুষ্ঠানে অতিথি বক্তা হিসেবে বলতে উঠে অনিল কুম্বলে আরও জানিয়ে দিলেন, কোটলার দশ উইকেট আর হিরো কাপ ফাইনাল কোনটা সেরা এখনও ঠিক করে উঠতে পারেন না তিনি। “দু’টোকেই পাশাপাশি রাখি। দু’টোই আমার কাছে সমান সুখের।” অকপটে এ-ও বলে ফেলললেন, “আমি মুরলী, শেন ওয়ার্নের মতো প্রতিভাবান ছিলাম না। ওরা আমার থেকে অনেক বেশি বল স্পিন করতে পারত!” বল না ঘুরিয়ে ৯৫৬ উইকেট!
সংক্ষেপে শহরে কুম্বলের ক্লাস। যেখানে ক্রিকেট থেকে পড়ুয়াদের কেরিয়ার সম্পর্কে রাস্তা দেখানো, সবই থাকল। গৌতম গম্ভীরকে কি নতুন টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে ভাবা উচিত? এক জন প্রশ্ন করলেন। কুম্বলে বললেন, “গম্ভীর প্রমাণ করেছে ওর মধ্যে ভাল অধিনায়ক হওয়ার গুণ রয়েছে। তবে ধোনির অতীত রেকর্ডটাও যেন লোকে ভুলে না যায়।” তার পর সেই বরাবরের কুম্বলে-দর্শন। ব্যক্তির আগে দল। “আমি এক জনের নেতৃত্বে বিশ্বাস করি না। বিশ্বাস করি গ্রুপ অব লিডার্সে। একটা কোর গ্রুপ থাকে। সেখানে একাধিক নেতা থাকবে। সবাই অবদান রাখবে। এটা ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য খুব ভাল দিক যে, গম্ভীর দেখিয়ে দিয়েছে ও সেই গ্রুপে ঢুকে পড়ার জন্য তৈরি।” শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, আরে! এটা তো অধিনায়ক গম্ভীরেরও দর্শন। |
শহরে অনিল কুম্বলে। শনিবার আনন্দবাজার পত্রিকার অনুষ্ঠানে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
ক্রিকেটজীবনে সমস্ত অধিনায়ক তাঁকে দিয়ে টানা বোলিং করিয়ে গিয়েছেন। এ দিন সে কথা মাথায় রেখেই সম্ভবত সঞ্চালক গৌতম ভট্টাচার্য স্রোতাদের উদ্দেশে শুরুতে বললেন, “আমি আপনাদের উপহার দিচ্ছি অনিল কুম্বলে রাইট আর্ম ওভার দ্য উইকেট।” এর পর ঘণ্টা দেড়েকের ওপর মাইক হাতে অক্লান্ত স্পেলই যেন করে গেলেন কুম্বলে। ক্রিকেটারের জার্সি গায়ে নেই। বরং কখনও তিনি বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণের দূত। যিনি বলে দেবেন, আমাদের দেশে মাত্র তিন শতাংশ জমি সংরক্ষণ করা আছে বণ্যপ্রাণীদের জন্য। কখনও তিনি ক্রিকেট প্রশাসক। যিনি বলে দেবেন, ক্রিকেটের মতো কুড়ি বছর প্রশাসনে থাকতে পারব কি না জানি না। কিন্তু চেষ্টা করব ক্রিকেটারের মতোই দায়বদ্ধতা দেখানোর। কখনও ক্যামেরা-প্রিয় ফটোগ্রাফার। যিনি পড়ুয়াদের হাতে অনন্য টোটকা ধরিয়ে দেবেন চাপ কাটানোর জন্য আমি ক্যামেরা সঙ্গে রাখতাম। খুবই উপকার পেয়েছি। তবে যে পোষাকেই তিনি আবির্ভূত হন, একটা মন্ত্রে হেরফের নেই সাফল্যের কোনও শর্ট কার্ট হয় না। কুম্বলে আর একটু গভীরে গিয়ে এর সঙ্গে যোগ করতে চান, “শুধু খাটলে হবে না, কী ভাবে খাটছ, সেটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।” দক্ষিণ ভারতের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এর পর পরীক্ষার মন্ত্রও জানালেন আর সেটা তাঁর ক্রিকেটার জীবনের স্ক্রিপ্টকেই মনে করিয়ে দেবে। “যে প্রশ্নের উত্তরগুলো সবথেকে ভাল জানা, সেগুলো আগে লিখে ফেলো। যাতে শুরুতেই পরীক্ষকের দারুণ ধারণা তৈরি হয়ে যায় তোমাকে নিয়ে।”
কেরিয়ার নিয়ে বলতে বলতে ফের ক্রিকেটে ঢুকে পড়া। কোন ব্যাটসম্যানকে বল করা সবথেকে কঠিন মনে হয়েছে? “বেঁচে গিয়েছি সব ভাল ব্যাটসম্যানরা আমাদের দলে ছিল। সচিন, রাহুল, সৌরভ, লক্ষ্মণ। ওদের শুধু নেটে বল করতে হত।” এর পর তিন জনের নাম করলেন। ব্রায়ান লারা। স্টিভ ওয়। জাক কালিস। ক্রিস গেইলকে টি-টোয়েন্টিতে কী ভাবে বল করতেন? কুম্বলের গলায় একই রকম প্রশান্তি, “বেঁচে গিয়েছি, ক্রিস গেইলকে আমার বল করতে হচ্ছে না।”
হিরো কাপ সেমিফাইনালে সচিনের সেই ঐতিহাসিক শেষ ওভার এখনও ভোলেননি তিনি। আর এ দিন মঞ্চে মাইক হাতে তিনি শেষ ওভারে পেলেন মোক্ষম বাউন্সার। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কি এ বার সম্পূর্ণ ভাবে খেলা ছেড়ে দেওয়া উচিত? “এটা সৌরভের সিদ্ধান্ত,” বলে কুম্বলে যোগ করলেন, “আমার মনে হয়েছিল এক জন তরুণ ক্রিকেটার তৈরি হওয়ার সুযোগ পাবে। এখনও ইচ্ছে করলে চারটে ওভার আমি করে দিতে পারি। কিন্তু সেটাই তো সব হতে পারে না।” এর পরেই হাসতে হাসতে তাঁর গুগলি, “ঠিক আছে, সৌরভের সঙ্গে তো রাতে দেখা হচ্ছে। ওকে জিজ্ঞেস করব, কবে সম্পূর্ণ ভাবে রিটায়ার করছে!” |