লি-হেশ লড়াই নরমে-গরমে মেটাতে নেমে পড়ল সর্বভারতীয় টেনিস সংস্থা। এক দিকে এই মুহূর্তে লন্ডনে থাকা লিয়েন্ডার-মহেশের মধ্যে বোঝাপড়া ঘটাতে নির্বাচন কমিটির এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে কাজে লাগাচ্ছে এআইটিএ। অন্য দিকে, লিয়েন্ডারের পার্টনার হতে সম্পূর্ণ অরাজি মহেশকে চাপে রাখতে শনিবারই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আরও এক বার এআইটিএ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে অনিল খন্না বলেছেন, “মহেশ নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে ওর বদলে রোহন বোপান্নাকে অলিম্পিকে লিয়েন্ডারের পার্টনার হিসেবে পাঠানো হবে।” রাতের দিকে লিয়েন্ডারও বলেন, “ফেডারেশনের নির্বাচিত প্লেয়ারের সঙ্গে খেলতে আমি সর্বদা রাজি। তবে ব্যক্তিগত ভাবে আমি বোপান্নার সঙ্গে খেলতে পছন্দ করব।”
কিন্তু মহেশ-বোপান্না যৌথ ই-মেলে জানিয়েছিলেন, তাঁদের যেন একমাত্র জুটি হিসেবেই অলিম্পিকের জন্য বিবেচনা করা হয়। ব্যক্তিগত প্লেয়ার হিসেবে নয়। সে জন্য এআইটিএ-রই একটা অংশ মনে করছে, যৌথ ই-মেলের অর্থ, বোপান্নাও লিয়েন্ডারের সঙ্গে খেলতে রাজি নন। এ দিন এক নির্বাচক বললেন, “তখন সোমদেবকে লিয়েন্ডারের পার্টনার করে দেবে এআইটিএ-র শীর্ষ কমিটি। ব্যাপারটা তো এখন আর নির্বাচকদের হাতে নেই। শীর্ষ কর্তারা দেখছেন।” এআইটিএ সূত্রের খবর, লিয়েন্ডারের সঙ্গে খেলব না এই গোঁ ধরে মহেশ-বোপান্না শেষ পর্যন্ত অলিম্পিকেই না গেলে তাঁদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তাও আছে শীর্ষকর্তাদের। অলিম্পিক প্রস্তুতির জন্য গত এক বছরের ওপর প্রতি মাসে কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রক থেকে মহেশ, বোপান্না ছয় হাজার ডলার (তিন লাখ টাকার বেশি) করে পাচ্ছেন। তাঁরা অলিম্পিকে না গেলে সেই পুরো অর্থটাও তাঁদের ফেরত দিতে বলবে এআইটিএ।
পালটা মহেশ শিবিরও চুপচাপ বসে নেই। জানা গেল, মহেশ-বোপান্না কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রকের দ্বারস্থ হতে পারেন। ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থাকেও (আইওএ) আবেদন জানাতে পারেন হস্তক্ষেপ করার জন্য। ২১ জুন আন্তর্জাতিক টেনিস সংস্থা অলিম্পিকের জন্য বিভিন্ন দেশের প্লেয়ারদের চূড়ান্ত নাম প্রকাশ করবে। মহেশদের হাতে সময় কম। তাঁরা চাইছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে এআইটিএ-র ওপর চাপ সৃষ্টি করতে। যাতে দু’টো ডাবলস টিম যেতে পারে অলিম্পিকে। ক্রীড়ামন্ত্রক যদি সেই নির্দেশ দেয়, সে ক্ষেত্রে এআইটিএ-কে সেটা মানতে হতে পারে। যেহেতু অলিম্পিক প্রস্তুতির জন্য প্লেয়ারদের মূল আর্থিক সহায়তাটা ক্রীড়ামন্ত্রকই করেছে। আইওএ এ দিনই এআইটিএ-র কাছে অলিম্পিক টেনিস দল নির্বাচন নিয়ে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে।
তলে-তলে আবার অনিল খন্নার খাসতালুক দিল্লিরই এক নির্বাচককে এআইটিএ কাজে লাগিয়েছে লি-হেশের মধ্যে মিটমাট করাতে। তিনি উভয় প্লেয়ারের সঙ্গে ইতিমধ্যেই কথা বলেছেন। বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, দু’জনেরই এটা অলিম্পিকে পদক জেতার শেষ সুযোগ। যেটা দু’জনের কারওরই বোপান্নাকে পার্টনার নিয়ে খেলে পাওয়ার সম্ভাবনা যতটা, তার চেয়ে অনেক বেশি সম্ভাবনা যদি তাঁরা নিজেরা একসঙ্গে খেলেন। ডাবলসের টেকনিক্যাল যুক্তি দিয়ে লি-হেশকে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে যে, লিয়েন্ডার যেমন দেশের সেরা ডিউস কোর্ট প্লেয়ার, মহেশ তেমনই দেশের সেরা অ্যাডভান্টেজ কোর্ট প্লেয়ার। বোপান্নার জন্য বাধ্য হয়ে ১৭ বছর পরে ডান কোর্টে সরে এসেছেন এ মরসুমে পেশাদার সার্কিটে। লিয়েন্ডারের সঙ্গে অলিম্পিকে খেললে মহেশ নিজের বরাবরের পছন্দের বাঁ কোর্টে খেলতে পারবেন। আরও বোঝানো হচ্ছে যে, তোমরা অতীতে একাধিক বার নিজেদের মধ্যে এ রকম মনোমালিন্য, এমনকী বাক্যালাপ বন্ধ থাকা অবস্থায় ডেভিস কাপে খেলে জিতেছ। এ বার সে রকমই অলিম্পিকে দেশকে পদক এনে দাও।
কিন্তু তাতে কতটা চিঁড়ে ভিজবে বলা মুশকিল। কারণ মহেশের দিক দিয়েও অনেক পালটা যুক্তি আছে। নিজের ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি বলেছেন, চার বছর আগে বেজিং অলিম্পিকের সময় তিনিই দেশের সেরা র্যাঙ্কিং ডাবলস প্লেয়ার ছিলেন। তখন কিন্তু তাঁকে এ বারের মতো অলিম্পিক-নিয়মের অজুহাত দেখিয়ে এআইটিএ নিজের পছন্দের পার্টনার বেছে নেওয়ার সুযোগ দেয়নি। যেটা এ বার লিয়েন্ডার পেয়েছেন। বেজিং অলিম্পিকেও তিনি বোপান্নাকে নিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এআইটিএ-র চাপে লিয়েন্ডারকে নিয়ে খেলতে বাধ্য হন। কিন্তু এ বার কি লিয়েন্ডারকে তিনি কাকে পার্টনার চান, নির্বাচকেরা জিজ্ঞেস করেছিলেন? এক নির্বাচক বললেন, “লিয়েন্ডার বোপান্নার নাম বলেছিল। কিন্তু নির্বাচকদের গরিষ্ঠ অংশ বৈঠকে মহেশকে চায়। তাদের যুক্তি ছিল, একটা টিমই পাঠানো হলে, দেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ আর সফল জুটিকেই পাঠানো হোক।” অথচ লিয়েন্ডার ডাবলসের বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম দশে। তিনি সরাসরি অলিম্পিকের টিকিট পেয়েছেন। মহেশ-বোপান্নার আবার টিম হিসেবে সরাসরি অলিম্পিকে যাওয়ার যোগ্যতা আছে। সে জন্য এ বার দু’টো টিম পাঠাবার সুযোগ ছিল। সেই সুযোগ নির্বাচকেরা নেননি।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে নির্বাচকদের ওই গরিষ্ঠ অংশটা দিল্লির। ভারতীয় টেনিসমহলে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি অনিল খন্না জোর করে লি-হেশ জুটিকে অলিম্পিকে পাঠাতে গিয়ে ভারতীয় টেনিসকে সঙ্কটের মধ্যে ঠেলে দিলেন? |