প্রবন্ধ...
বিক্ষুব্ধ ধরণী
রণী বিক্ষুব্ধ। মানুষ সুখে বাঁচবার তাগিদে ধরণীকে তছনছ করে ছেড়েছে। সুখে থাকতে গিয়ে মানুষ শান্তিকে বিসর্জন দিয়েছে, প্রকৃতির স্বাভাবিক স্থিতাবস্থাকে করেছে বারে বারে আঘাত।
পৃথিবী লক্ষ লক্ষ যুগ পরে খুবই অনুকূল আবহাওয়াতে ফিরে এসেছিল, আজ থেকে প্রায় আট হাজার বছর আগে। ‘ফিরে এসেছিল’ মানে কী? আসলে, এই গ্রহের গত দশ কোটি বছরের ইতিহাসে অবহাওয়া বহু বার বিপুল পরিবর্তনের মুখে পড়েছে। কোনও কোনও সময়ে প্রায় গোটা পৃথিবীটাই তুষার বা বরফে ঢাকা ছিল। আবার কোনও সময়ে পৃথিবীর শেষ উত্তরে বা শেষ দক্ষিণেও মেরুর ওপরে কোনও বরফই ছিল না, আমাদের মতো গরম দেশের প্রাণীরাই উত্তর এবং দক্ষিণ মেরুতে হাঁটাচলা করত।
এমনকী মানুষ যত দিন থেকে পৃথিবীর ভাড়াটে হয়ে আছে, সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত হাজার হাজার তুষার যুগ এসেছে। অনুকূল আবহাওয়া তো কেবল গত আট হাজার বছর ধরে। এই আট হাজার বছর ধরে গ্রহের বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড মোটামুটি একই রকম আছে। প্রত্যেক দশ লক্ষে দুশো আশি ভাগ (পার্টস পার মিলিয়ন বা পি পি এম)। এই কার্বন ডাই-অক্সাইডই ‘সবুজবাড়ি’র (গ্রিনহাউস) মুখ্য গ্যাস। সারা আকাশব্যাপী হালকা লেপের মতো ছড়িয়ে আছে সে। এই সেই গ্যাস, যে পৃথিবীর আবহাওয়া কোন দিকে মোড় নেবে, তা মোটামুটি ঠিক করে দেয়।
কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাপ (দু’শো আশি) গত আট সহস্রাব্দ ধরে প্রায় একই রকম ছিল। তার পর শুরু হল শিল্পজগতের নবজাগরণ। ১৭৮০ সালে জেমস ওয়ট আবিষ্কার করলেন রেলগাড়ি, জলের বাষ্পে এঞ্জিন চলতে আরম্ভ করল। কয়লা যত পুড়তে লাগল, শিল্পজগৎও যথেষ্ট উন্নত হতে থাকল। নতুন নতুন শিল্প আবিষ্কৃত হল, আরও কয়লা পোড়ানোর ব্যবস্থা হল।
যত কয়লা পোড়ে, বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ততই বাড়তে থাকে। মানুষ সে যুগে (১৮০০ সাল নাগাদ) ভাবতেই পারেনি সভ্যতা এবং প্রকৃতির পক্ষে এর পরিণাম কী হতে পারে। একেবারেই মাথা ঘামায়নি। শিল্পজগতের উন্নতিই ছিল তাদের একমাত্র লক্ষ্য।
কার্বন ডাই-অক্সাইড বড় পাজি গ্যাস। আকাশে গেঁড়ে বসে গেলে একশো বছর টিকে থাকবে, এটা ইদানীং কালের আবিষ্কার। আর যত টিকে থাকবে, ততই ‘সবুজবাড়ি’র কুফল পৃথিবীকে সহ্য করতে হবে, ধরণী নিদারুণ যন্ত্রণায় ভুগবে, সঙ্গে সঙ্গে ধরণী গরম হবে, তুষার গলবে, সমুদ্রের জল আরও ফেঁপে উঠবে।
এই গ্যাসের মাত্রা বাড়তে বাড়তে এখনই পৌঁছে গিয়েছে ২৮০ থেকে ৩৮০-তে।
এই একই ভাবে মানুষ যদি বসবাস করে, তা হলে ২০৫০ সাল নাগাদ কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা গিয়ে দাঁড়াবে ৫০০-তে। শিল্পজগতের প্রথম যুগের সময় থেকে প্রায় দ্বিগুণ বেশি।
এটাও আমরা জানি যে, দু’শো থেকে চারশো লক্ষ বছর আগে পৃথিবীতে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা যখন ৫০০-তে গিয়ে পৌঁছয়, তখন সাগরের জলের মাত্রা আজকের মাত্রার তুলনায় ৩০০ ফুট উঁচুতে ছিল। মানে, অর্ধেক পৃথিবী জলের নীচে। ‘ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ (আই পি সি সি) খুব সঙ্গত ভাবেই ঘোষণা করেছে যে, ২১০০ সালে তাপমাত্রা আজকের তুলনায় প্রায় দুই থেকে তিন ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বেশি হবে।

সাধারণ ভাবে তাপমাত্রার এত সামান্য বাড়া-কমার ব্যাপারটা বোঝা মুশকিল। আগামী কালের তাপমাত্রা আজকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি বেশি হওয়াটা তো খুবই পরিচিত। সারা জাগতিক গড় তাপমাত্রা একটু বেশি হওয়ার তাৎপর্য বোঝা যায়, যখন বলা হয় যে শেষ তুষার যুগের তুলনায় আজকের গড় তাপমাত্রা মাত্র পাঁচ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড কম ছিল। ধরণী গরম হলে সমুদ্রের জলের মাত্রা উঠে আসবে স্থলের ওপর। তার ফলে বাংলাদেশ, চিন, কলকাতা জলের নীচে চলে যাবার আশঙ্কা আছে। মরিশাস এই নিয়ে খুবই উত্তেজিত। অস্ট্রেলিয়ার কাছে একটি দ্বীপ আছে, সমুদ্র সেই দ্বীপটির অনেকটাই গ্রাস করে ফেলেছে।
প্রকৃতির রোষ? সামোয়া, সুনামির পরে। ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০০৯
আবহাওয়া পরিবর্তন এবং সবুজবাড়ির গ্যাসের উপদ্রবে ভূমিকম্প, প্লাবন, হারিকেনের ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে। উত্তাপের জ্বালায় আবহাওয়ার পরিবর্তন পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, ‘ওরে বাবা, কী গরম, কী গরম’ রব শোনা যায়।
এত ঘন ঘন ভূমিকম্প পৃথিবীর ইতিহাসে লেখা নেই। সমুদ্রের জলের উপরে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে জলের পরিমাণটা তো বাড়ছেই, জলের ওজনও বাড়ছে। সমুদ্রের গভীরে যে ধরণীবক্ষ, তাকেও সহ্য করতে হচ্ছে। বইতে হচ্ছে এই চাপ, চাপের ঠেলা সামলাতে গিয়ে সমুদ্রের গভীরে পৃথিবীর মাটি কেঁপে উঠছে। ‘সুনামি’র ছড়াছড়ি। ‘সুনামি’ নামটা ইদানীং সবাই প্রায় জানেন। আজ থেকে ছয়-সাত বছর আগেও আমরা সুনামি সম্বন্ধে খুব একটা ওয়াকিবহাল ছিলাম না।
পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দারা আবার মহাপর্বত হিমালয়ের পদতলে। হিমালয় যেখানে দাঁড়িয়ে, সেখানে ভূমিকম্প হতেই পারে। বৈজ্ঞানিকরা মনে করেন, এই ভূমিকম্পের মাত্রা খুবই বেশি হতে পারে। আবার দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর, যেখানে সমুদ্রের জলের মাত্রা বেড়েই চলেছে।
সোনার বাংলার এক দিকে শোনা যাচ্ছে সাগরের গর্জন আর এক দিকে পাহারা দিচ্ছে হিমালয় পাহাড়। খামখা না চেঁচামেচি করে বাঙালি এই সমূহ বিপদ থেকে বাংলাকে রক্ষা করুন, এই আমার বিনীত অনুরোধ।
ধরণীর ক্ষুব্ধ গোঙানি শুনতে পেয়েছেন কি?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.