ট্রেন দুর্ঘটনা রুখতে যে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের কার্যকরিতা নিয়ে দেশ জুড়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, সেই এসিডি-র (অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস) দৌলতেই বড় রকম বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেল কামরূপ এক্সপ্রেস। গত কাল সন্ধ্যায় অসমে মরিগাঁও জেলার বরাহু স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মালগাড়ির পিছনে একই লাইনে ঢুকে পড়েছিল কামরূপ এক্সপ্রেস। একেবারে শেষ মুহূর্তে এসিডি-র স্বয়ংক্রিয় ব্রেক ও চালকের জরুরি ব্রেক একসঙ্গে কাজ করায় থেমে গেল ট্রেন। বেঁচে গেলেন এই এক্সপ্রেস ট্রেনের কয়েকশো যাত্রী। এড়ানো সম্ভব হল আর একটি গাইশাল বা সাঁইথিয়া কাণ্ডের মতো দুর্ঘটনা।
কাল সন্ধ্যায় বরাহু স্টেশনে কী ধরনের বিপর্যয় ঘটতে চলেছিল?
ডিব্রুগড়গামী কামরূপ এক্সপ্রেসের চালক জে সি কলিতা জানান, সিগন্যাল হলুদ সঙ্কেত দেখানোয় তিনি ট্রেনের গতি কমই রেখেছিলেন। স্টেশনে ঢোকার মুখে কলিতা লক্ষ করেন, দুই নম্বর লাইনে না গিয়ে তিন নম্বর লাইনে ঢুকে পড়েছে তাঁর ট্রেন। আর সামনে একই লাইনে দাঁড়িয়ে আছে আস্ত একটি মালগাড়ি। বিপদ বুঝে তৎক্ষণাৎ জরুরি ব্রেক কষেন তিনি। একই সঙ্গে এসিডির স্বয়ংক্রিয় ব্রেকটিও কাজ করে। তীব্র ঝাঁকুনি দিয়ে ট্রেনটি দাঁড়িয়ে যায়।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য মুখপাত্র সীতু সিংহ হাজোং বলেন, “ব্রেক সময়মতো পড়লেও ট্রেনের গতি কম থাকায় বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি। ট্রেন তীব্রবেগে থাকলে দু’টি ব্রেক একসঙ্গে আচমকা টানলে ট্রেন লাইনচ্যূত হতই। নেহাতই কপাল ভাল। তাই, সব সামলানো গিয়েছে।”
তীব্র ঝাঁকুনি ও ঘর্ষণের শব্দে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়। বরাহু স্টেশনে নেমে যাত্রীরা টের পান, কতবড় দুর্ঘটনা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন তাঁরা। তবে যাত্রীদের অভিযোগ, ঘটনার দেড় ঘণ্টা পরেও রেল কর্তাদের স্টেশনে আসতে দেখা যায়নি। স্বভাবতই উত্তেজিত হয়ে পড়েন যাত্রীরা। ঘণ্টা দুয়েক পরে কামরূপ এক্সপ্রেসকে পিছনে সরিয়ে এনে, দুই নম্বর লাইন দিয়ে, ডিব্রুগড় অভিমুখে রওনা করানো হয়।
সম্প্রতি, অন্ধ্রের অনন্তপুরে ২২ মে হাম্পি এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়িতে ধাক্কা মারায় প্রায় ৪০ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়। তবে, একই লাইনে আসা দুটি ট্রেনের মুখোমুখি ধাক্কার সবচেয়ে বড় ঘটনার সাক্ষী পশ্চিমবঙ্গের গাইশাল। ১৯৯৯ সালের ২ অগস্ট ব্রহ্মপুত্র মেল ও অবধ-অসম এক্সপ্রেসের ধাক্কায় ২৮৫ জনের মৃত্যু হয়। সেই দুর্ঘটনার ভয়াবহতা থেকেই, ‘অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস’ নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু করে রেল মন্ত্রক। ২০০০ সালে, ‘কোঙ্কন রেলওয়ে কর্পোরশন’ প্রথম ‘এসিডি’ তৈরি করে। যদি, দুটি ট্রেন একই লাইনে, নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে চলে আসে, তবে,এসিডি-র স্বয়ংক্রিয় ভাবে ব্রেক কষার কথা।
ঘটনা হল, গত মাসেই সিএজি এই প্রযুক্তির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে জানায়, প্রযুক্তিটি এখনও একশো শতাংশ নির্ভরযোগ্য ও কার্যকরী
ভাবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। যদিও, এর পিছনে রেলের ১৫৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
সিএজির মতে, দেশের বিভিন্ন অংশে এই প্রযুক্তির ত্রুটি ধরা পড়েছে। বিশেষ করে, দুটি ট্রেন এক লাইনে এলে, নানা তথ্যের জটিলতায় জড়িয়ে এসিডি স্বয়ংক্রিয় ব্রেক লাগাচ্ছে না।
সমালোচনা যা-ই হোক, গত সন্ধ্যায় কিন্তু কামরূপ এক্সপ্রেস বাঁচল এসিডি-র সৌজন্যেই। |