তিস্তা চুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ছাপ ফেলবে না বলেই মনে করছে কেন্দ্র। তিস্তা জলবণ্টন নিয়ে চুক্তি শীঘ্রই করা যাবে বলে এখনও আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইকে কেন্দ্র করে কংগ্রেস-তৃণমূল সম্পর্ক যে বেশ তিক্ত হয়েছে, তা নিয়ে সংশয় নেই। আবার সেই সন্ধিক্ষণে বর্ষীয়ান সমাজবাদী নেতা মুলায়ম সিংহকে পাশে পাওয়াও কংগ্রেসের পক্ষে ইতিবাচক। কিন্তু সপা-কে পাশে নিয়ে আর্থিক সংস্কারের কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশা জাগলেও, তিস্তা চুক্তির জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সম্মতি প্রয়োজন। চুক্তির খুঁটিনাটি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের সঙ্গে সহমত না হলে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে এই জলচুক্তির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। গত ৭২ ঘণ্টায় কংগ্রেস-তৃণমূল সম্পর্কের আরও অবনতি হওয়ায় সেই আশঙ্কা ইতিমধ্যেই উঁকি দিতে শুরু করেছে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে ইউপিএ-র প্রার্থী হিসাবে ঘোষণার পর আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী আট দিনের বিদেশ সফরে রওনা হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের এক শীর্ষ কর্তা আজ বলেন, “তিস্তা চুক্তি নিয়ে মনমোহন সিংহ এখনও আশাবাদী। কারণ তিনি মনে করেন, এই চুক্তি ভারত-বাংলাদেশের স্বার্থেই শুধু জরুরি নয়, পশ্চিমবঙ্গের জন্যও প্রয়োজন। দুই বাংলার মধ্যে আস্থার সম্পর্ক বাড়লে, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যও বাড়বে। তাতে দুই বাংলার মানুষই উপকৃত হবেন।”
ওই শীর্ষ সারির আমলার কথায়, এমন নয় যে মমতা তিস্তা চুক্তির বিরোধী। সে কথা তিনি নিজেও বার বার বলেছেন। তবে চুক্তির কিছু শর্ত নিয়ে তাঁর আপত্তি রয়েছে। সেই কারণে, তিনি কল্যাণ রুদ্রের নেতৃত্বে একটি এক সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন। সেই কমিটি তিস্তার জল প্রবাহের বিষয়টি সমীক্ষা করে দেখছে। আবার কেন্দ্রীয় জল সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকও তিস্তা চুক্তিটি নতুন করে সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ ব্যাপারে মন্ত্রকের তরফে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একটি ‘প্রেজেন্টেশনও’ দেওয়া হবে শীঘ্রই। পাশাপাশি রাজ্যকে খুশি করতে ফরাক্কা ব্যারেজ সংস্কারের কাজেও গতি বাড়াতে চাইছে কেন্দ্র। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় ঢাকা সফরে গেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর এ ব্যাপারে কথা হয়েছে। সাউথ ব্লক সূত্রে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের অন্তত ছ’মাস আগে দু’দেশের মধ্যে এই চুক্তিটি করতে চায় নয়াদিল্লি।
নয়াদিল্লির কূটনীতিকদের কথায়, কেন্দ্র এমন কিছু করবে না যা পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থবিরোধী। তা ছাড়া তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে প্রথমে পাঁচ বছরের জন্য চুক্তি করা হবে। পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা খতিয়ে দেখে তার পরে ১৫ বছরের চুক্তি করা হবে। ১৫ বছর পর ফের এই চুক্তি পর্যালোচনা করে দেখা হবে। সুতরাং রাজ্যের স্বার্থ যাতে ক্ষুণ্ণ না হয়, সে দিকে নজর রাখবে কেন্দ্র। |