এক দিকে মূল্যবৃদ্ধি, দুর্নীতির ধারাবাহিক অভিযোগ, অন্য দিকে অন্ধ্রপ্রদেশে উপনির্বাচনে জগন-ঝড়। তার মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো শরিকের সঙ্গে সংঘাত।
কংগ্রেসের এই দুর্দিনে তাদের আরও দুর্বল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিজেপি। লোকসভা ভোটের আগে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই নিজেদের ঘর গুছিয়ে নিতে চাইছে কেন্দ্রের প্রধান বিরোধী দল। সেই ভোটে হার-জিত যা-ই হোক না কেন, আপাতত তাদের লক্ষ্য মমতাকে কাছে টানা।
বিজেপি গোড়া থেকেই জানত, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তাদের পক্ষে প্রয়োজনীয় সংখ্যা নেই। সে কারণে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থন করার কথাই ভেবেছিল তারা। কিন্তু মুলায়ম ও মমতা গোটা সমীকরণটি বদলে দিতেই উজ্জীবিত হয়ে ওঠে বিজেপি শিবির। মমতার পাশ থেকে মুলায়ম সরে যাওয়ার পরে প্রণবের রাষ্ট্রপতি হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে ঠিকই, কিন্তু বিজেপি মনে করছে মমতাকে যদি ইউপিএ থেকে সরিয়ে আনা যায়, তা হলে সেটাই হবে মস্ত বড় রাজনৈতিক লাভ।
সেই লক্ষ্যে বিজেপি তথা এনডিএ-র কৌশল, নিজে থেকে কোনও প্রার্থী না দেওয়া। কারণ সে ক্ষেত্রে মমতার পক্ষে সেই প্রার্থীকে সমর্থন করা কঠিন হবে। মমতা যাঁর নাম প্রস্তাব করেছিলেন, সেই এ পি জে আব্দুল কালাম যে প্রার্থী হচ্ছেন না, সেটা এক প্রকার নিশ্চিত। কালাম যদি প্রার্থী হতেন, তবে তাঁকেই সমর্থন করত বিজেপি। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জয়ললিতা বা অন্য কাউকে দিয়ে পূর্ণ সাংমার নাম প্রস্তাব করানোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ ধরনের কারও প্রস্তাবিত প্রার্থীকে সমর্থন করতে মমতার অসুবিধা হবে না। এনডিএ-ও বাইরে থেকে সেই ‘নির্দল’ প্রার্থীকে সমর্থন করবে।
তবে বিজেপি নেতৃত্ব বিলক্ষণ জানেন, মমতা এখনই এনডিএ-র ছাতার তলায় আসবেন না। পশ্চিমবঙ্গে একটি বড় সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে। যে ভোটব্যাঙ্কের বড় অংশই এখন মমতার সমর্থক। ফলে এনডিএ-তে যোগ দিয়ে তাদের সমর্থন হারানোর ঝুঁকি মমতা নেবেন বলে মনে হয় না। এই অবস্থায় ইউপিএ-তে ফাটল ধরানোর লক্ষ্য নিয়েই বিজেপি নেতৃত্ব এগোতে চাইছেন। বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতার কথায়, “রাষ্ট্রপতি নির্বাচন দিয়ে তো আর লোকসভা ভোট হবে না। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেন নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। আর লোকসভা নির্বাচনে ভোট দেন আম-জনতা। সেখানে মূল্যবৃদ্ধি-দুর্নীতিই বড় বিষয়। তবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে ঘিরে কংগ্রেস যদি দুর্বল হয়, আর বিজেপি যদি নিজেদের ভিত্তি বাড়িয়ে নিতে পারে, তা হলে সেটাই তো দলের লাভ।”
সেই কারণে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে এনডিএ-র বাইরে থাকা অ-কংগ্রেসি দলগুলির সঙ্গে সমন্বয় রাখার চেষ্টা করছে বিজেপি। সাংমার দুই সমর্থক জয়ললিতা ও নবীন পট্টনায়কের পাশাপাশি সনিয়ার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে অন্ধ্রপ্রদেশের উপনির্বাচনে কংগ্রেসকে ধরাশায়ী করে ফেলা জগন্মোহন রেড্ডির দলের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, গত কাল উপনির্বাচনের ফল প্রকাশের পরেই জগনের মায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন মমতা। এর ফলে কংগ্রেস-বিরোধী বৃহত্তর মঞ্চে তৃণমূল নেত্রী চলে এলেন বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে কৌশলগত কারণেই বিজেপি-র কোনও শীর্ষ নেতা মমতার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখছেন না। তবে তৃণমূল শিবিরে নিয়মিত বার্তা পাঠাচ্ছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ মাঝারি স্তরের নেতারা। |