একদা সুপারহিট ছবিতে তাঁর রাজ্যের অধুনা ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডরের সুপারহিট ডায়ালগ ছিল, ‘‘পিকচার আভি বাকি হ্যায়
মেরে দোস্ত!”
কাকতালীয়। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথার সঙ্গে আশ্চর্য মিল শাহরুখ খানের ডায়ালগের “গেম ইজ নট ওভার!”
খেলা এখনও শেষ হয়নি।
‘খেলা’ শুরু করেও দিয়েছেন মমতা।
কী? না, কালামের পক্ষে ‘নাগরিক জনমত’ তৈরি করা। যার নির্যাস দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়া উচিত কালামের মতো ‘অরাজনৈতিক এবং সর্বজনগ্রাহ্য’ কারও। কোনও রাজনৈতিক দলের (আসলে কংগ্রেসের) কারও নয়!
ঘনিষ্ঠ মহলে শুক্রবার রাতেই মমতা জানিয়েছিলেন, তিনি অবিলম্বে একটি পদক্ষেপ করতে চলেছেন। যাতে সারা দেশ ‘মতামত’ দেবে। রাত পোহানোর আগেই ফেসবুকে মমতার নামে একটি ‘আনুষ্ঠানিক’ অ্যাকাউন্ট খোলা হয় (যাতে বলা হয়েছে, এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অফিশিয়াল পেজ’। সকলকে মতামত জানাতে আহ্বান জানিয়েও সতর্ক করা হয়েছে যে, ‘সভ্য’ বক্তব্য লিখতে হবে। নচেৎ তা ‘ডিলিট’ করা হবে দ্রুত)। মমতা শনিবার বলেন, “আমরা যা বলার, ফেসবুকেই বলে দিয়েছি। দেখে নিন!”
ফেসবুকে মমতার অ্যাকাউন্টে রাষ্ট্রপতি পদে কালামের জন্য সমর্থন জোগাড় করা হচ্ছে। এ দিন রাত ৮টা পর্যন্ত পাঁচ হাজারেরও বেশি লোক ‘পেজ’টি লাইক করেছেন। মমতা এবং কালামের সমর্থনে ‘কমেন্ট’ পড়েছে প্রায় দেড় হাজার।
পাশাপাশি, এক তৃণমূল সাংসদের ঘনিষ্ঠ বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কয়েকশো সমর্থক এ দিন দুপুরে কালামের সমর্থনে শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলা মিছিল করেছেন। আজ, রবিবারও দক্ষিণ কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনার দু’টি এলাকায় বেসরকারি সংগঠনের মিছিল করার কথা। সোমবার টাউন হলে দলের সাংসদ-বিধায়কদের বৈঠক আগেই ডেকে রেখেছিলেন মমতা। সেখানে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে ‘দিকনির্দেশ’ দিতে পারেন। |
তবে এত কিছুর পরেও কালাম ভোটে দাঁড়াবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, জয় নিশ্চিত না হলে তিনি লড়বেন না। এই অবস্থায় পূর্ণ সাংমাকে প্রার্থী করার চিন্তা চলছে কোনও কোনও মহলে। বস্তুত, তাঁর নাম ইতিমধ্যেই প্রস্তাব করেছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা ও ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক। তৃণমূলের অন্দরের খবর, পরিস্থিতি তেমন হলে সাংমাকে সমর্থন করার কথাও মমতা ভাবতে পারেন। আর সাংমা যদি এনডিএ-র সমর্থন পান, তা হলে প্রণব জিতছেনই এ কথা জোর দিয়ে বলা চলে না বলেই তৃণমূল শিবিরের দাবি।
তবে মমতার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আপাতত কালামের নাম নিয়েই চর্চা চলছে। সেখানে এমন প্রস্তাবও এসেছে যে, অন্না হজারেকে কালামের সমর্থনে এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করুন মুখ্যমন্ত্রী। এমনিতে অন্না মমতার বিশেষ ‘পছন্দসই’ নন। কিন্তু এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্নাকে ‘ব্যবহার’ করার কথা ভাবছে তৃণমূলের একাংশ। তবে মমতা এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি।
দলের প্রথম সারির নেতারা জানাচ্ছেন, কালামের সমর্থনে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের রাস্তায় নামানো বা বিভিন্ন কলেজে আলোচনাচক্র সংগঠিত করার কথাও ভাবা হচ্ছে। মমতা-ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, “কেন দেশের প্রেসিডেন্ট একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রেসিডেন্টের (সনিয়া গাঁধী) পছন্দের লোক হবেন? দেশের এক নম্বর নাগরিক তিনিই হবেন, যাঁর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক থাকবে না। তিনি সর্বার্থেই হবেন এক বিশিষ্ট জন। কালামের চেয়ে সেই যোগ্যতা কার বেশি আছে?”
কিন্তু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সাধারণ মানুষের ভোট দেওয়ার প্রশ্ন নেই। তা হলে কেন মমতা জনমত গঠনের পথ ধরলেন? তা-ও এমন একটি মাধ্যমে, যেখানে ব্যবহৃত কার্টুন নিয়ে তাঁর অধীনস্থ পুলিশের ‘অতি-সক্রিয়তা’য় সরকারকে এর আগে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে?
দলের এক সাংসদের বক্তব্য, “তৃণমূল যে আদৌ সোশ্যাল-মিডিয়ার বিরোধী নয়, মমতা সরকারি ভাবে ফেসবুকে আসায় সেই সত্যিটাই প্রতিষ্ঠিত হল।” অন্য এক নেতার কথায়, “ফেসবুকটা আজকাল খুব খায়! নেত্রী তাই নিজেই এটা সক্রিয় ভাবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”
তবে এ পি জে আব্দুল কালামের সমর্থনে মমতার অ্যাকাউন্ট নিয়ে সংখ্যায় কম হলেও বিরোধী প্রতিক্রিয়া জমা পড়ছে। যেমন এক জন লিখেছেন, ‘মমতা’জ সাপোর্ট ফর কালাম ইজ এ পি জে (‘পুওর জোক’-এর সংক্ষিপ্তসার)’।
ডায়ালগ কাছাকাছি হতে পারে। কিন্তু শাহরুখের সুপারহিট ছবির নামের সঙ্গে পরিস্থিতির কোনও মিল নেই ‘ওম শান্তি ওম’। |