রায় ঘোষণার পর চোখে জল এসে গিয়েছিল তাঁদেরও। বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছিল যে, সাফল্যের চূড়া থেকে এমন করে কেউ মুখ থুবড়ে পড়তে পারেন অপমানের অন্ধকারে। বহুজাতিকের ‘বোর্ড রুম’ থেকে কারও গন্তব্য হতে পারে জেলের কুঠুরি। আর হয়তো সেই কারণেই রজত গুপ্তকে দোষী সাব্যস্ত করার পর আদালত চত্ত্বর ছেড়ে বেরিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন দুই জুরি-সদস্য।
রজতবাবুকে দোষী ঠাওরাতে ১২ সদস্যের জুরির মনও যে কতখানি ভারাক্রান্ত ছিল, তা স্পষ্ট রিচার্ড লেপকৌস্কির কথাতেই। এই জুরি-সদস্য জানাচ্ছেন, “আমি চেয়েছিলাম তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যে হোক। কিন্তু আদপে তা এতটাই পোক্ত যে, রজতবাবুকে দোষী মানা ছাড়া রাস্তা খোলা ছিল না।” এই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে যে তাঁদের কষ্ট হয়েছে, তা কবুল করেছেন আর এক জুরি-সদস্য রনি সেসো-ও।
দু’জনেই মনে-প্রাণে চেয়েছিলেন, শেষ পর্যন্ত নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে পরিবারের সঙ্গে বাড়ি ফিরুন ৬৩ বছরের রজতবাবু। অক্ষত থাকুক ‘আমেরিকান ড্রিম’-এর গল্প। যেখানে শূন্য থেকে শুরু করে শুধু নিজের বুদ্ধি, চেষ্টা আর জেদে সাফল্যের শীর্ষ বিন্দুতে পৌঁছে যাচ্ছেন কেউ। সাড়ে তিন দশকের কর্পোরেট কেরিয়ারে ঠিক যেমনটা বরাবর করে এসেছেন রজত গুপ্ত। কিন্তু দিনের শেষে আবেগকে হারিয়ে দিয়ে গেছে যুক্তি। তাই পোক্ত প্রমাণকে স্বীকার করে তাঁকে দোষী মানেন জুরি-সদস্যরা। পরে জানিয়েছেন, মন না-চাইলেও, এটাই একশো ভাগ সঠিক সিদ্ধান্ত।
অজানা, অচেনা জুরি সদস্যদেরই যদি এই দশা হয়, তা হলে পরিবারের কী অবস্থা হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। শূন্য দৃষ্টি, ভাবলেশহীন চোখমুখে রজতবাবুকে রায় শুনতে দেখে হাপুস নয়নে কেঁদেছেন তাঁর চার কন্যা। আর মাথায় হাত চেপে নিথর বসে থেকেছেন স্ত্রী। চোখের সামনে দেখেছেন যে, প্রায় স্তব্ধ হয়ে বসে রায় শুনছেন রজত গুপ্ত। কিছু দিন আগে পর্যন্তও যাঁর কথা সব সময় উৎকর্ণ হয়ে শুনে এসেছে বিশ্বের প্রথম সারির সমস্ত সংস্থা।
তবে আবেগের লেশমাত্র দেখা যায়নি আমেরিকায় বসবাসকারী ভারতীয় আইনজীবী প্রীত ভারারার মধ্যে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তনীই আইনের ঘুঁটি সাজিয়েছেন রজতবাবুর বিরুদ্ধে। এবং সে বিষয়ে তিনি কতটা সফল, তা স্পষ্ট জুরির বক্তব্যেই। সদস্যদের মতে, রজতবাবু সফল এবং ধনী হলেও, আরও ‘বড় হওয়ার’ লোভ তাড়া করেছিল তাঁকে। হয়তো সেই অতিরিক্ত লোভেরই খেসারত দিলেন তিনি। |