এক দিকে সইফ-করিনা, অন্য দিকে অভি-অ্যাশ। একই শহরের দুই প্রান্তে। দুই সেলিব্রিটি পুত্রের মুখেই তাদের সেলিব্রিটি বাবার গুণগান!
হবে নাই বা কেন? দু’টি অনুষ্ঠানই ছিল, সেলিব্রিটি বাবাদেরই উদ্দেশে!
সইফরা এসেছিলেন টাইগার পটৌডির স্মৃতিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে। অভি-অ্যাশ উপস্থিত ছিলেন পার্লামেন্টে কিথ ভাজের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত নৈশভোজে অমিতাভের প্রতিনিধি হয়ে। ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে লেবার পার্টির সদস্য কিথই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রথম ভারতীয়। তাঁর সম্মানে এই বিশেষ নৈশভোজে থাকার কথা ছিল সিনিয়র বচ্চনের। প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ ছিল তাঁরই। কিন্তু অসুস্থতার কারণে তিনি আসতে না পারায় ছেলেকেই সস্ত্রীক আসতে হল।
টাইগারের স্মৃতিতে এ সময় লন্ডন জুড়ে একাধিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে এমসিসি। লর্ডস-এর লং রুমে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে, উইনচেস্টারে পটৌডির স্কুলে। সইফ-করিনা ছাড়াও হাজির ছিলেন বহু নক্ষত্রই। শর্মিলা তো ছিলেনই। সইফের দুই বোন সোহা আর সাবাও ছিলেন। ক্রিকেট দুনিয়া থেকে এসেছিলেন আসিফ ইকবাল, দিলীপ দোশি, মিকি স্টুয়ার্টরা। |
সইফ বলছিলেন ছাত্র বনাম অভিভাবকদের ম্যাচে পটৌডির সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতার কথা। লকার্স পার্ক স্কুলে পড়তেন সইফ। সেখানেই ছিল ম্যাচ। প্রথমে সইফ ব্যাটে, বল হাতে টাইগার। “বাবা বল করে এমন ভাবে ইতস্তত করার ভান করলেন, আমি দৌড়লাম রান নিতে। সঙ্গে সঙ্গে রান আউট!” আর ব্যাটিং? টাইগার এত জোরে বল পেটালেন সইফের এক সহপাঠীর মায়ের গাড়ির উইন্ডস্ত্রিন খান খান! “এ রকমই ছিলেন বাবা। ক্রিকেটের ব্যাপারে সব সময় একই রকম আগ্রাসী। সে যত ছোট ম্যাচই হোক না কেন!”
পাকিস্তানের প্রাক্তন বিদেশসচিব শাহরিয়ার খান সম্পর্কে টাইগারের আত্মীয়। ছোট থেকে দেখেছেন টাইগারকে। ১৯৫৪ সাল নাগাদ শাহরিয়ার যখন কেমব্রিজের ছাত্র, পটৌডি তখন উইনচেস্টার স্কুলে। “এগারো বছর বয়সেই পটৌডি যে ক্ষিপ্রতা দেখাত, যে ভাবে বল ধরত, কাউকে তেমন দেখিনি। গোড়ালি লক্ষ করে বল ফেললেও বাঁদরের মতো লাফিয়ে ক্যাচ নিত।” সেই পটৌডি যে দিন একটা চোখ হারালেন, সেটা নিজের জীবনের ‘সবচেয়ে দুঃখের দিন’ বলে বর্ণনা করেছেন শাহরিয়ার। “ওটা না ঘটলে পটৌডি সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান হতে পারত!’’
কিন্তু পটৌডি তো ভেঙে পড়েননি, খেলাও থামাননি। কমনওয়েলথের সাধারণ সচিব কমলেশ শর্মা বলছিলেন, এক বার পটৌডির সঙ্গে এক গাড়িতে ব্রাইটনের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। ব্রাইটনেই ঘটেছিল সেই দুর্ঘটনা। শহরে ঢোকার আগে পটৌডি খুব সাদামাঠা ভাবে বলে উঠেছিলেন, “এইখানে আমার চোখটা গিয়েছিল।” কমলেশ বলেন, ‘‘টাইগার এমন ভাবে বললেন, যেন স্রেফ একটা মানিব্যাগ খোওয়া গিয়েছে!” |
শুধু টাইগারের সাহস আর লড়াই করার ক্ষমতা নয়, তাঁর রসবোধের কথাও উঠে এল বারবার। কম কথা বলতেন, প্রায়শই একটা-দু’টোর বেশি শব্দ খরচ করতেন না। কিন্তু তার মধ্যেই ধরা থাকত ক্ষুরধার রসিকতা। সইফ বলেন, “বাবার সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওই ভাবেই কথা চলত। যার মধ্যে অনেকটা নীরবতা আর এক-শব্দের সংলাপ!” মিকি মনে করিয়ে দিলেন, মাঝেমাঝেই পটৌডি জানাতেন, ‘‘প্যারিসে আটকে গিয়েছি। ক্যাপ্টেনসিটা সামলে দেবে?” হাসছিলেন শর্মিলা। ‘আটকে যাওয়া’র কারণটা তো তিনিই!
পরিবারের কাছে এখনও টাইগারের উপস্থিতি একই রকম জীবন্ত। সইফের কথায়, “মা এখনও বলেন, তোমাদের বাবা এমন অবস্থায় এক কথায় একটা উত্তর দিতেন আর সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। আমাদের এখনও প্রতি মুহূর্তে মনে হয়, উনি আমাদের মধ্যেই আছেন!”
সইফ যেমন টাইগারের প্রতি শ্রদ্ধায় অবনত, হুবহু তেমন একটা দৃশ্যের সাক্ষী থাকল কিথের নৈশভোজ। সেখানে অভিষেক বচ্চন বাবার প্রতিনিধিত্ব করলেন। বাবার কথাই বললেন। রইল তাঁর সরস মন্তব্য, “অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি। বাবার জুতোয় পা গলানোর অনুরোধ বড় একটা আসে না তো!” মা হয়ে কেমন লাগছে প্রত্যাশিত প্রশ্নগুলো ছুটে গেল ঐশ্বর্যা রাইয়ের দিকে। বচ্চন-বধূ বললেন, আর পাঁচ জন মা যেমন সন্তান আর কাজকর্ম সামলান, তিনিও তাই-ই করছেন। তবে কি রুপোলি পর্দায় তাঁর প্রত্যাবর্তন আসন্ন? ‘‘এখনও ঠিক করিনি!” |