ঘরে বাইরে সঙ্কটে ভাবমূর্তি
রক্ষাই চ্যালেঞ্জ মনমোহনের
‘নীতিপঙ্গুত্ব’কে দায়ী করে মুখ ফেরাচ্ছে বিনিয়োগ, শিল্প-বৃদ্ধির হার তলানিতে। তার উপরে ধারাবাহিক রাজনৈতিক অস্থিরতা। দু’য়ে মিলে সমস্যা তাঁর ঘরেই। আন্তর্জাতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে একদা সঙ্কটমোচনের দাওয়াই দিতেন যে অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিংহ, তিনিই এ বার ঘোর সঙ্কটে। আর তাই, জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রীর বিমান কাল মেক্সিকোর মাটি ছোঁয়ার আগেই অস্বস্তিতে রয়েছেন তাঁর সচিবালয়ের কর্তারা। আন্তর্জাতিক মঞ্চে এ বার না প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় মনমোহনকেই!
অথচ বছর দুয়েক আগেও ছবিটা ছিল অন্য রকম। বিশ্বজনীন মন্দার বাতাবরণে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি অনিবার্য হয়ে ওঠায় ২০০৮ সাল থেকে আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে জি ২০-র মঞ্চ। ‘ত্রাহি মধুসূদন’ সেই পরিস্থিতিতে মনমোহনের মুখের দিকেই তাকিয়ে ছিল উন্নয়নশীল দেশগুলি। সেই প্রত্যাশাপূরণে জি ২০-র মঞ্চ থেকেই বার বার দাওয়াই দিতে চেয়েছেন মনমোহন। জানিয়েছেন, উন্নয়নশীল দেশগুলিতে পরিকাঠামো উন্নয়নে আরও বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। তাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি বাড়াতে হবে আর্থিক সংস্কারের গতিও। খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ-সহ সেই সংস্কার কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যেতে পা বাড়াচ্ছে নয়াদিল্লিও।
কিন্তু কোথায় কী! জি ২০-র সদস্য দেশগুলিরও আর জানতে বাকি নেই, রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় বার বার উদারনীতি থেকে বিচ্যূত হতে হচ্ছে নয়াদিল্লিকে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি, পেনশন ও বিমা বিলের মতো আর্থিক সংস্কারের প্রক্রিয়া যেমন থমকে গিয়েছে, তেমনই শতেক সমস্যার জটে আটকে গিয়েছে বিভিন্ন পরিকাঠামো প্রকল্পও। সঙ্গে দুর্নীতির প্রশ্ন তো রয়েইছে। আর সে সবের মাঝে কয়েক দিন ধরে একের পর এক দুঃসংবাদ যেন সুনামির মতো আছড়ে পড়েছে নয়াদিল্লিতে।
ফ্রাঙ্কফুর্টে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী। শনিবার। ছবি: পিটিআই
শেষ ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার নেমে এসেছে ৫.৩ শতাংশে। শিল্প-বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ০.১ শতাংশে। সর্বোপরি দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে কাঠগড়ায় তুলে ‘স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর্স’ (এস অ্যান্ড পি) জানিয়ে দিয়েছে, শিকেয় ওঠা সংস্কার ও নীতি নির্ধারণে স্থবিরতাই খাদের ধারে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ভারতীয় অর্থনীতিকে।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, আর্থিক সঙ্কটের এই পরিস্থিতিতে পিঠ বাঁচাতে সরকার যখন ইউরোপের সঙ্কট ও বিশ্বজনীন মন্দাকে দায়ী করতে চেয়েছে, তখন পাল্টা সমালোচনায় অবতীর্ণ দেশের শিল্পমহল। স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, সমস্যা বাইরে নয়, ঘরেই। বিভিন্ন শিল্পব্যক্তিত্ব মন্তব্য করেছেন, নেতৃত্বহীন অবস্থায় স্রোতে বইছে দেশ।
সঙ্কটের এমন বোঝা কাঁধে নিয়েই আজ বিকেলে ফ্রাঙ্কফুর্টে এসে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী। কাল বিকেলে পৌঁছবেন প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে মেক্সিকোর লস কাবোস শহরে। সেখানে জি ২০ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পরে ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনেরিও-তে পাড়ি দেবেন মনমোহন। সুসংহত উন্নয়ন ও সবুজ অর্থনীতি নিয়ে রিও শীর্ষ সম্মেলনেও যোগ দেবেন তিনি।
কিন্তু বিশ্বের দরবারে কী বার্তা দেবেন প্রধানমন্ত্রী? জবাবে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের এক শীর্ষ কর্তা আজ বলেন, প্রশ্নের মুখে পড়ার আশঙ্কা অমূলক নয়। তবে সঙ্কট মোকাবিলা করে ভারত যে ঘুরে দাঁড়াতে বদ্ধপরিকর, সেই বার্তা লস কাবোসের শীর্ষ সম্মেলনে দৃঢ় ভাবেই তুলে ধরতে চাইবেন প্রধানমন্ত্রী। ২০১৪ সাল পর্যন্ত মনমোহনই যে দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকছেন, গত কালই তা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন সনিয়া গাঁধী। তা ছাড়া রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগে প্রণব মুখোপাধ্যায় ইস্তফা দিলে আপাতত অর্থ মন্ত্রকও নিজের হাতে রাখতে চাইছেন মনমোহন। সেই সঙ্গে ইউপিএ-র সমীকরণের পুনর্বিন্যাসের সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় সংস্কার কর্মসূচিগুলি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এ বার সম্ভব হবে বলে আশাবাদী প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়। বিশেষ করে খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির প্রশ্নে এরই মধ্যে ইতিবাচক ইঙ্গিত আসতে শুরু করেছে লখনউ থেকে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব সম্প্রতি জানিয়েছেন, কৃষকদের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ থাকলে খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ লগ্নিতে তাঁর আপত্তি নেই।
দিল্লি ছাড়ার আগে দেওয়া বিবৃতিতে মনমোহন বিশ্বজনীন সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়টির উপরেই জোর দিয়েছেন। জানিয়েছেন, মন্দার থাবা থেকে বার করে এনে বিশ্বের অর্থনীতিকে ফের উন্নয়নের দিশা দেওয়াই এই মুহূর্তে সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এর জন্য চাই ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস। জি ২০ দেশগুলির সহমত প্রতিষ্ঠায় আগের মতোই এ বারও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে ভারত। বৈঠকের পাশাপাশি বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলির রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে মুখোমুখি বসার কর্মসূচিও রয়েছে তাঁর।
সাউথ ব্লকের কর্তাদের কথায়, ঘরোয়া মহলেও সঙ্কটের পরিস্থিতিতে ‘সাহসী’ সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী। পেট্রোলের দাম বাড়িয়ে তার ইঙ্গিত ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে সারে ভর্তুকি কমানোর জন্যও এ বার পদক্ষেপ করবে সরকার। তা ছাড়া পরিকাঠামো প্রকল্পগুলির জট ছাড়াতেও প্রধানমন্ত্রী সক্রিয় হয়েছেন। সরকারের এই প্রয়াস বিনিয়োগের অনুকূল বাতাবরণ রচনা করবে বলে আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী।
কিন্তু প্রশ্ন হল, দেশের শিল্প মহলই যখন সরকারের ওপর অনাস্থা দেখাচ্ছে, তখন নয়াদিল্লির এই প্রত্যয় প্রকাশে কত দূর আস্থা রাখবে জি ২০। না কি নয়াদিল্লির বিশ্বাসযোগ্যতাতেও খামতি দেখা দিয়েছে! আস্থা ফেরানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ প্রধানমন্ত্রীর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.