বৈরাগীদের রামকেলি মেলা শুক্রবার থেকে প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড়ে শুরু হল। মেলা চলবে এক সপ্তাহ। শুরুর দিন থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লক্ষাধিক ভক্তের ঢল নামে মেলা প্রাঙ্গণে। বৈষ্ণব সমাজে রামকেলি মেলা গুপ্ত বৃন্দাবন মেলা নামে বেশি পরিচিত। ১৫১৫ খ্রিস্টাব্দে চৈতন্যদেবের দুই শিষ্য রূপ ও সনাতন জ্যৈষ্ঠ সংক্রান্তির দিন ওই মেলার সূত্রপাত করেন। মহামারির কারণে বাংলার রাজধানী গৌড় ধ্বংস হয়ে গেলে ১৬০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দুশো বছর মেলা বন্ধ ছিল। পরে ফের চালু হয়। মেলার শুরুর দিন মাতৃপিন্ড দান করতে উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রচুর পূণ্যার্থী গৌড়েশ্বরী থানে ভিড় করেন। এক সময় কাপড়ের আড়ালে লুকিয়ে থেকে ছোট্ট ফুটোয় বের করা বৈষ্ণবীদের অনামিকা আঙ্গুল দেখে বৈষ্ণবরা বিয়ে করতে মেলায় আসতেন। কিছুদিন আগেও ওই বিয়ের প্রচলন ছিল। এখন কন্ঠী বদল বিয়ে করেন বৈষ্ণব বৈষ্ণবীরা। মালদহের ইতিহাস গবেষক কমল বসাক বলেন, “গয়া পিন্ডদানের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু রামকেলি মেলা লাগোয়া গৌড়েশ্বরী থান ভারতবর্ষের এমন একটি স্থান যেখানে একমাত্র মাতৃ পিন্ডদান করতে উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষেরা ভিড় করেন” বছরে এক দিন মাতৃ পিন্ডদান হয়। মহিলারা পিন্ড দান করে সন্ধ্যায় ফিরোজ মিনারের চারপাশে মৃতার আত্মার শান্তির কামনায় প্রদীপ জ্বালায়। মাতৃ পিন্ডদানের পাশাপাশি রামকেলির মেলা এখনও বিখ্যাত বৈষ্ণব সমাজের বিয়ের জন্য। কমলবাবু জানান, বৈষ্ণব বৈষ্ণবীরা আগে বিয়ে ঠিক করে মেলায় দুই পরিবারের লোকজনের উপস্থিতিতে কন্ঠী বদল করেন।
মালদহ শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে পিয়াসবাড়ি মোড়। সেখান থেকে মেলার শুরু। রাস্তার দু’পাশে আমবাগান ভরা বৈষ্ণব বৈষ্ণবী। অসমের কোকরাঝাড় থেকে মেলায় এসেছেন দীপিকা মোহান্ত, স্বপ্না মোহান্ত, অশোক মোহান্তরা। তাঁরা জানান, গুপ্ত বৃন্দাবন মেলায় যোগ দেওয়ার জন্য বছরভর টাকা জমা করেছেন। সাতদিন মেলা চলবে। ওই কয়েক দিন এখানে আমবাগানে থেকে তাঁরা কৃষ্ণ নাম করে কাটাতে চান। গবেষকরা জানান, রাজকর্মী রূপ, সনাতন চৈতন্যদেবের সান্নিধ্যে আসার পর রাজসভার কাজ ছেড়ে বৃন্দাবনে চলে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হুসেন শাহ তাঁদের ছাড়তে চান নি। তিনি তাঁদের যা দাবি করবে সেটাই দিতে চেয়েছিলেন। এর পরে দুই ভাই রামকেলিকে বৃন্দাবনের মতো সাজাতে উদ্যোগী হয়। সেই কারণে রামকেলির মেলা বৈষ্ণবদের কাছে গুপ্ত বৃন্দাবনের মেলা নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। মেলার মদনমোহন ডিউ মন্দিরের সেবাইত প্রফুল্লকুমার পানিগ্রাহি বলেন, “সকাল থেকে ভক্তদের ভিড় ক্রমশ বাড়ছে।” জেলা পুলিশ সুপার জয়ন্ত মন্ডল বলেন, “শান্তি বজায় রাখতে মেলায় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।” |