বোরো ধানের চাষ করে ফলন না মেলায় জমিতে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন একদল চাষি। দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি ব্লকের ধলপাড়া এলাকায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার ঘটনা। শুক্রবার ঘটনার খবর পেয়ে হিলির বিডিও এলাকা পরিদর্শনে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা তাঁর কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে ক্ষতিপূরণের দাবিতে সরব হন। একটানা দাবদাহের জেরে আবহাওয়া প্রতিকূল হওয়ায় বোরোর ফলন মার খেয়েছে বলে কৃষি দফতর দাবি করেছে। জেলার উপকৃষি অধিকর্তা লক্ষীকান্ত মান্ডি বলেন, “প্রতিকূল আবহাওয়ার পাশাপাশি কিছু চাষি পরামর্শ মতো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ধান না লাগানোয় সমস্যা হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত ২৭ জন চাষিকে সাহায্য করা হবে।” |
প্রদর্শনী ক্ষেত্র হিসাবে কৃষি দফতর ওই এলাকায় প্রায় ৪০ বিঘা জমিতে ২৭ জন চাষিকে নিয়ে উন্নত মানের বোরো ধান চাষে উদ্বুব্ধ করে চাষিদের সার, বীজ দিয়ে সহায়তাও করা হয়। প্রায় দ্বিগুণ ফলনের আশায় কৃষকেরা বৈজ্ঞানিক প্রথায় আবাদ করে এখন ফলনের ধরন দেখে আঁতকে উঠেছেন। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা প্রথমে কেপিএসদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্ষতিপূরণের দাবি তোলেন। কোনও সদুত্তর না পেয়ে ক্ষোভে তাঁরা ধান খেতে আগুন লাগিয়ে দেন। উপ কৃষি অধিকর্তার দাবি, “কয়েকজন চাষি সরকারি ওই প্রকল্পের আওতায় আসেননি। ফলন না-পেয়ে তাঁরাই জমিতে আগুন দিয়েছেন। তবে প্রত্যেককে আগামী আমন ধান চাষে সার, বীজ-সহ সবরকম সহায়তা দিয়ে ক্ষতিপূরণ মেটাতে ব্যবস্থা হয়েছে।”
চাষিদের অভিযোগ, নিজেদের মতো চাষ করে প্রতি বছর বিঘা পিছু প্রায় ৩০ মণ ধানের উৎপাদন পেতেন তাঁরা। অথচ এ বার কৃষি দফতরের পদ্ধতিতে বোরোর আবাদ করে বিঘা প্রতি মাত্র ৩-৪ মণ ধানের ফলন মিলেছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষি সন্তোষ মন্ডল, প্রকাশ সরকার, দেবব্রত মালি, রণজিত মন্ডলেরা অভিযোগ করেন, “বিঘার পর বিঘা ধান গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। শিষ বের হয়নি। কিছু জমিতে শিষের দেখা মিললেও বিঘা প্রতি ফলন খুব কম।” তাঁদের দাবি, “কৃষি সহায়ক কর্মীদের পরামর্শে ধানের পরিচর্যা করেও এখন দেখছি কোনও লাভ হয়নি।” তাদের বিঘা প্রতি চাষের খরচ হয়েছে প্রায় ৫ হাজার টাকা। ওই ৪০ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করে সব মিলিয়ে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে এলাকার চাষিরা দাবি করেছেন। ওই অঞ্চলের কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক (কেপিএস) হীরেন গোস্বামী বলেন, “নিয়মিত কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পরিচর্যার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। টানা দাবদাহের কারণে আবহাওয়া পরিবর্তন ঘটে এই বিপত্তি হয়েছে। বৃষ্টিও নেই। ফলে ধানের ফলন মার খেয়েছে।” বিডিও মাতিয়াস লেপচা বলেন, “কৃষকদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কৃষি আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |