ফর্ম বিলির কর্তৃত্ব নিয়ে এসএফআই ও ছাত্র ব্লকের সমর্থকদের সঙ্গে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সমর্থকদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল দিনহাটা কলেজ। সোমবার দুপুরে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনায় টিএমসিপির কোচবিহার জেলা সভাপতি সাবির সাহাচৌধুরী-সহ উভয়পক্ষের ৩০ জন জখম হন। তাঁদের মধ্যে সাবিরবাবু-সহ ৪ জনকে কোচবিহার জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। দু’পক্ষের আরও ৯ জন দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গোলমালের জেরে স্নাতক স্তরের ফর্ম বিলির প্রক্রিয়া ব্যাহত পড়ায় বিভিন্ন গ্রামগঞ্জ থেকে আসা ছাত্রদের অনেককেই হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। গোটা ঘটনায় তেতে উঠেছে কলেজের আবহ। জেলার পুলিশ সুপার প্রণব দাস বলেন, “ফর্ম তোলা নিয়ে দুপক্ষের গোলমালে উত্তেজনা ছড়ায়। বেশ কয়েকজন জখম হয়েছেন। কলেজে পুলিশ মোতায়েন হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।” পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দিনহাটা কলেজে এদিন সকাল থেকে স্নাতক স্তরে ভর্তির ফর্ম বিলি শুরু হয়। সাড়ে ১১ টা থেকে সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত ফর্ম বিলির কথা ছিল। দুপুর ২ টা নাগাদ ওই ফর্ম বিলির কর্তৃত্ব নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে ঢিল ছোঁড়াছুড়ি থেকে উত্তেজনা ছড়ায়। মূহুর্তের মধ্যে লাঠিসোটা নিয়ে দু’পক্ষের সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ঘটনার খবর পেয়ে তুফানগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক অর্ঘ্য রায়প্রধান দিনহাটায় ছুটে যান। সংগঠনের জখম সদস্যদের তিনিই জেলা হাসপাতালে ভর্তি করান। দলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ হাসপাতালে গিয়ে জখমদের দেখার পরে সংঘর্ষে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানান। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের উত্তরবঙ্গের আহ্বায়ক বরুণ দত্ত বলেন, “তৃণমূল সমর্থক পরিবারের ছেলেদের ফর্ম তুলতে এসএফআই ও ছাত্র ব্লকের সমর্থকরা সকাল থেকেই বাধা দিচ্ছিল। দুপুরে তাদের বেশ কয়েকজনকে মারধর করা হয়। আমাদের সংগঠনের জেলা সভাপতি কলেজের সামনে যেতেই বাম সংগঠনের মদতপুষ্ট বহিরাগত দুষ্কৃতীরা লাঠিসোটা, ধারাল অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।” তাঁর দাবি, ওই ঘটনায় তাঁদের জেলা সভাপতি-সহ ১৬ জন জখম হন। ৮ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ওই দুই বাম ছাত্র সংগঠনের তরফে অবশ্য ঘটনার জন্য টিএমসিপিকে দায়ী করা হয়েছে। দিনহাটার এসএফআই নেতা অভিনব রায় ও ফরওয়ার্ড ব্লকের ছাত্র সংগঠন ছাত্র ব্লকের ওই কলেজ ইউনিটের নেতা জয়দীপ ঘোষ একই সুরে বলেন, “দেওয়ানহাট-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে লাঠিসোটা নিয়ে মিছিল করে জেলা সভাপতির নেতৃত্বে টিএমসিপি’র শতাধিক বহিরাগত কলেজে ঢুকে ফর্ম নেওয়ার লাইনে থাকা আমাদের ছেলেদের ওপর আচমকা হামলা চালায়। তাতে ১০ জন জখম হন। ৫ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্য তৈরি ও কলেজে কর্তৃত্ব দখলের ওই চেষ্টা এলাকার মানুষ মেনে নেবেন না।” ছাত্র সংগঠনের ওই সংঘর্ষ ঘিরে চাপানউতোর ছড়িয়েছে রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যেও। তুফানগঞ্জের তৃণমূল বিধায়কের অভিযোগ, “পরিকল্পিত ভাবে বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে বামেরা ওই হামলা চালায়। ওই হামলার পেছনে ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা উদয়ন গুহ ও সিপিএম নেতা বেণুবাদল চক্রবর্তীর মদত রয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের ভূমিকাও সঠিক ছিল না।” দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহের পাল্টা অভিযোগ, “তৃণমূলের বহিরাগতরা পরিকল্পিত ভাবে গোলমাল করেছে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বেণুবাদল চক্রবর্তীও বলেন, “মদত দেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। কলেজের দখল নিতে বহিরাগত নিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ হামলা চালানোয় গোলমালের সূত্রপাত।’’ |