রাফায়েল নাদাল ক্লে কোর্টে যে সর্বকালের সেরা তা নিয়ে আর বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। আট বার খেলে সাত বার ফরাসি ওপেন জিতল। লাল সুরকির কোর্টের সর্বোত্তম টুর্নামেন্ট। রবি আর সোমবারের যে বৃষ্টিবিঘ্নিত ফাইনালে রাফা বিশ্বের এক নম্বর নোভাক জকোভিচকে ৬-৪, ৬-৩, ২-৬, ৭-৫ হারাল সেটা ছাব্বিশ বছরের বাঁ-হাতি স্প্যানিশের রোলাঁ গারোয় ৫২তম জয়। ৫৩টা খেলে। ২০০৫-এ ফরাসি ওপেনে আবির্ভাব ইস্তক আজ পর্যন্ত নাদাল হেরেছে একটা ম্যাচ! বিয়র্ন বর্গের ছ’বার ফরাসি ওপেন জেতার রেকর্ড ছিল। আমার মতে ক্লে-তে নাদালের পরেই সর্বকালের সেরার তালিকায় দু’নম্বরে থাকবে বর্গ। তিনে রড লেভার। দু’দুবার যে লোকটা এক বছরে সব ধরনের কোর্টে চারটে গ্র্যান্ড স্লামই জিতেছে, তাকে বাদ দিয়ে কোনও সারফেসেই সর্বকালের সেরার তালিকা হয় না। চার আর পাঁচ নম্বরে আমার মতে থাকবে গুলেরমো ভিলাস আর টমাস মুস্টার। ভিলাস সবচেয়ে বেশি ক্লে কোর্ট টুর্নামেন্ট জিতেছে। ৪৬টা। মুস্টারের ৪৪টা পেশাদার খেতাবের মধ্যে ৪০টাই ক্লে কোর্টে জেতা। দু’জনেই এক বার করে ফরাসি ওপেন চ্যাম্পিয়ন। |
এদের সঙ্গে তা হলে কোথায় এগিয়ে নাদাল? সাউথ ক্লাবে দু’দিনই সন্ধেয় টিভিতে খেলা দেখতে দেখতে শহরের পুরনো অনেক নামী টেনিস প্লেয়ারের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হচ্ছিল। সবাই মোটামুটি একমত, অত্যাধুনিক র্যাকেটের খানিকটা সাহায্যে নাদাল এখনকার বেশি ভারী বলে যে টপস্পিন শটগুলো মারে ক্লে কোর্টে, সেগুলোয় এত বেশি স্পিন থাকে যে রিটার্ন করা খুব কঠিন। তা ছাড়া নাদাল সুপারফিট। দুর্দান্ত অ্যাথলিট। প্রচণ্ড স্ট্যামিনা। বেসলাইন থেকেও অবিশ্বাস্য রকম অ্যাটাকিং খেলে। আবার প্রয়োজনে যখন-তখন রক্ষণাত্মক মোড-এ চলে যাওয়ার একটা অত্যাশ্চর্য দক্ষতা আছে ওর টেনিসে। বাঁ-হাতি হওয়ায় ওর ফোরহ্যান্ড টপস্পিন শটগুলো ডানহাতি প্রতিপক্ষের ব্যাকহ্যান্ডে পড়ায় রির্টান করা আরও কঠিন হয়ে যায়। রজার ফেডেরারও যে জন্য নাদালের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারে না। বিশেষত ক্লে কোর্টে তো বটেই। প্যারিসেই চার বার ফাইনালে হেরেছে। ‘হেড টু হেডে’ জকোভিচ হার্ডকোর্টে নাদালের বিরুদ্ধে ১১-৫ ম্যাচে এগিয়ে। কিন্তু ক্লে-তে পিছিয়ে ২-১২।
রবিবার যতক্ষণ বৃষ্টিতে কোর্টটা পিচ্ছিল ছিল, বল তাড়াতাড়ি আসছিল। পেস বেশি ছিল, জকোভিচ দুর্দান্ত খেলেছে। ওই সময়ই ওর ০-২ সেট আর তৃতীয় সেটেও ০-২ পিছিয়ে থাকার দুঃস্বপ্ন থেকে টানা আটটা গেম জিতে ২-১ করা আর চতুর্থ সেটে ২-০ এগিয়ে যাওয়া। ওই সময় ভারী আবহাওয়া আর ভেজা কোর্টে বল গড়িয়ে আরও ভারী হয়ে যাওয়ায় নাদালের টপস্পিন যতটা উঁচু হয়ে বিপক্ষের সামনে পড়ে সমস্যা তৈরি করে, সেটা হচ্ছিল না। জকোভিচ যে উচ্চতায় বল চায় রিটার্নের জন্য, সেটাই পাচ্ছিল। পুরো ম্যাচ রবিবার হলে জকোভিচ হয়তো জিততেও পারত। বিশেষত ম্যাচ স্থগিত থাকার সময় ও যে রকম অসাধারণ খেলছিল। কিন্তু সোমবার যেই আবার আগের মতো ক্লে কোর্ট স্বাভাবিক, বল শুকনো, নাদাল স্বমূর্তি ধরে চতুর্থ সেট বের করে নিয়ে ম্যাচটাই জিতে বেরিয়ে গেল। কিন্তু দেখে খারাপ লাগল, এমন একটা হাইভোল্টেজ গ্র্যান্ডস্লাম ফাইনালের চূড়ান্ত মীমাংসা হল কি না ডাবলফল্টে!
জকোভিচকে ফাইনালে দেখে মনে হল, রড লেভারের ৪৩ বছর পর একসঙ্গে চারটে গ্র্যান্ডস্লামই নিজের ঝুলিতে পোরার সুযোগ পেয়ে একটু বেশি উত্তেজিত। একটু বেশি যেন কোর্টে সব শটের পিছনে চেষ্টা করছে। সে জন্যই গোটা ম্যাচে তিন বার মোক্ষম সময়ে জকোভিচ তিনটে ডাবলফল্ট করায় অবাক হওয়ার কিছু নেই। নাদাল বরং অন্য একটা ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়েও নতুন স্ট্র্যাটেজি নেওয়ার সাহস দেখিয়েছে। প্রচুর ফোরহ্যান্ড ডাউন দ্য লাইন মেরেছে। যেগুলো প্রাণপণ রির্টানের চেষ্টায় জকোভিচের প্রায় পুরো ব্যাকহ্যান্ড কোর্টটাই খুলে যাচ্ছিল। আর নাদালও ইচ্ছে মতো সেখানে উইনার মেরে পয়েন্ট কুড়িয়েছে। তা সত্ত্বেও দিন পনেরো পরেই উইম্বলডনে কিন্তু জকোভিচ ফেভারিট আমার মতে। ঘাসের কোর্ট বলেই। আর উইম্বলডন মানেই ফেডেরারও সবসময় একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। নাদাল সেখানে তিন নম্বর ফেভারিট। ও হয়তো আরও দু’এক বার ফরাসি ওপেন জিতবে। কিন্তু সব ধরনের কোর্ট মিলিয়ে আরও ছ’টা গ্র্যান্ড স্লাম জিতে ফেডেরারের ১৬টা গ্র্যান্ড স্লাম জেতার বিশ্বরেকর্ড ভাঙা নাদালের পক্ষে শুধু কঠিন নয়। বেশ কঠিন। |