জলঙ্গির বুকে রাস্তা গড়ে নদী রুখেছে ডোমকল
রাস্তা রুখেছে নদী।
নদী পারাপারের ঝামেলা এড়াতে গরমে প্রায় শুকিয়ে যাওয়া নদীর উপরে মাটি ফেলে দিব্যি তৈরি হয়েছে রাস্তা। ফুট চারেক উঁচু করে ভরাট মাটির প্রায় ১৫০ মিটার প্রশস্ত সেই রাস্তায় ধুলো উড়িয়ে চলছে অবাধ যাতায়াত। আর নদী? ডোবার চেহারা নেওয়া জলঙ্গি কিছু ইতস্তত কচুরিপানা নিয়ে পড়ে রয়েছে।
নদীর দু-ধারে গ্রাম। স্থানীয় গ্রামবাসীরা তা জানেন। তাঁদের প্রচ্ছন্ন মদতেই যে ওই রাস্তা তৈরি হয়েছে তা নিয়েও সংশয় নেই। কিন্তু পঞ্চায়েত তা হতে দিল কী করে? গত কয়েকদিন ধরে প্রকাশ্যে জলঙ্গি থেকে মাটি কেটে করিমপুর-বক্সিপুর ঘাটের ওই বেআইনিভাবে রাস্তা তৈরি হলে খবর পেয়েও বাধা দিল না কেন প্রশাসন?
এই সব চেনা প্রশ্নের কোনও উত্তর মেলেনি।
তেহট্টের মহকুমাশাসক অচিন্ত্যকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘জলঙ্গির বুকে ফেরিঘাটটি সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করে মুর্শিদাবাদের ডোমকল ব্লক প্রশাসন। নদী থেকে মাটি কাটা ও নদীর বুকে এভাবে কখনোই রাস্তা তৈরি করা যায় না কাজটা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি।” জেনেও হাত গুটিয়ে বসে থাকল কেন প্রশাসন? অচিন্ত্যবাবু অবশ্য দাবি করচেন, জানার সঙ্গে সঙ্গেই ডোমকল মহকুমা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। ডোমকলের মহকুমাশাসক প্রশান্ত অধিকারী অবশ্য এ ব্যাপারে বিশেষ জানেন না। তাঁর দায়সারা উত্তর, ‘‘আমার কাছে একটি অভিযোগ এসেছে। কাজটা বেআইনি।”। কিন্তু ঠিক-বেঠিকের প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন হল, অভিযোগ পেয়েও তা খতিয়ে দেখেনি কেন ডোমকল-প্রশাসন? প্রশান্তবাবুর নির্বিকার গলায় বলেন, “আমরা তদন্ত শুরু করেছি।’’
জলঙ্গি দখল। ডোমকলে ছবি: কল্লোল প্রামাণিক।
পদ্মার শাখা নদী জলঙ্গি। একসময় বছরভরই পুষ্ট থাকত এই নদী। কিন্তু মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির উৎস মুখ তার বন্ধ হয়ে গিয়েছে বহু দিন আগে। ফলে জলঙ্গির এখন ভরসা বলতে বৃষ্টি, ভৈরবের জল। কিন্তু মুমূর্ষু নদীকে বাঁচিয়ে রাখা তো দুরের কথা, নদীর উপরে মানুষের অত্যাচার ক্রমেই বেড়ে চলেছে। নদীতে আবর্জনা ফেলা, নদী থেকে মাটি মাফিয়াদের অবাধে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া, এমনকী নদীতে জল না থাকলে কীটনাশক দিয়ে নদীর বুকে চাষআবাদ করা, এ সবই গা সওয়া হয়ে গিয়েছে জলঙ্গির।
ডোমকল থানা ফেরিঘাট পাটনি সমবায় সমিতির দুই সদস্য দীপক দাস ও দিনেশ মাঝি তেমনই গা সওয়া দুই গ্রামবাসী। স্পষ্টই বলছেন, “এটার মধ্যে দোষের কি আছে?” তাঁদের যুক্তি, প্রতি দিন ওই ঘাট দিয়ে প্রায় হাদার পনেরো লোক পারাপার করেন। নদীতে জল থাকলে তাঁরা সেখানে নৌকা বাসাতে পারতেন। কিন্তু নদীতে জল কই? এ দিকে বাঁশের সেতু গড়ে তার উপর দিয়ে যানবাহন নিয়ে যাতায়াতেরও খুব অসুবিধা হয়। দীপকের সাফাই, “সাধারণ মানুষ আমাদের কাছে এই নিয়ে বারবার অভিযোগও করতেন। তাই এ বছর প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ করে নদী থেকে মাটি কেটে এই রাস্তা করা হয়েছে। আর এই রাস্তাও তো খুব বেশিদিন থাকবে না। বারদু’য়েক ঝেঁপে বৃষ্টি নামলেই নদীর মাটি নদীতেই ধুয়ে যাবে।’’ তাঁরা জানান, জলঙ্গি ও ভৈরবের উপরে এমনই ১৯ টি ঘাট আছে। কমবেশি সবজায়গাতেই এ ভাবেই প্রতি বছর মাটি কেটে রাস্তা করা হয়। আর সে রাস্তা বর্ষায় ধুয়ে যায়।
করিমপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান কংগ্রেসের তারক সরখেল বলেন, ‘‘নদীর বুকে রাস্তা করার বিষয়টি জানতে পেরেই আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। ফেরিঘাটের লোকজনদের নিষেধও করা হয়েছিল। নিষেধ শোনেনি।” তবে এলাকাটি, ডোমকল পঞ্চায়েত সমিতির নিয়ন্ত্রণে। তাই সে ব্যাপারে তারকবাবুরা বিশেষ ,রব হতে পারেননি বলে তাঁদের দাবি। নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘নদী নিয়ে সাধারণ মানুষের ন্যুনতম সচেতনতা না থাকার জন্যই এমন ঘটনা ঘটছে। এটা আমাদের সকলেরই দুর্ভাগ্য। এক মাত্র আমাদের দেশ ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও নদীর উপরে মানুষ এমন অত্যাচার করেনা। এরকমটা চলতে থাকলে এর ফল কিন্তু আমাদেরকেই ভোগ করতে হবে। জলঙ্গির উৎসমুখ বন্ধ হয়ে গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু তার মানে এই নয় যে এই নদীর আর কোন গুরুত্ব নেই। বর্ষার সময় এই নদীগুলোই অতিরিক্ত জল বহন করে আমাদের বন্যার হাত থেকে বাঁচায়।” সে কথা কী শুনছেন দীপকবাবুরা?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.