নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
দু’দিন পরেই তাঁদের বিয়ে হওয়ার কথা। তাই হবু স্ত্রী গুলশন আরার জরুরি ডাক পেয়ে সব কাজ ফেলে শিবপুর থানার কাছে হাজির হয়েছিলেন গোলাম হোসেন কুরেশি। শুক্রবার বেশি রাতে আন্দুলের কাছে পাওয়া গিয়েছিল তাঁর গলাকাটা দেহ।
ওই খুনের ঘটনার তদন্ত সোমবার নাটকীয় মোড় নিয়েছে। হবু স্বামীর হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ এ দিন গ্রেফতার করেছে গুলশনকে। সেই সঙ্গেই গ্রেফতার করা হয়েছে গুলশনের ‘প্রেমিক’ জাহির কুরেশিকে। মেটিয়াবুরুজ এলাকায় তার একটি মাংসের দোকান আছে। গুলশন উর্দু ভাষা নিয়ে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় পাশ করেছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, ‘পথের কাঁটা’ সরাতেই গোলাম হোসেনকে খুন করার ছক
|
ধৃত গুলশন আরা।
—নিজস্ব চিত্র |
কষেছিল গুলশন-জাহির। গুলশনকে হাওড়ার মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাকে ১০ দিন পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আজ, মঙ্গলবার জাহিরকেও ওই আদালতে হাজির করানো হবে।
হাওড়ার শিবপুরের বাসিন্দা গোলাম হোসেন পেশায় মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ ছিলেন। সোমবার তাঁর এবং মেটিয়াবুরুজের রাজাবাগান এলাকার বাসিন্দা গুলশনের বিয়ের কথা ছিল। দীর্ঘদিন ধরেই দুই পরিবারের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ছিল। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরেই দু’জনের বিয়ে ঠিক করেন পরিবারের কর্তারা। গত নভেম্বরে ‘মাঙনি’-ও হয়ে যায়।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, গুলশনের বাড়ির পাশেই জাহিরের বাড়ি। জাহির নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা
করে মাংসের দোকান চালায়। বিবাহিত জাহিরের দু’টি সন্তানও রয়েছে। জাহিরের সঙ্গে গুলশনের সম্পর্কের কথাও এলাকার অনেকেই জানতেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানান, গুলশনকে একটি ন্যানো গাড়ি
উপহার দিয়েছিল জাহির। অভিযোগ, ওই গাড়িতে করেই হবু স্বামীর মৃতদেহ আন্দুলে ফেলে এসেছিল গুলশন।
তার সঙ্গে ছিল জাহির।
কেন খুন করা হল গোলাম হোসেনকে?
পুলিশের দাবি, পরিবারের পছন্দের যুবক গোলাম হোসেনকে প্রথম থেকেই বিয়ে করতে রাজি হয়নি গুলশন। তার পছন্দ ছিল পাশের বাড়ির জাহিরকে। পুলিশ জানিয়েছে, গুলশনের পরিবার জাহিরকে মেনে নেয়নি। গুলশন পুলিশকে জানিয়েছে, গোলাম হোসেনকেও বিষয়টি জানানোর চেষ্টা করেছিল সে। গোলামের সঙ্গে দেখা করতে গেলে সে জাহিরকেও সঙ্গে রাখত। গোলাম হোসেন যাতে এই বিয়ে না-করেন, সেই ব্যাপারে জাহিরও তাঁকে কয়েক বার প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। কিন্তু গোলাম হোসেন ওই বিয়ে থেকে সরে দাঁড়াননি। পুলিশের দাবি, তার পরেই গুলশন-জাহির মিলে তাঁকে খুনের ছক কষে। সেই অনুসারে শুক্রবার রাতে তারা ইস্পাত রঙের ন্যানো গাড়িতে শিবপুর থানার কাছে যায়। সেখান থেকে ফোন করে হবু স্বামীকে ডেকে গাড়িতে তুলে নেয় গুলশন। পুলিশের বক্তব্য, গোলাম হোসেনকে গাড়ির মধ্যেই খুন করে আন্দুলের কাছে মৃতদেহ ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায় তারা।
কিন্তু মৃতদেহ ঝোপে ফেলে দেওয়ার ব্যাপারটা এক ব্যক্তির
চোখে পড়ে যায়। তিনি তাঁর বাড়ির দোতলা থেকে দেখেছিলেন, ন্যানো গাড়ি থেকে একটি মৃতদেহ নামিয়ে ঝোপে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। গাড়ির ভিতর থেকে এক মহিলার কণ্ঠস্বরও তিনি শুনেছেন বলে পুলিশকে জানান। তাঁর বয়ানের উপরে ভিত্তি করেই রবিবার গুলশনকে আটক করে পুলিশ।
গুলশনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে জেনে জাহির মোবাইল ফোনে তার শ্যালক তনবির আলমকে ডেকে পাঠায়। পালানোর জন্য তাঁর কাছে সাহায্য চায় জাহির। তনবিরের সাহায্যে সে এলাকার এক আত্মীয়ের বাড়িতে গা-ঢাকা দেয়। পরে তনবিরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। পুলিশ জানায়, তাঁর কাছ থেকে হায়দরাবাদ যাওয়ার একটি ট্রেনের টিকিট পাওয়া গিয়েছে। |