রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ সিপিএমের সরলা মহেশ্বরীর স্বামী অরুণ মহেশ্বরীর অফিসে তল্লাশি চালাল সিআইডি। সোমবার সল্টলেক ডিএন ব্লকের ওই অফিস থেকে বেশ কিছু নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে সিআইডি সূত্রের খবর।
প্রতারণার অভিযোগে রবিবার ভোরে প্রাক্তন সাংসদের স্বামী অরুণ মহেশ্বরী ও তাঁর জামাই অমিতাভ কেজরিয়ালকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাতেই মামলার তদন্তভার নিয়ে সিআইডি নিজেদের হেফাজতে নেয় ধৃতদের। সোমবার ধৃতদের নিয়ে গিয়ে ওই অফিসে তল্লাশি চালানো হয়।
প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, অরুণ ও অমিতাভের মূল সংস্থা ‘ক্যানোপি গ্রুপ অফ কোম্পানি’। ওই সংস্থার অফিসের ঠিকানায় নানা নামে ২৫টিরও বেশি সংস্থা খুলে সেগুলির মাধ্যমে জমি কেনাবেচা সংক্রান্ত কাজ চলত। মাস ছয়েক আগে অভিযুক্তদের সংস্থায় তল্লাশি চালিয়েছে আয়কর দফতরও। সিআইডি-র ডিআইজি বিনীত গোয়েল এ দিন বলেন, “সব নথি খতিয়ে দেখার পর আয়কর দফতরের সঙ্গেও আলোচনা করব। প্রয়োজনে ভূমি দফতরের আধিকারিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” সিআইডি কর্তারা জানান, ধৃতদের সঙ্গে বেআইনি কাজে যুক্ত সন্দেহে আরও তিন জনকে খোঁজা হচ্ছে। তাঁরা হলেন জয়কৃষ্ণ দুগার, পীযূষ ডাগা ও জয়দীপ জৈন। এঁরা সকলেই অরুণ-অমিতাভের
সংস্থার কর্মী।
সরলা মহেশ্বরীর স্বামী অরুণ মহেশ্বরীকে গ্রেফতার প্রসঙ্গে এ দিন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেন, “এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। আইন আইনের পথে চলবে।” অরুণবাবুর বাড়িতে সিপিএমের পার্টি অফিস রয়েছে। এই ব্যাপারে বিমানবাবু বলেন, “কারও বাড়ির নীচে পার্টি অফিস থাকতেই পারে। তাতে আপত্তির কী আছে?”
অরুণবাবু ব্যবসা করলেও সিপিএমের সদস্য ছিলেন। এ ব্যাপারে বিমানবাবু বলেন, “ব্যবসা করলে আমাদের পার্টি করা যাবে না, এমন কথা দলের গঠনতন্ত্রে নেই। কেউ ব্যবসা করতেই পারেন। তাতে কোনও অসুবিধা নেই। আর এই গ্রেফতারের সঙ্গে পার্টির কোনও সম্পর্ক নেই।”
এ দিন সকাল দশটা চল্লিশ মিনিট নাগাদ অরুণ ও অমিতাভকে নিয়ে বিধাননগরের পাঁচ নম্বর সেক্টরের ডিএন ব্লকের ৩৭ নম্বর বাড়িতে হাজির হয় সিআইডির সাত জনের দল। ওই বাড়িতেই অভিযুক্তদের মূল অফিস। সিআইডি সূত্রে খবর, প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়ে একটি সিপিইউ ও বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করেছে সিআইডি।
বিকেলের দিকে অমিতাভ কেজরিওয়ালের স্ত্রী পৃথা হাজির হন সেখানে। তিনি তাঁর স্বামী ও বাবার সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও সিআইডি অফিসারেরা অনুমতি দেননি। অভিযুক্তদের নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পথে পৃথাদেবী বাবা অরুণ মহেশ্বরীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। পরে সংবাদমাধ্যমকে পৃথাদেবী বলেন, “বাবা জানান, তিনি ভাল আছেন। স্বামী শুধু হাত নেড়েছেন।” কথা বলার সময় বার বার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। গত শনিবার রাতে শঙ্কর ও প্রগতি ভট্টাচার্য নামে এক দম্পতি বিধাননগর (উত্তর) থানায় অরুণ ও অমিতাভের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন। ওই দম্পতি ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত অভিযুক্তদের অফিসে চতুর্থ শ্রেণির কাজ করতেন। তাঁদের অভিযোগ, নানা সময় তাঁদের দিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ওই কাগজের মধ্যেমে তাঁদের নামে প্যানকার্ড ও পরিচয়পত্র তৈরি করে বিভিন্ন সংস্থা খোলা হয়েছিল। শঙ্কর ও প্রগতির দাবি, ওই সংস্থাগুলির অন্যতম ডিরেক্টর পদে রাখা হয়েছিল তাঁদের। কিন্তু তাঁরা তা জানতেও পারেননি। |