পুলিশে চাকরির আশায় খর রোদ মাথায় নিয়ে অভিষেক পালের মতোই দৌড়েছিলেন সুরেশ ভুজল (২৪)। অভিষেকের মতো তাঁরও জীবনের দৌড় থেমে গেল মাঝপথে।
কলকাতা পুলিশে কনস্টেবলের চাকরি পাওয়ার জন্য গত বুধবার দুপুরে রেসকোর্স ময়দানে দৌড়ের পরীক্ষায় নেমেছিলেন কালিম্পঙের বাসিন্দা সুরেশ। প্রচণ্ড গরমে একই দৌড়ে যোগ দিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছিলেন অভিষেক। তাঁর মতো অচৈতন্য অবস্থায় এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় সুরেশকেও। অভিষেক মারা যান সেই রাতেই। আর হাসপাতালে পাঁচ দিন লড়াই চালিয়ে সোমবার ভোরে মারা গেলেন সুরেশ। এ দিন দুপুরে তাঁর পরিবারের লোকেরা মৃতদেহ নিয়ে কালিম্পঙ রওনা হয়ে যান। |
মৃতের পরিবারের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে আর্থিক ক্ষতিপূরণের দাবি তুলেছেন কালিম্পঙের বিধায়ক তথা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রচার-সচিব হরকা বাহাদুর ছেত্রী। তিনি বলেন, “সরকারকে ওই পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতেই হবে। এত গরমে এই ধরনের পরীক্ষা কেন নেওয়া হচ্ছিল, সেটাই আমাদের বোধগম্য নয়। খালি পায়ে ছেলেমেয়েগুলোকে দৌড়তে হয়েছে। এটা অমানবিক।” তাঁর বক্তব্য, এই ধরনের পরীক্ষা বছরের অন্য সময়ে নেওয়া দরকার। নইলে সুরেশের মতো আরও অনেক প্রাণ অকালে ঝরে যেতে পারে।
এ দিনই মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন অভিষেকের বাবা, বোন এবং তিন বন্ধু। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সব রকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে পরিবারের দাবি। মহাকরণ থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তাঁরা লালবাজারে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দার সঙ্গে দেখা করতে যান।
সুরেশের মৃত্যুর কারণ কী?
অভিষেকের মতো সুরেশের মৃত্যুর ক্ষেত্রেও ‘হিট স্ট্রোক’কেই কারণ বলে চিহ্নিত করেছেন এসএসকেএমের চিকিৎসকেরা। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ‘হিট স্ট্রোক’ থেকে ‘শক’ এবং তার জেরে বিভিন্ন অঙ্গ বিকল হয়েই মৃত্যু হয়েছে সুরেশের। চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে কখনওই একটানা বেশি ক্ষণ সংজ্ঞা থাকেনি সুরেশের। তাঁর ফুসফুস, কিডনি দ্রুত বিকল হয়ে যায়।
সুরেশের বাড়ি কালিম্পং থানার পাইয়ং গ্রামে। তাঁর বাবা দুর্গাপ্রসাদ ভুজল ওই গ্রামের গ্রন্থাগারের সহকারী গ্রন্থাগারিক। বাবা-মায়ের ছোট ছেলে সুরেশ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ছোটবেলা থেকে বরাবরই পুলিশ বা সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা ছিল তাঁর। ডাকাবুকো ছেলেটি যে বেঁচে নেই, তা যেন মানতে পারছেন না তাঁর গ্রামের মানুষ।
সুরেশের দেহ তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া ব্যবস্থা হচ্ছে বলে জানান দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন। তিনি বলেন, “কলকাতায় ডিসি (সাউথ)-র সঙ্গে কথা হয়েছে। সুরেশের দেহ তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। আর ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে সরকার কোনও নির্দেশ দিলে তা পালন করা হবে।”
একই দৌড়ে নেমে সুরেশের আগে যিনি প্রাণ হারিয়েছেন, সেই অভিষেকের বাবা নবকুমার পাল, বোন মধুরিমা পাল, বন্ধু চঞ্চল মুখোপাধ্যায়, নীলাদ্রিশেখর বসু এবং রাজশেখর তিওয়ারি এ দিন বেলা পৌনে ২টো নাগাদ মহাকরণে যান। চঞ্চলবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আমাদের
সব রকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আশ্বাস দিয়েছেন, পাশে থাকবেন।” মধুরিমার চাকরির ব্যাপারেও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের কথা হয়েছে বলে পরিবারের লোকেরা জানান। রবিবার তাঁরা কালীঘাটে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তখনই মমতা তাঁদের মহাকরণে যেতে বলেন। |