|
|
|
|
উজ্জ্বল উচ্চ মাধ্যমিকে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • চাঁচল |
একজনের বাবা দিনমজুর। অন্যজনের বাবা ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। বাবাদের রোজগারে সংসার চলে না। তাই দুজনকেই মাঝেমধ্যেই স্কুল কামাই করে দিনমজুরি করতে হত। দুবেলা পেটভরে খাবারও জুটত না অধিকাংশ দিনই। ফলে সামর্থ্য ছিল না টিউশন পড়ার। অভাবের সঙ্গে নিত্য লড়াই চালিয়েও উচ্চ মাধ্যমিকে ৭৮ শতাংশ ও ৭৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে মালদহের চাঁচলের দরিয়াপুর ইমামপুর বরম্বল হাই স্কুলের দুই ছাত্র মামুনুর রহমান ও মিঠু দাস। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মামুনুর উচ্চ মাধ্যমিকে পেয়েছেন ৩৯০। আর কলা বিভাগে ছাত্র মিঠু পেয়েছেন ৩৬৯। দিনমজুরি করেও নিজের চেষ্টায় ও উদ্যোগে ওই দুই ছাত্রের ফলাফলে খুশি তাঁদের গ্রাম-সহ স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। মামুনুরের বিষয় ভিত্তিক প্রাপ্ত নম্বর, বাংলা-৭৭, ইংরেজি-৬৮, রসায়ন-৮৬, পদার্থবিদ্যা-৮৫, অঙ্ক-৭৫। আর মিঠুর বিষয় ভিত্তিক নম্বর হল, বাংলা-৮১, ইংরেজি-৭৫, ভূগোল-৭৫, সংস্কৃত-৭১, দর্শন-৬৭। কেবল উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল করাই নয়, প্রত্যন্ত গ্রামে নিজের চেষ্টায় পড়াশুনা করে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং-এও সুযোগ পেয়েছে মামুনুর। মিঠু ভূগোল নিয়ে পড়াশুনা করতে চায়। দুজনের কাছেই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আর্থিক সমস্যা। পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারবে কি না তা নিয়েই সংশয়ে ভুগছে দুই ছাত্র ও তাদের পরিবার।স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ নাদেরুজ্জামান বলেন, “দুজনেই হতদরিদ্র পরিবারের। স্কুলের গ্রন্থাগার থেকে বই নিয়ে পড়াশুনা চালিয়েও যে ফল করেছে তাতে আমরা গর্বিত। কেউ যদি ওদের সহায়তা করেন তাহলে ওদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন স্বার্থক হবে। মামুনুরের বাবা মঙ্গলু শেখ নিজের গ্রাম ইমামপুরেই দিনমজুরি করেন। দুই ছেলে সহ ৪ জনের সংসার চালাতেই হিমসিম খান তিনি। ছেলের পড়াশুনার জন্য বাড়তি কোনও খরচ করার সামর্থ্য তার নেই। এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে মামুনুর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বেন তা ভেবেই আকুল তিনি। মামুনুর বলেন, “এত দিন বাড়িতে থেকে পড়তাম। মাঠেঘাটে কাজ করে উপার্জন করার সুযোগ ছিল। এ বার কী হবে জানি না।” ৩ ছেলে-মেয়ে সহ ৫ জনের সংসার চালাতে মিঠুর বাবা শিবচন্দ্র দাস দিল্লিতে শ্রমিকের কাজ করেন। একই অবস্থা মিঠু দাসেরও। তিনি বলেন, “ভূগোল নিয়ে পড়াশুনো করে শিক্ষক হতে চাই। কিন্তু কী ভাবে তা সম্ভব হবে জানি না।” |
|
|
|
|
|