দালালদের খপ্পরে পড়ে বিপাকে পড়ছেন কালনা মহকুমা হাসপাতালে আসা বহু রোগী ও তাঁদের পরিবার। মহকুমাশাসক তথা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে এমনই অভিযোগ করলেন কালনার উপ-পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগ। মহকুমাশাসক জানান, অভিযোগের তদন্ত হবে।
সম্প্রতি পাঠানো ওই চিঠিতে দেবপ্রসাদবাবু অভিযোগ করেন, কালনা হাসপাতালে বেশ কিছুদিন ধরে দালালদের উৎপাত চরমে উঠেছে। কয়েক জন চিকিৎসক তাদের মদত দিচ্ছেন বলেও তাঁর অভিযোগ। দেবপ্রসাদবাবুর দাবি, হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা করাতে আসা রোগী ও তাঁর পরিবারের লোকেদেরই সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ডাক্তার দেখিয়ে বেরোনো মাত্রই প্রায় হাত থেকে প্রেসক্রিপশন ছিনিয়ে নিচ্ছেন দালালেরা। তার পরে পছন্দের ওষুধের দোকানে বা পরীক্ষাগারে নিয়ে যাচ্ছেন। সেই সুযোগে ওষুধ বিক্রেতারাও নিম্নমানের ওষুধ দিয়ে রোগীদের প্রতারিত করছেন বলে অভিযোগ পুরপ্রধানের।
মহকুমাশাসককে ওই চিঠির সঙ্গে দেবপ্রসাদবাবু একটি আবেদনপত্রও দিয়েছেন। সেটিতে বামনাপাড়া পঞ্চায়েতের বাসিন্দা ক্ষুদিরাম টুডু জানিয়েছেন, তাঁর স্ত্রী ৪ মে প্রসব বেদনা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। সে দিনই অস্ত্রোপচার করে সন্তানের জন্ম দেন তিনি। ১০ মে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর পরে ক্রমশ অসুস্থ হতে থাকেন ক্ষুদিরামবাবুর স্ত্রী। চিকিৎসক জানান, প্রেসক্রিপশনে অনুযায়ী ওযুধ খেলেই এক মাসে সুস্থ হয়ে যাবেন তিনি। কিন্তু তার পরেও অসুস্থতা বাড়ায় চিকিৎসক দোকান থেকে কেনা ওষুধ দেখে জানান, তাঁর লেখা ওষুধ না দিয়ে অন্য ওষুধ দেওয়ায় এই সমস্যা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দেবপ্রসাদবাবু বলেন, “দালালচক্রের নমুনা হিসেবে মহকুমাশাসককে ওই আবেদনপত্র দিয়েছি।” ওই চিঠির প্রতিলিপি তিনি পাঠিয়েছেন মহকুমা হাসপাতালের সুপার অভিরূপ মণ্ডল এবং বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের কালনা শাখার সম্পাদক ও সভাপতিকে। ছুটিতে থাকায় অভিরূপবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের কালনা শাখার সম্পাদক আনন্দ দত্ত বলেন, “পুরপ্রধানের চিঠির ভিত্তিতে সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। সেখানে ক্ষুদিরাম টুডু যে দোকান থেকে তাঁর স্ত্রীর জন্য ওষুধ কিনেছিলেন সেই ওষুধ বিক্রেতার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছে। আপাতত ১৭ জুন পর্যন্ত দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ওই বিক্রেতাকে।” তিনি জানান, ১৭ জুন সংগঠনের দ্বিবার্ষিক সভায় এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মহকুমাশাসক সুমিতা বাগচি বলেন, “তদন্তের জন্য হাসপাতালের এসিএমওএইচ-কে জানানো হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলেই ব্যবস্থা করা হবে।”
|