বাম জমানার ‘জুলুম’ নয়, বর্ধিত দরেই গোদায় জমি স্বাস্থ্যনগরীর
বাম আমলে ‘রাজনৈতিক চাপের’ মুখেও যাঁরা বর্ধমানে স্বাস্থ্যনগরী গড়ার জমি দিতে চাননি, বাড়তি দাম পেয়ে সেই ‘অনিচ্ছুক’ কৃষকেরাই ইতিমধ্যে জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। ফলে, এই আর্থিক বছরের মধ্যে কাজ শুরু হয়ে যাবে বলেও আশা করছে নির্মাণকারী সংস্থা।
যে সিঙ্গুর থেকে রাজ্যে সাম্প্রতিক জমি আন্দোলনের সূচনা, সেখানকার ‘অনিচ্ছুক’ চাষিদের দুরবস্থা ইতিমধ্যেই সর্বজনবিদিত। এঁদের বড় অংশই বাম সরকারের ‘জোর করে’ জমি নেওয়ার নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। বর্ধমানের উপকণ্ঠে গোদায় স্বাস্থ্যনগরী গড়ার ক্ষেত্রেও বহু চাষির আপত্তির কারণ ছিল ‘কম দামে’ জমি অধিগ্রহণ করতে চেয়ে সরকারের ‘জোরজুলুম’। প্রাক্তন স্থানীয় বিধায়ক তথা শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেনের নেতৃত্বাধীন বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদ (বিডিএ) ৫৭ একর চাষজমি অধিগ্রহণ করে পাঁচিলও তুলে দেয়। কিন্তু ‘ন্যায্য দর’ না পেয়ে বেশ কিছু চাষি চেক নেননি।
গোদায় হাসপাতালের নির্মীয়মাণ ভবন। ছবি: উদিত সিংহ
সরকার বদলের পরে বিডিএ -র রাশ সিপিএমের থেকে তৃণমূলের হাতে গিয়েছে। নিরুপমবাবুর জায়গায় সংস্থার চেয়ারম্যান হয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক তথা কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। বিডিএ, নির্মাণকারী সংস্থা, জমিমালিক ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে বৈঠকে স্থির হয়েছে, শতক পিছু সাড়ে ১১ হাজারের বদলে ৭৫ হাজার টাকা করে দর দেওয়া হবে। এর পরেই ছবিটা বদলে গিয়েছে। রবিরঞ্জনবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম, যাতে চাষিদের ক্ষোভ না থাকে। নির্মাণকারী সংস্থা দাবি অনেকটাই মেনে নিয়েছে।” সংস্থার তরফে অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, “জমির দাম নিয়ে রফা হয়ে গিয়েছে। দীর্ঘদিন বাদে ফের কাজ শুরু করেছি।”
গোদা মৌজায় যে ৫৭ একর জমি অধিগৃহীত হয়েছে, তার ২৩ একরের ৮৪ জন মালিক বাম সরকারের ধার্য করা শতক পিছু ১১,৫০৬ টাকা নিতে চাননি। প্রতি শতকে এক লক্ষ টাকা দাবি করেন তাঁরা। নিরুপমবাবুরা রাজি হননি। এর পরে ২০০৯ সালে বর্ধমান পুরসভা নির্বাচনে স্থানীয় ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএম ৫৬১ ভোটে হারে। লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের নেতৃত্বে গড়া ‘পশ্চিম বর্ধমান কৃষি কল্যাণ সমিতি’ আন্দোলনে নামে। কাজ বন্ধ হয়ে যায়। লোকসভা ভোটে ওই ওয়ার্ডে সিপিএম প্রার্থী ১,৫২৭ ভোটে পিছিয়ে পড়েন। গত বিধানসভা নির্বাচনে ব্যবধান বেড়ে হয় ২,০১২।
স্থানীয় কৃষি কল্যাণ সমিতির কার্যকরী সভাপতি খন্দকার ফজলুর রহমানের ব্যাখ্যা, “সিপিএম আমলে জোর করে জমি অধিগ্রহণ হয়েছিল। বিডিএ-র সঙ্গে নির্মাণকারী সংস্থার চুক্তিও প্রকাশ করা হয়নি। এতেই এলাকার মানুষ চটে গিয়ে নির্বাচনে ক্ষোভ উগরে দেন।” অনিচ্ছুক চাষিরা কার্যত একই কথা জানিয়েছেন। এঁদের এক জন খন্দকার এনামুল কাদের বলেন, “আমার সাড়ে ২৭ কাঠা জমি গিয়েছে। কিন্তু ‘জমি দিতে চাই’ বলে জোর করে সই করানোর প্রতিবাদে চেক নিইনি।”
প্রস্তাবিত স্বাস্থ্যনগরীর মানচিত্র।
বাম আমলে বিডিএ-র অন্যতম সদস্য, বর্ধমানের পুরপ্রধান আইনুল হক অবশ্য জোরজুলুমের কথা স্বীকার করেননি। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্যও তিনি। তাঁর দাবি, “জমি অধিগ্রহণ থেকে শিলান্যাস পর্যন্ত কোনও বাধা আসেনি। ৬০ শতাংশের বেশি জমিমালিক চেক নিয়ে নেন। কিন্তু এর পরেই সিঙ্গুরের দেখাদেখি কিছু অনিচ্ছুক চাষি তৈরি হয়। তৃণমূল তাদের সঙ্গে নিয়ে প্রকল্পে বাধা দিতে থাকে। নির্মাণকারী সংস্থার টাকার টান থাকাতেও কাজ শ্লথ হয়ে যায়।”
বিডিএ-র নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার পরেই নতুন করে আপসরফার চেষ্টা শুরু করে তৃণমূল। গত বছর ২৭ সেপ্টেম্বর গোদার এক বিয়েবাড়িতে নির্মাণকারী সংস্থা এবং ‘অনিচ্ছুক’ চাষিদের নিয়ে বৈঠকে বসেন বিডিএ কর্তৃপক্ষ। স্থির হয়, শতক পিছু ৭৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে। রবিরঞ্জনবাবু বলেন, “চাষিরা যাতে উপযুক্ত প্রাপ্য পান, সে দিকেই নজর দেওয়া হয়েছে।” স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর খন্দকার মহম্মদ সাহিদুল্লাহ ওরফে ফকু মাস্টার বলেন, “চাষিদের হয়ে আন্দোলনে নেমেই আমরা এই এলাকায় জিতেছি। তাঁদের স্বার্থ দেখতেই হবে।”
একদা ‘অনিচ্ছুক’ চাষি খন্দকার আবুল ফজল বলেন, “আমার ৮৫ শতক জমি রয়েছে। আগের দামের চেয়ে অনেক বেশি পাচ্ছি বলেই জমি দিতে রাজি হয়েছি।” এমনকী স্থানীয় সিপিএম নেতা তথা ‘অনিচ্ছুক’ চাষি আফজালুল কাদেরও বলেন, “এক লক্ষ টাকা দর চেয়ে ৭৫ হাজার টাকা করে পাচ্ছি। স্থানীয় বাসিন্দারা যাতে স্বাস্থ্যনগরীতে কাজ পান, তার জন্য আমি তৃণমূলের সঙ্গেই রয়েছি।” নির্মাণকারী সংস্থা সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে যাঁরা চেক নিয়ে নিয়েছেন, তাঁদের নিয়েও চিন্তাভাবনা চলছে। সংস্থার প্রশাসনিক অধিকর্তা অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আগামী বছর মার্চের মধ্যে স্বাস্থ্যনগরীর একটি পর্যায়ের কাজ হয়ে যাবে বলেই আমাদের আশা।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.