ফের বন্ধ হয়ে গেল প্রস্তাবিত কাওয়াখালি উপনগরীর কাজ। বৃহস্পতিবার বেলা ১০ টা নাগাদ প্রকল্পের জমিতে শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পাঁচিল দেওয়ার কাজ শুরু করতে গেলে জমিহারাদের একাংশ বাধা দেন। পুলিশ গিয়ে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। বাধা পেয়ে ফিরে যান এসজেডিএ’র ঠিকাদাররা। পুনর্বাসন প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা মেলেনি অভিযোগ তুলে এ দিন পোড়াঝাড় এলাকার জমিহারাদের একাংশ কাজ বন্ধ করে দেন। জমিহারাদের অপর অংশ তথা কাওয়াখালি পোড়াঝাড় ভূমিরক্ষা কমিটির সদস্যরা অবশ্য কাজ করতে দেওয়ার পক্ষে ছিলেন। তা নিয়ে এ দিন বাধাদানকারীদের সঙ্গে তাঁদের বচসাও হয়। তবে শেষ পর্যন্ত ভূমিরক্ষা কমিটির সদস্যরা পিছু হটেন। এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “আগামী ২৩ জুন ওই জমিহারাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে তাদের কথা শুনব বলে ঠিক হয়েছে। তারা সাংবাদিক বৈঠক করেও বলছেন ৭ দিন দেখবেন। তার পরে হঠাৎ আজ তারা কাজে বাধা দিলেন কেন বুঝতে পারছি না। আশা করি আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটিয়ে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।” বাধাদানকারীদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ কৃষি জমি জীবন ও জীবিকা রক্ষা কমিটির লোকজনও রয়েছেন। তাদের অভিযোগ, অনিচ্ছুকদের জমি ফেরৎ, জমি দিতে ইচ্ছুকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েও ভাঁওতা দেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিপূরণ না-দিয়েই পাঁচিল দিতে তাঁরা দেবেন না। |
প্রয়োজনে বড় ধরনের আন্দোলন করবেন। শিলিগুড়ির উপকন্ঠে কাওয়াখালিতে প্রায় ৩০২ একর জায়গায় এসজেডিএ’র উদ্যোগে প্রস্তাবিত উপনগরী গড়ে তোলার কথা। তার মধ্যে পোড়াঝাড় এলাকায় রয়েছে ২০০ একরের কিছু বেশি জমি। যা প্রশাসনিক ভাবে জলপাইগুড়ি জেলার অধীন। সেখানে ব্রজবাসী মিনি মার্কেটের জন্য জায়গা চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে আগেই। তার পাশে পোড়াঝাড়ের অংশ থেকে অধিগ্রহণ করা জমিতে পাঁচিল দেওয়ার কাজ এ দিন শুরু করতে যায় এসজেডিএ’র ঠিকাদারদের লোকেরা। তাতে ক্ষুব্ধ হন ক্ষতিপূরণ না পাওয়া জমিহারাদের একাংশ। সম্প্রতি একই অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গ কৃষি জমি জীবন ও জীবিকা রক্ষা কমিটির ব্যানারে তাদের অনেকে রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করেন। এর পরেই আলোচনায় বসার কথা জানায় এসজেডিএ কর্তৃপক্ষ। জমিহারাদের পক্ষে কুড়ানুদেব সিংহ বলেন, “আলোচনার বসার কথা জানানো হয়েছিল। ক্ষতিপূরণ দিয়ে কাজ শুরু করলে আমরা আপত্তি করব না বলে জানিয়েছিলেন। অথচ এসজেডিএ তা শুনছে না। এ দিন তারা কাজ শুরু করতে গেলে আমাদের লোকজনেরা বাধা দিয়েছেন। ক্ষতিরপূরণ না দিয়ে পাঁচিলের কাজ শুরু করতে গেলে আমরা বাধা দেব।” কুড়ানুবাবুদের ক্ষোভ, এসজেডিএ’র সদস্য তথা তৃণমূল নেত্রী জ্যোৎস্না অগ্রবালরা এক সময় জমিহারাদের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করেছেন। রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পর জমিহারাদের সমস্যা মিটবে বলেই তারা আশা করেছিলেন। অথচ ক্ষতিপূরণ না দিয়ে জমিহারাদের ভাঁওতা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। এসজেডিএ’র সদস্য জ্যোৎস্নাদেবী বলেন, “ভাঁওতা দেওয়ার ব্যাপার নেই। অনিচ্ছুকদের জমি ফেরত ও বাকিদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়াই লক্ষ্য। জমি ফেরতের বিষয়টি মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাকি জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়াও চলছে।” তাঁর দাবি, পোড়াঝাড় অংশে অনেকেই ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। কিছু জমির মালিক বাকি থাকলেও তাদের বিষয়টি দেখা হচ্ছে। এ দিন পাঁচিল দেওয়ার কাজ করতে বাধা দেন কৃষ্ণ সরকার, কার্তিক মণ্ডল, সমরনাথ রায়দের মতো জমিহারারা। কার্তিকবাবু বলেন, “পাট্টার জমি আমার স্ত্রীর নামে কিনেছি। তার নথিও রয়েছে। এ ধরনের নথি দেখিয়ে অনেকে প্যাকেজ পেয়েছেন। আমাদের কিছু দেওয়া হয়নি।” কৃষ্ণবাবুদের ১ একর পাট্টার জমি রয়েছে পোড়াঝাড়ের অংশ। সমরবাবুদের ৩ বিঘা খতিয়ানভুক্ত জমি রয়েছে। অথচ তাঁদের ক্ষতিপূরণ না দিয়ে ওই অংশের জমিতে পাঁচিল দেওয়ার কাজ হলে মেনে নেবেন না বলে জানান। তাদের দাবি, তাঁদের মতো ক্ষতিপূরণ পাননি এমন প্রায় ২৫০ জন রয়েছেন। |