পায়ের তলার মাটি নড়বড়ে ছিল। পেট চালাতে তাই মাটিও কাটতে হয়েছে। কিন্তু দৈন্যের সংসার আর ভুখা পেট দমিয়ে রাখতে পারেনি পাত্রসায়রের পাণ্ডুয়া গ্রামের অভিজিৎ পালকে। এ বছর স্থানীয় কুশদ্বীপ মাখানলাল বিদ্যামন্দির থেকে তিনি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় কলাবিভাগে পড়াশোনা করে ৪০৮ নম্বর পেয়েছেন। ঝড়ে ভেঙে পড়া ইন্দিরা আবাসের ঘরে এই খুশির খবর আসার সঙ্গেই এসেছে দুশ্চিন্তাও।
অভিজিতের বাবা তারাপদ পাল দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। সংসার চালাতে তাই মা ভাগ্যবতীদেবীর সঙ্গে অভিজিৎকে দিনমজুরের কাজ করতে হয়। দু’জনে ১০০ দিনের প্রকল্পে মাটিও কেটেছেন। এ ভাবেই তিনি পড়াশোনা চালিয়ে এসেছেন। প্রিয় বিষয় ইংরাজি-সহ ৩টি বিষয়ে ‘লেটার মাকর্স’ পাওয়া এই কৃতীর স্বপ্ন ইংরেজি নিয়ে উচ্চশিক্ষা করবেন। তাঁর কথায়, “স্কুলের শিক্ষক ও স্থানীয় কয়েকজনের সাহায্য পেয়ে এই ফল করতে পেরেছি।” প্রধান শিক্ষক শ্যামল দাস বলেন, “অভিজিৎ খুব পরিশ্রমী। ও আমাদের স্কুলের গর্ব।” |
ভাগ্যবতীদেবী অবশ্য বুঝে উঠতে পারছেন না ছেলেকে আর পড়াবেন কী করে? তিনি বললেন, “ছোট ছেলে পড়ছে। স্বামী অসুস্থ। আমি আর অভিজিৎ কাজ করে সংসার চালাচ্ছি। এই অবস্থায় জানি না ওকে আর পড়াব কী করে?” লড়াকু অভিজিৎ অবশ্য পড়তে চায়। তাঁর কথায়, “শিক্ষক হয়ে গ্রামের মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই।”
হুড়ার বিসপুরিয়া বস্তির সৌমিত্র মণ্ডলকেও দারিদ্রের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে। বাবা চায়ের দোকানের কর্মী। মা আশা প্রকল্পে কাজ করেন। দু’জনের আয়ে কোনওরকমে সংসার চলে। সৌমিত্রকে ন’পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে নিখরচায় উচ্চ মাধ্যমিকে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক তথা এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক সুভাষ মাহাতো। সেই সৌমিত্র বিজ্ঞান নিয়ে এ বার ৩৮৮ নম্বর পেয়েছেন। তাঁর বাবা নির্মল মণ্ডল বলেন, “এতদিন ন’পাড়া স্কুল কর্তৃপক্ষ ওকে সাহায্য করেছিলেন বলে সমস্যা হয়নি। টাকা ধার করে ছেলে পুরুলিয়ার জেকে কলেজে ভর্তির ফর্ম তুলে এনেছে। কিন্তু কী ভাবে পড়াব জানি না।”
|
প্রতিবেদক: দেবব্রত দাস ও প্রশান্ত পাল |