ভোট আসে, ভোট যায়- কিন্তু সমস্যা মেটে না। বাঁকুড়া বিধানসভা কেন্দ্রের আসন্ন উপনির্বাচন উপলক্ষে গ্রামে গ্রামে রাজনৈতিক দলের প্রচারের পরে এমনই অভিযোগ এলাকাবাসীর। তাঁদের ক্ষোভ, ভোটের আগে প্রচারে এসে প্রার্থীরা অনেক কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। কিন্তু তাঁদের আঁধার আর কাটে না।
বাঁকুড়া- ১ ব্লকের পাতাকোলা গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ জানান, কোনও রাজনৈতিক দলের উপর উন্নয়নের জন্য আর ভরসা করেন না। কারণ গত কয়েক বছর ধরে তাঁরা পানীয় জল, রাস্তা-প্রভৃতি সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন দলের নেতাদের কাছে আর্জি জানিয়েছেন। কিন্তু কাজ হয়নি বলে ক্ষোভ। এ গ্রামে প্রায় ৩০০টি পরিবারের বাস। সমস্যায় জেরবার গ্রামবাসীরা জানান, গ্রামে বেশ কয়েকটি নলকূপ রয়েছে। কিন্তু জল পড়ে মাত্র দু’টিতে। তার মধ্যে আবার একটি নলকূপের জলে শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান রয়েছে বলে জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের লোকজন এসে জানিয়ে গিয়েছিলেন। ফলে ৩০০টি পরিবারের ভরসা সবেধন নীলমনি ওই একটি টিউবওয়েল। এউ ভরা গ্রীষ্মে তাই পানীয় জল নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে। |
শুধু কী খাওয়ার জল নিয়ে সমস্যা? স্নানের জলেরও অভাব রয়েছে। গ্রামের পাশ দিয়েই বয়ে গিয়েছে দারকেশ্বর নদ। কিন্তু নদের জল ধরে রাখার ব্যবস্থা না হওয়ায় বর্ষা শেষ হলেই দ্বারকেশ্বর প্রায় শুকিয়ে যায়। গ্রামবাসী সুমন্ত বাগ, দিলীপ কুম্ভকাররা বলেন, “জল সঙ্কটে ভুগছে গোটা গ্রাম। একটি মাত্র পুকুরের উপরেই গ্রামের সমস্ত মানুষ নির্ভরশীল। সংস্কার না হওয়ায় বর্তমানে সেটিও মৃতপ্রায়। আমরা স্নানের জল পাই না।” তাঁদের ক্ষোভ, পুকুরটি সংস্কার করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে এলেও কিছুদিন আগে পঞ্চায়েত পুকুরের ঘাট বাঁধিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করেনি। তাঁদের দাবি, গ্রামবাসীরা নিজেরাই শেষে পুকুরটি সংস্কার করেছেন।
অভিযোগ আরও রয়েছে। গ্রামের মোরামের রাস্তাটি দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কার করা হয়নি। বাসিন্দারা জানান, বহু চেষ্টার পরে কয়েক বছর আগে রাস্তা মেরামতির জন্য পঞ্চায়েত বোল্ডার ফেলেছিল। কিন্তু কাজ শুরু হয়নি আজও। গ্রামে নিকাশি ব্যবস্থা না থাকা নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে। বাসিন্দারা জানান, বর্ষায় ওই রাস্তা জল কাদায় চলাচলের উপযুক্ত থাকে না। ভোটের আগে রাজনৈতিক দলগুলির নেতা নেত্রীরা এ সব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কিছুই করেননি বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। ওই গ্রামের বাসিন্দা প্রদীপ বাগ, গোপাল বাউরিদের ক্ষোভ, “সমস্যাগুলি নিয়ে বারবার দাবি জানালেও সংস্কার করার কোনও উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন। রাজনৈতিক দলগুলির ভূমিকাও একই।” |
শুধু পাতাকোলাই নয়, বাঁকুড়া বিধানসভা কেন্দ্রের অর্ন্তগত মানকানালি গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি গ্রামেও জলসঙ্কট চলছে। স্থানীয় ভাগাবাঁধ এলাকায় গিয়েও একই অভিযোগ শোনা গিয়েছে। গ্রামবাসীরা জানান, শতাধিক পরিবারের বাস এখানে। অথচ মাত্র দু’টি নলকূপ রয়েছে। একটি রয়েছে গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে। অন্য নলকূপ থেকে আবার কম জল পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা সুদেব রানা, গৌরাঙ্গ পাল বলেন, “খুব জল কষ্টে রয়েছি। ভোট এলেই নেতারা আশ্বাস দিয়ে যান। কিন্তু ভোট পার হলে তাঁরা সব ভুলে যান।” একই সমস্যা রয়েছে পুরন্দরপুর পঞ্চায়েতের কয়েকটি গ্রামেও। তিলাবেদিয়া গ্রামে ৫টি নলকূপ রয়েছে। অথচ ঠিকমতো জল ওঠেনা বলে অভিযোগ। গ্রামবাসী মহাদেব বাউড়ি, রেখা বাউড়িরা বলেন, “নলকূপগুলি প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে। পঞ্চায়েতকে জানিয়েও ফল হয়নি। ভোটের প্রচারে প্রার্থীরা এসেছিলেন, তাঁদেরও জানিয়েছি।” ভুক্তভোগী আঁচুড়ি পঞ্চায়েতের উপর আঁচুড়ি ও নামো আঁচুড়ির বাসিন্দারাও। তাঁদেরও দাবি, “জলের সমস্যা চলছে। নলকূপ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছি।” তৃণমূল ও সিপিএমের দুই প্রার্থীই এই গ্রামে উপনির্বাচনের প্রচারে এসেছিলেন। গ্রামবাসীদের কাছ থেকে তাঁরা এই সব সমস্যার কথা শুনেছেন। এ নিয়ে তৃণমূল প্রার্থী মিনতি মিশ্র বলেন, “পাতাকলা গ্রামের বাসিন্দাদের সমস্যার কথা আমি শুনেছি। ৩৪ বছরে বাম আমলে কোনও উন্নয়নই হয়নি এই গ্রামে। সমস্যাগুলির দ্রুত সমাধান করব।” সিপিএম প্রার্থী নীলাঞ্জন দাসগুপ্ত অবশ্য বাম আমলে কেন এই গ্রামের সমস্যা মেটেনি, তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “গত এক বছরে প্রতিশ্রুতি দেওয়া ছাড়া তৃণমূলের সরকার আর কোনও কাজ করেনি। আমি ভোটে জিতলে সমস্যাগুলি মেটাব।” |
পাতাকোলা গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র। |