গরমের জন্য রাজ্য সরকার স্কুলগুলিতে ১৭ জুন পর্যন্ত ক্লাস বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে পুরুলিয়া ২ ব্লকের ছড়রা উচ্চ বিদ্যালয়ে তিন দিন ধরে পঠনপাঠন চলায় ক্ষোভে ফেটে পড়লেন অভিভাবকেরা। বৃহস্পতিবার অভিভাবকদের একাংশ দল বেঁধে স্কুলে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানোর পরে তিনি স্কুল বন্ধের নির্দেশ দেন। অভিভাবক ও বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সিদ্ধান্তের জন্যই এই তীব্র গরমের মধ্যে ছেলেমেয়েদের স্কুলে আসতে হচ্ছিল। তাঁদের না জানিয়েই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স্কুল চালু করেছেন বলে দাবি পরিচালন সমিতির কর্তাদেরও। ঘটনার কথা জানতে পেরে পুরুলিয়া জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) রাধারানি মুখোপাধ্যায় বলেন, “সরকারি নির্দেশে জেলার সব স্কুলেই এখন ছুটি চলছে। তার পরেও ওই স্কুল খোলার
কথা জানতে পেরে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি স্কুল বন্ধ
করে দিয়েছেন।” |
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৪ মে থেকে ৪ জুন (সোমবার) পর্যন্ত ওই স্কুলে গরমের ছুটি ছিল। মঙ্গলবার থেকে (সে সময় পুরুলিয়া জেলায় তাপপ্রবাহ চলছে) সকালে স্কুল চালু হয়। আর সে দিনই গরমের ছুটি ১৭ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর কথা ঘোষণা হয়। স্কুল দফতরের ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল, স্কুল নির্দিষ্ট সময়ে খুলবে এবং শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের কাজে যোগ দিতে হবে। পড়ুয়াদের অবশ্য স্কুলে যেতে হবে না। অভিভাবকদের প্রশ্ন, মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার ছাত্রছাত্রীদের কেন আসতে বলা হয়েছে? কেন ওই নির্দেশ পেয়েও পড়ুয়াদের ছুটি দেওয়া হয়নি?
এ দিন অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ স্কুলে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নারায়ণ চৌধুরীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের তর্কাতর্কিও হয়। ছড়রা গ্রামের সুভাষ দেওঘরিয়া, বিজয় চক্রবর্তীদের ক্ষোভ, “বাঁধগড়, দক্ষিণবহাল, দুমদুমি, সুরুলিয়া, লেদাবেড়া, হাতোয়াড়া-সহ বিভিন্ন গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা প্রায় ৪-৫ কিলোমিটার দূর থেকে এই রোদ মাথায় নিয়ে হেঁটে স্কুলে যেতে
হওয়ায় কাহিল হয়ে পড়ছে। রাস্তায় ওরা অসুস্থ হয়ে পড়লে তার দায় কি স্কুল কর্তৃপক্ষ নেবেন?” লেদাবেড়া গ্রামের বাসিন্দা, ওই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী পিঙ্কি মুদি, হাতোয়াড়ার বাসিন্দা, ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র সুমিত মাঝি বা সুরুলিয়ার বাসিন্দা পঞ্চম শ্রেণির রুদ্রপ্রসাদ মালাকারদের কথায়, “প্রচণ্ড রোদ। গরমে স্কুলে আসতে খুব কষ্ট হচ্ছে।”
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দাবি, “রাজ্য সরকারের ছুটি দেওয়ার নির্দেশ পাইনি।” যদিও জেলা স্কুল পরিদর্শক বলেন, “পঠনপাঠন বন্ধ রাখার সরকারি নির্দেশ কোনও স্কুল পায়নি বলে আমার জানা নেই। জেলার অন্য সরকারি স্কুলগুলি বন্ধই রয়েছে।”ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক, পুরুলিয়া ২ পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম সভাপতি সদানন্দ দাসের দাবি, “স্কুল খুলেছে বলে জানতাম না। কয়েক দিন বাইরে ছিলাম। এ দিন সকালে স্কুলের পথে ছেলেমেয়েদের যেতে দেখে স্কুল খোলার কথা জানতে পারি। আমি স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে স্কুল খোলার কারণ জানতে চাই।” নারায়ণবাবুর আরও যুক্তি, “অন্য স্কুলগুলির আগে আমাদের স্কুলে ছুটি দেওয়ায় আমরা স্কুল আগে খুলেছি। পাঠ্যক্রম শেষ করার চাপও রয়েছে। তাই সকাল ৯টা পর্যন্ত স্কুল করা হচ্ছিল।” |
অভিভাবকদের অবশ্য পাল্টা বক্তব্য, “৯টা নয়, সাড়ে ১০টার পরে ছুটি হচ্ছিল। এ দিন আমাদের বিক্ষোভের পরে বাধ্য হয়ে প্রধান শিক্ষক ৯টার কিছু পরে ছুটি দেন।” স্থানীয় বাসিন্দা সুভাষ দেওঘরিয়ার কথায়, “এই ক’দিন যা গরম ছিল, তাতে ছেলেমেয়েরা স্কুল থেকে এতটা পথ হেঁটে বাড়ি ফেরার সময় কিছু একটা হয়ে যেতেই পারত। আর বাচ্চাদের কষ্ট দেখলে কোনও অভিভাবক কি চুপ থাকতে পারেন? তাই এ দিন বিক্ষোভ দেখাতেই হয়েছে।”
|