এক মিনিটের বিধ্বংসী ঝড়ে বুধবার বিকেলে মগরাহাটের নৈনান ও মোহনপুর পঞ্চায়েতে কয়েকটি গ্রামে দু’শোরও বেশি ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। ঝড়ের দাপটে ভেঙেছে অসংখ্য গাছও। বাড়ির দেওয়াল চাপা পড়ে আহত হন ৪ জন। তাঁদের মগরাহাট ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয়। ব্লক প্রশাসন থেকে জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিকেল সওয়া ৩টে নাগাদ বৃষ্টি শুরু হয়। মিনিট পনেরো পরে বলবলিয়া, ডোডালিয়া, মির্জাপুর ও আমড়াতলা গ্রামের উপর দিয়ে প্রবল বেগে ঝড় বয়ে যায়। বৃহস্পতিবার সকালে গ্রামগুলিতে গিয়ে দেখা গেল, বেশি কিছু টালির চালের বাড়ি মাটিতে মিশে গিয়েছে। কিছু দোতলা বাড়ির অ্যাসবেসটস উড়ে গিয়েছে। ভেঙে পড়েছে কয়েকটি পোলট্রি। তার ছিঁড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ ও টেলিফোন পরিষেবাও বিপর্যস্ত।
বৃহস্পতিবার সকালে গ্রামে যান মগরাহাট পূব কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক নমিতা সাহা, মগরাহাট-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি খইরুল হক। ব্লক প্রশাসনের একটি প্রতিনিধি দলও এলাকা ঘুরে দেখে। বিডিও রিজওয়ান ওহাব বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য ত্রিপল, চাল ও জামাকাপড় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণের জন্য তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সেই রিপোর্ট জেলা প্রশাসনকে জানানো হবে।”
এ দিন সকালে ক্যানিংয়ের ঘুটিয়ারিশরিফ এলাকায় ঝড়ে বেশ কয়েকটি বাড়ির টিনের চাল উড়ে যায়। বাঁশড়া অঞ্চলের গাঁথিতে দেওয়াল চাপা পড়ে ৩ জন গুরুতর জখম হন। তাঁদের ঘুটিয়ারিশরিফ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, জখম তিন জনের নাম নুরউদ্দিন শেখ, আজমিরা শেখ এবং তাঁদের চার মাসের শিশুপুত্র আজগর শেখ। ক্যানিং ১ বিডিও ঋক গোস্বামী বলেন, “এ দিন ঝড়ে একটি বাড়ির দেওয়াল চাপা পড়ে ৩ জনের জখম হওয়ার খবর পেয়েছি। কয়েকটি বাড়ির চালও উড়ে গিয়েছে।”
অন্য দিকে, ক্যানিংয়ের হাটপুকুরিয়ার বসুঝাঁকা গ্রামে বৃহস্পতিবার সকালে বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয়েছে এক কিশোরের। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম উজ্জ্বল শিকারি (১৭)। তিনি জমিতে কাজ করছিলেন। সে সময়ে বাজ পড়ে। তাঁকে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠিয়েছে।
বাড়ি সারানোর সময় বাজ পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক কিশোরের। বৃহস্পতিবার ভোরে ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নরেন্দ্রপুরে। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম মঙ্গল নস্কর (১৭)। এ দিন ভোরে ঝড়-বৃষ্টিতে তার বাড়ির টালির চাল সরে গিয়েছিল। তা সারানোর সময়ই মঙ্গলের গায়ে আচমকা বাজ পড়ে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার।
বৃহস্পতিবার ভোরে ঝড়বৃষ্টিতে কয়েকটি বাড়ি ভাঙল হাসনাবাদের পাটলিখানপুর গ্রামে। বেশ কয়েকটি গাছ ভেঙে পড়ে। খুঁটি উপড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। একটি মাটির বাড়ি ভেঙে পড়ায় এক মহিলা-সহ দু’জন আহত হন। অন্য দিকে, অতিরিক্ত গরম সহ্য করতে না পেরে মৃত্যু হয়েছে এক ব্যক্তির। পুলিশ জানায়, হিঙ্গলগঞ্জের হেমনগর ৯ নম্বর গ্রামের বাসিন্দা ওই ব্যক্তির নাম বিকাশ বিশ্বাস (৪০)। তিনি স্থানীয় একটি স্কুলের পার্শ্ব শিক্ষক ছিলেন। বুধবার রাতে প্রবল গরমে তাঁর শ্বাসকষ্ট হয়। স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় বিকাশবাবুকে। বৃহস্পতিবার তাঁকে বসিরহাটের হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। সকাল ৮টা নাগাদ হাসপাতালের পথে দুলদুলিতে তিনি মারা যান। পরিবারের লোকজনের দাবি, গরম সহ্য করতে না পেরেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। পুলিশ দেহ ময়না-তদন্তের জন্য বসিরহাট হাসপাতালে পাঠায়। |