তাঁরা শুধু ফুটবল খেলতে নামছেন না। তাঁদের লক্ষ্য শুধু প্রতিপক্ষের নেট থাকবে না। মাঠের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে আরও বড় লড়াই অপেক্ষা করে আছে ইউরোপের দুটো দেশের জন্য।
এই গ্রহের প্রায় সবাই বোধহয় জেনে গিয়েছেন, শুক্রবার ইউরো কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে পোল্যান্ড আর গ্রিস। কিন্তু ইউরোপীয় গণ্ডির বাইরে ক’জন জানেন, লড়াইটা আসলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে?
আট বছর আগে গোটা ফুটবল দুনিয়াকে স্তম্ভিত করে দিয়ে ইউরো জিতে নিয়েছিল পুঁচকে দেশ গ্রিস। আট বছর বাদে আবার একটা ইউরোয় নামার আগে গ্রিস ডুবে গিয়েছে রাজনৈতিক ডামাডোল, আর্থিক সঙ্কট, বেকারত্বের সমস্যায়। ডুবে গিয়েছে ক্লাব ফুটবলের গড়াপেটার কেলেঙ্কারিতে।
তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীও খুব ভাল অবস্থায় নেই। পোল্যান্ডে ইউরো কাপ হওয়া নিয়েই প্রথম থেকে প্রশ্ন ছিল। অনেক ঝড়-ঝাপটা সামলে তিনটে স্টেডিয়াম বানিয়েছেন পোলিশরা। মাইলের পর মাইল জুড়ে রাস্তা তৈরি হয়েছে। এয়ারপোর্ট, স্টেশন, হোটেল সব কিছুর পরিকাঠামোতেই উন্নতি ঘটানো হয়েছে। কিন্তু তাতে কি বিতর্ক মিটেছে? একদমই নয়। ইউরো শুরুর আগের দিনই পোলিশ শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে পড়েছেন পোস্টার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে। বক্তব্য, ‘আমাদের উপযুক্ত পারিশ্রমিক দেওয়া হয়নি।’
যাবতীয় বিতর্ক, যাবতীয় কেলেঙ্কারি মুছে ফেলার জন্য দুটো দেশের অস্ত্র একটাই। ফুটবল। কাল গ্রিস বা পোল্যান্ড একে অন্যের গোলে বল ঢোকালে সেটা শুধু মাঠের স্কোরে আটকে থাকবে না। স্কোর করা হবে মাঠের বাইরের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেও।
দেশের মাঠে পোল্যান্ডের জন্য ওয়ারশ’র ৫৫ হাজারের স্টেডিয়াম কাল ভরে যাবে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। পোল্যান্ডের বিপক্ষে যাবে পরিসংখ্যান, পক্ষে যাবে তাদের ফুটবলারদের ফর্ম। গত তিনটে বড় টুর্নামেন্টের (২০০২, ২০০৬ বিশ্বকাপ, ২০০৮ ইউরো) প্রথম ম্যাচেই হেরে গিয়েছিল পোল্যান্ড। কিন্তু এ বার তাদের দলে যে থ্রি মাস্কেটিয়ার্স রয়েছে।
জার্মান লিগে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে চ্যাম্পিয়ন করার পিছনে রয়েছেন পোল্যান্ডের তিন পজিশনের তিন ফুটবলার। আক্রমণে রবার্ট লিওয়ানদেস্কি, মিডফিল্ডে জাকুব ব্লাৎসসিজনোস্কি এবং ডিফেন্সে লুকাস পিসজেক। এই ত্রয়ীর ফর্মের উপরই নির্ভর করবে, পোলান্ড এ বার ইউরোয় কত দূর যাবে।
ডর্টমুন্ডের হয়ে রবার্ট ৩৪ ম্যাচে ২২ গোল করেছেন। রবার্টকে বল জোগানোর দায়িত্বে থাকবেন পোলিশ অধিনায়ক জাকুব। আর গ্রিসের আক্রমণ রুখে দেওয়ার ভার থাকবে লুকাসের উপর।
ফুটবল দুনিয়ায় সব থেকে জনপ্রিয় পোলিশ নাম হল লুকাস পোডলস্কি। জার্মানির এই তারকা ফুটবলার আবার প্রচণ্ড খুশি, পোল্যান্ড ইউরোর দায়িত্ব পাওয়ায়। পোডলস্কি বলেছেন, “আমি খুব আগ্রহের সঙ্গে পোল্যান্ডের ম্যাচগুলো দেখব। দেখতে চাই, ওরা কতদূর যায়।”
বিশেষজ্ঞদের বিচারে এগিয়ে শুরু করবে পোল্যান্ডই। ২০০৪ ইউরোয় যাঁরা গ্রিসকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন, তাদের মধ্যে শুধু দু’ জন ফুটবলার রয়েছেন এ বারের টিমে। আর ইউরো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সময় কিরিয়াকোস পাপাদোপৌলসের বয়স ছিল ১২। আজ তিনি গ্রিসের অন্যতম ভরসা। সেই ফুটবলার বলছেন, “আমরা পোল্যান্ডকে সমীহ করি, কিন্তু ভয় পাই না।”
ভয় শব্দটা লকারে রেখেই কাল সম্ভবত খেলতে নামবেন দু’দলের বাইশ জন ফুটবলার। আসলে একটা ফুটবল ম্যাচের চেয়েও যে অনেক বড় লড়াই তাঁদের সামনে।
তাঁরা জানেন, দেশ জুড়ে চলা সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অবক্ষয়কে চাপা দিয়ে দিতে পারে একটা মুভ, একটা গোল, একটা জয়।
|