|
|
|
|
তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত ডেবরা, জখম ১২ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ডেবরা |
তৃণমূলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে উত্তাল হল পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা। কিছু দিন ধরেই দুই গোষ্ঠীর মিছিল, পাল্টা মিছিলে এলাকায় তেতে ছিল। ছোটখাটো মারামারিও চলছিল। বৃহস্পতিবার খাজুরি গ্রামে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক রাধাকান্ত মাইতি এবং ডেবরা ব্লক তৃণমূল সভাপতি অলোক আচার্যের অনুগামীদের সংঘর্ষ বাধে। স্থানীয় দুই মহিলা-সহ জখম হন অন্তত ১২ জন। তাঁদের মধ্যে ৬ জনকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়েছে। আহতেরা সকলেই বিধায়ক গোষ্ঠীর লোক। দু’পক্ষই ডেবরায় থানায় পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। এসডিপিও (খড়্গপুর) দীপক সরকার বলেন, “১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে।”
গত ৩ জুন খাজুরি গ্রামে স্থানীয় একটি ক্লাব রক্তদান শিবির করে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক। ওই ক্লাবেরও উদ্বোধন হয়েছিল বিধায়কের হাতে। অভিযোগ, সে দিনের শিবিরে যাঁরা রক্ত দিয়েছেন, তাঁদের বিধায়ক গোষ্ঠীর লোক হিসেবে চিহ্নিত করে বৃহস্পতিবার মারধর করে ব্লক সভাপতির গোষ্ঠীর লোক জন। |
|
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে আহত প্রভাসী মণ্ডল। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল |
যদিও অলোক আচার্যের দাবি, “যাঁরা মার খেয়েছেন, তাঁরা সবাই সিপিএমের। আমি ব্লক সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আহতদের এক জনও তৃণমূল সমর্থক হলে পদ ছেড়ে দেব।” রাধাকান্তবাবুর পাল্টা দাবি, “আহতেরা প্রত্যেকেই তৃণমূলের সক্রিয় সমর্থক। পুরো ঘটনা দলকে জানিয়েছি।” জেলা তৃণমূল সভাপতি দীনেন রায় ‘খোঁজ নিয়ে দেখব’ বলে কার্যত প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গিয়েছেন।
ডেবরায় শাসক দলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের মূলে রয়েছে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের টোল প্লাজার উপর নিয়ন্ত্রণ। সম্প্রতি সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ডেবরা টোল প্লাজার দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার সংস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তখন নতুন কর্মী নিয়োগও হয়েছিল। তৃণমূল সূত্রের খবর, কোন গোষ্ঠীর লোক কাজ পাবে, তা নিয়ে বিবাদ বাধে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে। শেষে বিধায়কের অনুগামীরাই কাজ পান। তাতে আরও ক্ষোভ বাড়ে অলোক-গোষ্ঠীর। এ দিনের হামলা সেই ক্ষোভেরই জের বলে আড়ালে স্বীকার করেছেন তৃণমূলের কিছু স্থানীয় নেতা-কর্মীও।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, অলোক-গোষ্ঠীর লোকজন এ দিন সাতসকালেই বাঁশ নিয়ে খাজুরি গ্রামে গিয়ে রক্তদান শিবিরের আয়োজক ক্লাবের সদস্যদের খোঁজ নিতে শুরু করেন। কেন রক্তদান শিবির করা হয়েছিল, কারা, কেন রক্ত দিয়েছিলেন তার কৈফিয়ত চাওয়া হয়। তার পরই শুরু হয় মারধর। ক্লাবঘরে ভাঙচুর চালানো হয়। ক্লাবের পাশের বাড়ির বধূ প্রভাসী মণ্ডলও রেহাই পাননি। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে এ দিন তিনি অভিযোগ করেন, “ক্লাবের ছেলেদের খুঁজতে খুঁজতে আমাদের বাড়িতেও ঢুকে পড়েছিল অলোক আচার্যের লোক জন। বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলতেই লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাল।”
মারধরে জখম হন বয়স্ক মহিলা লক্ষ্মী পণ্ডিতও। তাঁর ছেলেও ৩ তারিখ রক্ত দিয়েছিলেন। লক্ষ্মীদেবীর অভিযোগ, “বাড়িতে ঢুকে ওরা ছেলের খোঁজ করে। জানি না বলতেই লাঠি দিয়ে মারে। শাড়ি ছিঁড়ে দেয়।” মেদিনীপুর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন অশোক দলুই, নগেন দলুইরা বলেন, “আমরা রক্ত দিয়েছিলাম। ক্লাবের সদস্যও। বিধায়কের সঙ্গে থাকায় এবং রক্ত দেওয়ায় আমাদের মারধর করা হল।” এ দিনের সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে ডেবরা বাজারেও। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। অলোকবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, “পাশের গ্রাম চকপয়া থেকে লোকজন এনে খাজুরিতে এ দিন হামলা চালায় সিপিএম। খাজুরির তৃণমূল সমর্থকেরা প্রতিরোধ করেন। তাতেই কয়েক জন আহত হয়েছেন।” সিপিএমের ডেবরা জোনাল সম্পাদক প্রাণকৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, “এটা তৃণমূলের নিজেদের গোলমাল। আমাদের দলের সঙ্গে যোগ নেই।” |
|
|
|
|
|