নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ভরদুপুরে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিল হাওড়া ফেরিঘাট। বৃহস্পতিবার, কর্মচারী সংগঠনের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে ভাঙচুর করা হল হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির অফিস। গোলমালের জেরে প্রায় দেড় ঘণ্টা বন্ধ করে দেওয়া হয় লঞ্চ চলাচল। নাজেহাল হন কয়েক হাজার যাত্রী। শেষে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে দু’পক্ষের প্রায় ৬ জন আহত হন।
অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরেই এই সমবায় সমিতির শ্রমিক সংগঠন সিটুর দখলে। মাঝে দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বের জন্য সিটুর ক্ষমতা কিছুটা কমলেও রাজ্যে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরে এখনও পর্যন্ত ওই শ্রমিক সংগঠন তৃণমূলের দখলে আসেনি, বরং সিটুরই দখলে রয়েছে। অভিযোগ, ওই সংগঠনের ‘দখলদারি’র জন্যই এ দিন সংঘর্ষ বাধে।
এ দিকে, এই সংঘর্ষের ফলে লঞ্চ ধরতে আসা যাত্রীদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়ায়। অনেকে ভয়ে ছোটাছুটি শুরু করে দেন। বন্ধ হয়ে যায় লঞ্চ চলাচল। সব রুটের লঞ্চ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে যায়। খবর পেয়ে আসে বিশাল পুলিশ বাহিনী। ঘটনাস্থলে আসেন হুগলি নদী জলপথ সমবায় সমিতির তৃণমূল সমর্থিত শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি তথা উত্তর হাওড়ার বিধায়ক অশোক ঘোষ ও সহ সভাপতি গৌতম চৌধুরী। |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, দুপুর দেড়টা নাগাদ রাজ্য অভ্যন্তরীণ জল পরিবহণ দফতরের দু’জন অফিসার আসেন হুগলি নদী জলপথ সমবায় নিয়ে ওঠা কিছু বিষয়ের তদন্ত করতে। অভিযোগ, সমিতির ক্ষমতায় থাকা সিটু সংগঠনের কর্মীরা অফিসারদের তদন্তে বাধা দেন। এমনকী তাঁদের অফিস থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়।
সিটুর তরফে পাল্টা অভিযোগ, অফিসারেরা চলে যেতেই ওই সমিতির তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের সমর্থকরা জনা তিরিশ বহিরাগতকে নিয়ে সমিতির অফিসে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করেন। কর্মচারীদের মারধর করে অফিসের বাইরে বের করে দেওয়া হয়। এই ঘটনা দেখতে পেয়ে ছুটে আসেন সিটু সমর্থকরা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন হাওড়া স্টেশন এলাকার সিটুর সম্পাদক প্রতীক দাশগুপ্ত। অভিযোগ, প্রতীকবাবু-সহ আরও চার জনকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয়। তাঁর নাক, মুখ ফেটে রক্ত পড়তে থাকে। প্রাণ ভয়ে তিনি অ্যসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারের ঘরে আশ্রয় নেন। এর পরেই দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ব্যাপক আকার নেয়। পাল্টা মারধরে আহত হন তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের সম্পাদক প্রণব ঘোষ-সহ আরও এক জন।
প্রতীকবাবুর অভিযোগ, আক্রমণকারীরা তৃণমূল আশ্রিত স্থানীয় দুষ্কৃতী। শ্রমিক সংগঠন দখলের জন্য এটা পূর্ব পরিকল্পিত আক্রমণ। কারণ এ দিন কোনও গোলমাল হয়নি।
হঠাৎ কিছু বহিরাগত এসে মারধর, ভাঙচুর চালায়। |
অশোকবাবু বলেন, “২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত এখানে নানা দুর্নীতি হয়েছে। মালপত্র বিক্রি করা হয়েছে। সে সবেরই তদন্ত করছিল সরকার। সেটা বানচাল করতেই এই ঘটনা ঘটানো হয়।”
জলপথ সমবায় সমিতির অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার ও স্থানীয় সিটু নেতা দেবনারায়ণ মণ্ডল বলেন, “তদন্তকারী অফিসারদের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করা হয়েছে। তাঁরা চলে যাওয়ার পরেই আক্রমণ করে তৃণমূল।”
রাজ্যের অভ্যন্তরীণ জল পরিবহণ দফতরের মন্ত্রী হায়দার আজিজ সফি বলেন, “ওই জলপথ সমবায় নিয়ে একটা তদন্ত চলছিল। ওখানে অফিসারদের বাধা দেওয়ার পরই সংঘর্ষ বাধে। তবে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। পরে লঞ্চ চলাচলও স্বাভাবিক হয়।”
|