আধার-সংখ্যার ভিত্তিতে রান্নার গ্যাস বা কেরোসিনে ভর্তুকির টাকা সরাসরি গরিবদের কাছে পৌঁছে দিতে চায় কেন্দ্র। ভর্তুকির বিপুল বোঝা কমানোর লক্ষ্যেই এই পরিকল্পনা। আপাতত পরীক্ষামূলক ভাবে ১৬টি রাজ্যের ৫০টি জেলায় এই বিশেষ প্রকল্প করতে চায় কেন্দ্র। আজ ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি পাঠান কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাঁর অনুরোধ, দ্রুত যেন এই ‘পাইলট প্রকল্প’ চালু হয়। এই তালিকায় অবশ্য পশ্চিমবঙ্গ নেই।
প্রণববাবু এই অনুরোধ জানালেও আধার-সংখ্যা তৈরির প্রক্রিয়া ঘিরে কেন্দ্রই এখন কিছুটা অস্বস্তিতে। এর মূলে রয়েছে পি চিদম্বরম এবং নন্দন নিলেকানির সংঘাত। নিলেকানির নেতৃত্বাধীন ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি (ইউআইডিএআই)-কে ‘আধার’-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পে প্রত্যেক ভারতীয়কে একটি ১২ অঙ্কের ‘আধার-সংখ্যা’ দেওয়া হবে। তার জন্য প্রত্যেকের নাম, ঠিকানা, আয় থেকে শুরু করে যাবতীয় তথ্য, আঙুলের ছাপ, চোখের মণির ছবি ইত্যাদি সংগ্রহ করা হবে। এই তথ্য সংগ্রহ করা নিয়েই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে নিলেকানদের সংঘাত।
বিরোধ মেটাতে গত জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার কমিটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে বলেছিল অর্ধেক দেশবাসীর তথ্য সংগ্রহ করতে, বাকি অর্ধেক তথ্যের দায়িত্ব দেওয়া হয় (ইউআইডিএআই)-কে। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন রেজিস্ট্রার জেনারেল যে সব তথ্য সংগ্রহ করেছে, নিলেকানি আবার সেই তথ্য নিতে রাজি নন। সম্প্রতি এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে নালিশ জানান চিদম্বরম। তাঁর বক্তব্য, নিলেকানির আপত্তিতে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তৈরির কাজও থমকে। আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। তার পর জট কাটাতে নিলেকানিকে মন্ত্রিসভার তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়, তিনি যেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংগৃহীত তথ্য আধার-সংখ্যা তৈরির জন্য কাজে লাগান।
কেন্দ্রের পরিকল্পনা হল, আধার-সংখ্যা তৈরি হয়ে গেলে সেখান থেকেই কার কত আয়, তা জানা যাবে। সেই অনুযায়ী গরিব মানুষের হাতে বা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি নগদ ভর্তুকি তুলে দেওয়া যাবে। আধার-সংখ্যার ভিত্তিতেই ঠিক হবে কোনও ব্যক্তি রেশনে কম মূল্যে খাদ্যশস্য ও রান্নার গ্যাস বা কেরোসিনে ভর্তুকি পাবেন কি না। সরকারি পেনশন, ছাত্রদের বৃত্তি, একশো দিনের কাজের ভাতাও আধার-সংখ্যার মাধ্যমে বিলি ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে কেন্দ্র। এর ফলে শুধু গরিব মানুষের হাতেই সরকারি সাহায্য পৌঁছবে, সরকারের খরচও কমবে। আজ মুখ্যমন্ত্রীদের লেখা চিঠিতে সেই কথাই জানিয়েছেন প্রণব। তিনি যুক্তি দিয়েছেন, “আধারের সাহায্যে শুধু যে পরিষেবা আরও মসৃণ হবে তা-ই নয়, সরকারি ব্যয়ও কমবে। তাই কেন্দ্র ও রাজ্য, দু’পক্ষেরই স্বার্থ রয়েছে এতে।” প্রথমে কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পগুলির জন্যই এই ব্যবস্থা চালু হবে। |