পালানিয়াপ্পন চিদম্বরমের বিড়ম্বনা বাড়াল মাদ্রাজ হাইকোর্ট। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আর্জি খারিজ করে তামিলনাড়ুর শীর্ষ আদালত আজ জানিয়ে দিল, তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচনী মামলা চলবে। তবে চিদম্বরমের বিরুদ্ধে আনা ২৯টি অভিযোগের মধ্যে দু’টি খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। এই রায়ের পরেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ইস্তফার দাবিতে সরব হয়েছে বিজেপি এবং এডিএমকে। যদিও চিদম্বরমের দাবি, আদালত তাঁর বিরুদ্ধে মূল দু’টি অভিযোগ নিতে অস্বীকার করায় আদতে তাঁরই জয় হয়েছে।
২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে তামিলনাড়ুর শিবগঙ্গা কেন্দ্রে চিদম্বরমের কাছে হেরে যান এডিএমকে প্রার্থী রাজা কান্নাপ্পন। ব্যবধান ছিল তিন হাজারের সামান্য কিছু বেশি ভোট। এর পরেই চিদম্বরমের বিরুদ্ধে ভোটে কারচুপি ও দুর্নীতির অভিযোগে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। কান্নাপ্পনের অভিযোগ, ভোট গণনার দিনে দুপুর ১২টা নাগাদ বেসরকারি ভাবে তাঁকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। কয়েকটি স্থানীয় টিভি চ্যানেলে সেই খবর দেখানো হয়। চিদম্বরমও গণনা কেন্দ্র ছেড়ে চলে যান। কিন্তু সাড়ে বারোটায় সরকারি ভাবে গণনা শেষ হওয়ার পরেও তাঁকে জয়ী ঘোষণা করেননি সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার। বিকেল সাড়ে চারটের সময় যখন দেখা যায় গোটা দেশেই কংগ্রেস এগিয়ে, তখন চিদম্বরম ফের গণনা কেন্দ্রে আসেন। এবং তার এক ঘণ্টা পরেই চিদম্বরমকে জয়ী ঘোষণা করা হয়।
চিদম্বরমের বিরুদ্ধে মোট ২৯টি অভিযোগ এনেছেন কান্নাপ্পন। যা খারিজ করতে আদালতে আর্জি জানান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু আদালত আজ তার রায়ে বলেছে, ভোটারদের টাকা দেওয়া এবং ব্যাঙ্ক ও সরকারি কর্মচারীদের ভোটের কাজে লাগানোর অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়। বিজেপি এবং এডিএমকে যখন ‘মন্ত্রিপদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন’ বলে চিদম্বরমের ইস্তফার দাবিতে সরব, তখন এই দুই অভিযোগ খারিজকেই আত্মরক্ষার হাতিয়ার করছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এর আগে টু-জি স্পেকট্রাম বণ্টন ও এয়ারসেল-ম্যাক্সিস চুক্তির দুর্নীতিতেও চিদম্বরমের নাম জড়িয়েছিল। তখনও তাঁর ইস্তফার দাবিতে সরব হয়েছিল বিজেপি। এ ব্যাপারে চাপ বাড়াতে সংসদে চিদম্বমরমকে বয়কট করতে শুরু করেছিল তারা। আজ মাদ্রাজ হাইকোর্টের রায়ের পরে বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী নিজে সাংবাদিক সম্মেলন করে চিদম্বরমের পদত্যাগের দাবি জানান। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর আর কী প্রমাণ প্রয়োজন? চিদম্বরমের মন্ত্রিপদে থাকার আর কোনও নৈতিক অধিকার নেই। এত কিছু সত্ত্বেও কেন প্রধানমন্ত্রী, সনিয়া গাঁধী তাঁকে আশ্রয় দিচ্ছেন?”
স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বিরোধীদের এই দাবিকে কটাক্ষ করে চিদম্বরম বলেছেন, “এটা আমার নয়, বরং আমার বিরুদ্ধে অভিযোগকারীর পক্ষে ধাক্কা। কারণ তাঁর অভিযোগের গুরুত্বপূর্ণ অংশ আদালত খারিজ করে দিয়েছে। কিছু কিছু রাজনৈতিক নেতার চূড়ান্ত অজ্ঞতা দেখে আমি অবাক হয়ে যাই!” চিদম্বরমের আরও যুক্তি, এটা নিছকই একটা নির্বাচনী মামলা। বর্তমান লোকসভার সদস্যদের বিরুদ্ধে এই ধরনের ১১১টি মামলা রয়েছে।
চিদম্বরমের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন সরকার ও কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদের মন্তব্য, “বিজেপি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই বলে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। এমন চললে চিদম্বরমকে তো পদত্যাগপত্র ছাপিয়ে রাখতে হয়!” আর কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য দিগ্বিজয় সিংহের যুক্তি, চিদম্বরম কোনও মামলায় হেরে যাননি। তা ছাড়া, এর সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদের কোনও সম্পর্কই নেই। নির্বাচন কমিশনই চিদম্বরমকে ভোটে জয়ী বলে ঘোষণা করেছিল।
বিজেপি-র পাশাপাশি চিদম্বরমের ‘ঘোরতর রাজনৈতিক শত্রু’ তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতাও আজ সরব হয়েছেন। তিনি বলেন, “এডিএমকে প্রথম থেকেই বলে আসছে, চিদম্বরম কারচুপি করে ভোটে জিতেছেন।” জয়ললিতার মতে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে চিদম্বরমের থেকে যাওয়াটা গণতন্ত্রের কলঙ্ক। চিদম্বরম নিজে পদত্যাগ না করলে প্রধানমন্ত্রীর উচিত তাঁকে বরখাস্ত করা।
যার উত্তরে চিদম্বরমের ঘনিষ্ঠ মহল বলছে, জয়ললিতা ভুলে যাচ্ছেন যে, তাঁর বিরুদ্ধে বহু দুর্নীতির মামলা ঝুলে রয়েছে। কিন্তু চিদম্বরমের বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি মামলা নেই, কোনও চার্জশিট নেই, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়নি। তা হলে পদত্যাগের প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে?
|