আরও আলোচনা চায় তৃণমূল
মমতা নারাজ, ফের স্থগিত পেনশন বিল
দেশকে আর্থিক বৃদ্ধির পথে ফেরাতে সব রকম পদক্ষেপ করা হবে বলে গত কালই বার্তা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর ঘোষণার চব্বিশ ঘণ্টা পেরোনোর আগেই পেনশন ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রশ্নে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ল কেন্দ্র। সরকারের প্রধান শরিক তৃণমূল কংগ্রেসের আপত্তিতে মন্ত্রিসভার আলোচ্যসূচিতে থাকা সত্ত্বেও আজ পেনশন বিলে সংশোধনের অনুমোদন আটকে গেল। সেই সঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের সমন্বয়ের অভাবও ফের স্পষ্ট হয়ে গেল।
বুধবার রাতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে আলাদা ভাবে চিঠি পাঠিয়ে তৃণমূলের তরফে রেলমন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় জানিয়েছিলেন, এই বিলের সংশোধনীর ক্ষেত্রে তৃণমূলের আপত্তি রয়েছে। রাজনৈতিক ভাবে ‘ঐকমত্য’ না হওয়া পর্যন্ত বিলটি পাশের ব্যাপারে সম্মতি দেবে না তৃণমূল।
ঘটনা হল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় বিলটি অনুমোদন পেলে পেনশন তহবিল পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের দরজা খুলে যেত। প্রায় ২০০ কোটি ডলারের এই পেনশন তহবিলের দরজা খুলে দেওয়ার জন্য বিদেশি সংস্থাগুলি কেন্দ্রের কাছে অনেক দিন ধরেই দরবার করছে। দেশের ২৩টি জীবনবিমা সংস্থাও (যাদের প্রায় সব ক’টিতেই ২৬ শতাংশ বিদেশি পুঁজি রয়েছে) পেনশন তহবিলের বিরাট বাজার ধরতে চাইছে। শিল্পমহল মনে করে, পেনশন তহবিলের এই বিপুল টাকা বাজারে খাটলে দেশের আর্থিক বৃদ্ধি সুনিশ্চিত হবে।
গত বছর জানুয়ারিতে যখন বিলটি প্রথম সংশোধনের জন্য সংসদে পেশ করা হয়, তখন থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের আশঙ্কা, পেনশন তহবিলকে বাজারের হাতে ছেড়ে দিলে সাধারণ মানুষের গোটা জীবনের সঞ্চিত অর্থ নয়ছয় হতে পারে। মমতার আপত্তির বিষয়টি সরকারের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও জানেন। তা ছাড়া গত কাল রাতেই প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী মুকুলের চিঠি পেয়ে গিয়েছেন। তা সত্ত্বেও বিষয়টি কেন আলোচ্যসূচিতে রাখা হল? কংগ্রেসের একাংশ ঘরোয়া ভাবে জানাচ্ছে, সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব বিশ্বের সামনে এই বার্তাই দিতে চায় যে, বিদেশি বিনিয়োগ আনার ব্যাপারে তারা ঐকান্তিক। বারবার সেই চেষ্টাও তারা করছে। কিন্তু জোট রাজনীতির বাধ্যবাধকতার জন্য তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব মনে করছেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে বৃহত্তম শরিক তৃণমূলকে চটাতে চাইছেন না কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই কারণেই এ ব্যাপারে শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী এবং প্রণববাবুকে পাঠানো চিঠিতে মুকুল জানান, পেনশন বিল যখন প্রথম সংসদে আসে, তখন তৃণমূলের বিরোধিতায় তাকে অর্থ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। গত বছর ১২ জুলাই স্থায়ী কমিটিতে তৃণমূলের সদস্য সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। তার পর থেকে স্থায়ী কমিটিতে তৃণমূলের কোনও প্রতিনিধি নেই। মুকুল জানিয়েছেন, সুদীপ পদত্যাগ করার পরে যথাক্রমে ২১ জুলাই, ১৮ অগস্ট এবং ২৯ অগস্ট বিলটি নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু প্রতিনিধি না থাকায় মতামত দেওয়ার সুযোগ ছিল না তৃণমূলের। বিলটি ফের মন্ত্রিসভায় আনার আগে সব স্তরে আলোচনা হওয়া দরকার বলে চিঠিতে লিখেছেন রেলমন্ত্রী।
সূত্রের খবর, আজ মন্ত্রিসভার আলোচ্যসূচির তিন নম্বরে ছিল পেনশন বিল। ক্যাবিনেট সচিব বিলটির উল্লেখ করে নিজেই সেটি পিছিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। পরে বেশ কিছু মন্ত্রী প্রণববাবুর কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে চান। প্রণববাবু তাঁদের জানান, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তৃণমূল তাদের মতামত জানানোর সুযোগ পায়নি। তাদের সুযোগ দিতেই বিলটি পিছোনো হল। সরকারের বেশ কিছু নেতা তখন প্রস্তাব দেন, প্রস্তাবিত বিলটি তৃণমূলের কাছে এখনই পাঠানো হোক এবং দিন পনেরো পরে সেটি পাশ করানো হোক। বিষয়টি ভেবে দেখা হবে বলে জানান প্রণববাবু।
তিস্তা থেকে এনসিটিসি বা বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি প্রায় সব ক্ষেত্রেই কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তৃণমূল-সহ শরিকদের সমন্বয়ের অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে। তৃণমূলের আপত্তিতে পেনশন বিল পিছিয়ে যাওয়ার পরে আজ ফের সমন্বয়ের প্রসঙ্গ সামনে এসেছে। এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস মুখপাত্র রশিদ আলভি বলেন, “তৃণমূলের সঙ্গে মতপার্থক্য হতেই পারে। গণতন্ত্রে এমনটাই ঘটে থাকে। কিন্তু তৃণমূলের উপর আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে।”

শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রী
...সংবাদমাধ্যম সূত্রে প্রাপ্ত খবর, মন্ত্রিসভার বৈঠকে পেনশন বিলটিকে আলোচ্যসূচিতে রাখা হয়েছে। ...বিলটি প্রথম যখন সংসদে পেশ হয়েছিল, তৃণমূল কংগ্রেস তখন তার বিরোধিতা করে। তার পরে এটিকে অর্থ মন্ত্রকের স্থায়ী সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানো হয়। মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তির কারণে ১২ জুলাই ২০১১ তারিখে উক্ত কমিটি থেকে আমাদের সদস্য সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ইস্তফা দিয়েছিলেন। ...সেই থেকে ওই কমিটিতে তৃণমূলের কোনও প্রতিনিধি নেই। ফলে তৃণমূলের মতামত জানানো যায়নি। সুতরাং আপনার কাছে নিবেদন, বিলটি ফের মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসার আগে সর্বস্তরীয় আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।
বিনীত
মুকুল রায়


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.