দাগি জালিয়াত পগার পার
টোকাটুকির ঝক্কি-ঝামেলা নেই, টাকা ফেললেই জাল উত্তরপত্র
প্রশ্নপত্র ফাঁসের কথা শোনা গিয়েছে বহু বার। কিন্তু উত্তরপত্র ‘ফাঁস’ হয়েছে এমন কথা শোনেননি ঝানু গোয়েন্দারাও।
জালিয়াতির দুনিয়ায় এমনই ‘চমক’ দিয়েছেন বরাহনগর ঘোষপাড়ার লক্ষ্মণ শূর। এবং উত্তরপত্র বিক্রিতেও আদ্যোপান্ত পেশাদার তিনি। যেমন দক্ষিণা, তেমন উত্তর। শুধু তা-ই নয়, ড্রাইভিং লাইসেন্স হোক বা জন্মের শংসাপত্র, ভোটার কার্ড বা রেশন কার্ড, এ-সবও মিলত তাঁর ‘কারখানা’য়। বৃহস্পতিবার ওই জেল-ফেরত জালিয়াতের বাড়িতে হানা দিয়ে এমনই হাজারো নথি উদ্ধার করেছে বরাহনগর থানার পুলিশ। কিন্তু লক্ষ্মণের হদিস মেলেনি। তবে গোয়েন্দাদের আশা, কয়েক দিনের মধ্যেই জালে ধরা দেবে এই কীর্তিমান।
কী ভাবে হত উত্তরপত্র ‘ফাঁস’?
উত্তরপত্র ফাঁস মানে উত্তরপত্র জাল। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, বিভিন্ন ছাপাখানার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল লক্ষ্মণের। সেখান থেকেই মোটা টাকার বিনিময়ে ভিন্ রাজ্যের বিভিন্ন পর্ষদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করতেন তিনি। এর পরে প্রশ্নপত্রের সঙ্গে মিলিয়ে নকল উত্তরপত্রও তৈরি হত। থাকত সরকারি পর্ষদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলমোহর, মায় জলছাপও। টাকার বিনিময়ে তা চলে যেত পরীক্ষার্থীর হাতে। পরীক্ষা কেন্দ্রে সময়মতো আসলের সঙ্গে নকল উত্তরপত্রটি বদলাবদলি হয়ে যেত। তদন্তকারীরা জেনেছেন, উত্তরপত্রে কত নম্বরের ঠিক উত্তর রয়েছে, তার উপরে নির্ধারিত হত দাম। এক পুলিশকর্তা বলেন, “এ যেন ‘যত গুড়, তত মিষ্টি’র প্রবাদের হাতে-গরম নজির!”
উদ্ধার হওয়া জাল মার্কশিট ও উত্তরপত্র। —নিজস্ব চিত্র
শুধু উত্তরপত্র নয়, টাকার বিনিময়ে নানা ধরনের নকল শংসাপত্র, নথিও বিক্রি করতেন লক্ষ্মণ। কী নেই সেই তালিকায়! জন্মের নকল সার্টিফিকেট, শিশু শ্রেণিতে ভর্তির ফর্ম, পুণে ও গ্বালিয়র-সহ বিভিন্ন শহরের বিশ্ববিদ্যালয়ের শংসাপত্র, মার্কশিট। মিলত না শুধু ‘ডেথ সার্টিফিকেট’! এ দিন তল্লাশি চালিয়ে নকল উত্তরপত্র, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, মাকশিট-সহ কয়েক হাজার নথি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। মিলেছে অসংখ্য পুরুষ-মহিলার পাসপোর্ট ছবি, খোদ নির্বাচন কমিশনের নকল সিলমোহর, হলমার্কের স্টিকার, ছাঁচ। এ ছাড়াও নগদ প্রায় এক লক্ষ ৪০ হাজার টাকা এবং ২০ ভরি সোনার গয়নাও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। তদন্তকারীরা বলছেন, “যে-দক্ষতায় এ ধরনের জালিয়াতি করা হত, তাতে বড় বড় শিল্পীও লজ্জা পাবেন।”
কিন্তু এই মূর্তিমান ‘শিল্পীটি’ কে?
পুলিশ বলছে, এক সময় হাওড়া জেলা স্কুল পরিদর্শকের অফিসে চাকরি করতেন লক্ষ্মণ। ২০০৬ সালে জাল মার্কশিট ও সার্টিফিকেট তৈরির অভিযোগে সিআইডি তাঁকে গ্রেফতার করে। তার পরেই চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় লক্ষ্মণকে। কয়েক বছর পরে ছাড়া পান তিনি। এবং ফের স্বমূর্তি ধরেন, চালাতে থাকেন একই কারবার। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে দীর্ঘদিন ওই এলাকায় থাকতেন লক্ষ্মণ। পাড়ায় তেমন ভাবে মেলামেশা করতেন না।
এ দিন বিকেলে ঘোষপাড়ায় লক্ষ্মণের তেতলা বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায়, পাহারা দিচ্ছে পুলিশ। দোতলায় গিয়ে দেখা যায়, দু’টি ঘর লন্ডভন্ড। সারা ঘরে নকল মার্কশিট, ভোটার কার্ড এবং অন্যান্য কাগজপত্র ছড়িয়ে রয়েছে। তাঁর স্ত্রী বলেন, “কী কাজ করতেন, কোনও দিন জানতে দিতেন না উনি। মাঝেমধ্যে অনেকে পড়তে আসত। উনি স্কুল-কলেজে ভর্তিও করে দিতেন। রাতে দোতলার ঘরে বসেই কাজ করতেন।”
ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “অভিযুক্তকে খুব শীঘ্র ধরে ফেলা যাবে। কারা ওই ব্যক্তির সঙ্গে জড়িত রয়েছে, তা নিয়ে তদন্ত চলছে।” পুলিশি সূত্রের খবর, যে-সব ছাপাখানার সঙ্গে ওই ব্যক্তির যোগাযোগ ছিল, সেগুলির ব্যাপারেও খোঁজখবর চলছে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.