অভিষেকের মৃত্যু
দৌড়-মৃত্যুতে পুলিশেরই গাফিলতি দেখছে পরিজন
ম্বায় সাড়ে ছ’ফুট, ওজন ৭০ কেজি। নিয়মিত শরীরচর্চা। পুলিশের পরীক্ষায় ‘জেতার’ লক্ষ্যে টানা তিন মাস সকাল-বিকেল দৌড়-ঝাঁপও করেছিল বাইশ বছরের যুবকটি। কিন্তু শেষরক্ষা হল না।
বুধবার পুলিশ হওয়ার সেই ‘দৌড়ে’ গিয়েই প্রচণ্ড গরমে মুখ থুবড়ে পড়ে মারা গেল ইছাপুর ষষ্ঠীতলার অভিষেক পাল। পুলিশের অবশ্য দাবি, অভিষেক অসুস্থ ছিল। অন্য দিকে এমন ‘শক্ত-সমর্থ’ ছেলেকে ‘অসুস্থ’ বলে চালানোর চেষ্টায় মর্মাহত অভিষেকের পরিবার। পুলিশ ও হাসপাতালের ‘গাফিলতি’তে তাঁরা ক্ষুব্ধও।
পারিবারিক-সূত্রের খবর: বাড়ি থেকে পরীক্ষা দিতে যেতে পাছে দেরি হয়ে যায়, সে জন্য দু’দিন আগে মেটিয়াবুরুজে মাসির বাড়ি চলে গিয়েছিলেন অভিষেক। বুধবার ভোর তিনটে নাগাদ ঘুম থেকে উঠে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। সকাল সাতটা নাগাদ মেসোমশাই অমল শীলের সঙ্গে পৌঁছে যান রেস কোর্সে। অভিষেক পরীক্ষা-প্রাঙ্গণে ঢুকে যাওয়ার পরে অমলবাবু বাইরেই দাঁড়িয়েছিলেন। জলের বোতলে ওআরএস নিয়ে।
অমলবাবু জানাচ্ছেন, বেলা তিনটে নাগাদ পরীক্ষার্থীরা একে একে মাঠ থেকে বার হতে থাকেন। কিন্তু অভিষেক বেরোননি। তিনি খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। “ওখানকার পুলিশকর্মীরা কেউ অভিষেকের খোঁজ দিতে পারেননি। পরে জানতে পারি, দৌড়তে গিয়ে তিনটে ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। মাঠের এক ধারে অভিষেকের একপাটি জুতোও দেখতে পাই” বলেন অমলবাবু। তাঁর দাবি, এর পরে পুলিশের কাছে জানা যায়, অসুস্থ অভিষেককে এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অভিষেকের মাসি রিনা ঘোষ বলছেন, “অন্য ছেলেদের মুখে শুনেছি, দৌড়ের পরে অভিষেক অসুস্থ হয়ে অনেকক্ষণ মাঠে পড়ে ছিল। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ডাক্তার ছিলেন না। এক জন যে অসুস্থ হয়ে পড়েছে, তা ওঁরা অন্তত মাইকে ঘোষণা করতে পারতেন! থানা মারফত বাড়িতেও খবর দেওয়া যেত!”
অভিষেকের শোকার্ত পরিবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ
পুলিশ এ সবের কিছুই করেনি বলে পরিজনদের অভিযোগ। শেষে অমলবাবুর কাছে খবর পেয়ে অভিষেকের বাবা নবকুমার পাল বুধবার বিকেলে হাসপাতালে পৌঁছেছিলেন। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, “বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ হাসপাতালে গিয়ে দেখি, ওকে একটা সাধারণ বেডে ফেলে রাখা হয়েছে! এক বার পুলিশ, এক বার ডাক্তারের কাছে দৌড়োদৌড়ি করতে থাকি। শুনি, হাসপাতালে রক্ত নেই, তাই কিছু করা যাচ্ছে না। পুলিশের এক কর্তা আসার পরে ওকে আইসিইউয়ে নেওয়া হল। তখন সন্ধে সাতটা।”
অমলবাবু জানান, এর কিছুক্ষণের মধ্যে অভিষেক মারা যায়। নবকুমারবাবুর আক্ষেপ, “পুলিশ যদি কাছাকাছি কোনও নার্সিংহোমে ভর্তি করত, ছেলেটা হয়ত বেঁচে যেত। হাসপাতালে পড়ে থেকেই ও মারা গেল।”
পুলিশের এ হেন ‘অমানবিক’ আচরণ সম্পর্কে ভবানীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ জানাতে গিয়েও বিপাকে পড়েন নবকুমারবাবুরা। “পুলিশ বলল, অভিযোগ করলেই মৃতদেহের ময়না-তদন্ত হবে। কাটা-ছেঁড়া হবে, বডি পেতে দেরি হবে বিস্তর। হাজারো ঝক্কি পোয়াতে হবে। শুনে বাধ্য হয়েই আমরা অভিযোগ না-করে দেহ নিয়ে আসি” বলেন অভিষেকের বোন মধুরিমা। ‘গাফিলতি’ চাপা দিতেই পুলিশ এ ব্যাপারে তাঁদের থেকে সাদা কাগজে একটি মুচলেকা লিখিয়ে নেয় বলে অভিযোগ পরিজনদের। মধুরিমার কথায়, “আমরা চাই না, চাকরি পেতে গিয়ে এ ভাবে আর কারও জীবন যাক। কিন্তু ওঁদের শিক্ষা হবে না। প্রতি বছর এই গরমেই শারীরিক দক্ষতার পরীক্ষা নেবেন।”
আর পুলিশ যে ভাবে নিজেদের দায় এড়াতে তাঁর দাদার মতো ‘সুস্থ সবল’ ছেলের গায়ে ‘অসুস্থ’ তকমা লাগিয়েছে, তাতেও হতবাক মধুরিমা। পড়শিরাও ক্ষুব্ধ। বন্ধুরা জানিয়েছেন, অভিষেক নিয়মিত জিমে যেতেন। পুলিশে চাকরি পাওয়া এক বন্ধুকে দেখে উৎসাহিত হয়ে শরীরচর্চার মাধ্যমে একশো কেজির ওজনটা নামিয়ে এনেছিলেন সত্তরে। বাড়ির লোক বলছেন, “ওর তো চাকরির কোনও দরকারই ছিল না! একমাত্র ছেলে, সকলে চাইত পারিবারিক মিষ্টির ব্যবসার হাল ধরুক।”
কিন্তু সেই চাকরিরই ‘পরীক্ষা’ দিতে গিয়ে তরতাজা ছেলের ‘বেঘোরে’ মৃত্যু পরিজন এবং পাড়াপড়শিরা মেনে নিতে পারছেন না। অভিষেকের মা কৃষ্ণাদেবীর প্রশ্ন, “বিশাল চেহারা, কত শক্তি ছিল আমার ছেলের! এর চেয়ে নির্মম পরীক্ষা আর কী হতে পারে!”

• তাপ-মৃত্যুর ইতিকথা
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.