মধ্য কলকাতায় ভিড়ে ঠাসা এক বৈদ্যুতিন বিপণন কেন্দ্রে হইচই কাণ্ড। উত্তেজিত এক ব্যক্তি দোকানের ম্যানেজারের জামা ধরে রীতিমতো টানাটানি শুরু করেছেন।
ঘটনাটি কী? কয়েক দিন আগে ওই ভদ্রলোক নগদ টাকা দিয়ে এসি কিনেছেন। কিন্তু তা ‘ডেলিভারি’ হয়নি। কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তির শেষে দোকানের কর্মীরা বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ভদ্রলোককে শান্ত করেন।
এ বছরে তাপপ্রবাহে শহরে এসি-র চাহিদা এখন এমনই তুঙ্গে যে, বিক্রির পরে তা ডেলিভারি করে উঠতে পারছে না সংস্থাগুলি। যদি বা ডেলিভারি হল, তা বসানোর সময় পাচ্ছেন না সংস্থার কর্মীরা।
সিইএসসি এলাকাতেই গত কয়েক সপ্তাহে ৪০ হাজারের মতো এসি বসেছে বলে ওই সংস্থা জানিয়েছে (মনে করা হচ্ছে, সংখ্যাটা আরও বেশি)। ফলে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে এ বছর সিইএসসি অঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদাও ছুঁয়েছে ১৯০০ মেগাওয়াটের ঘর। বিদ্যুৎকর্তারা জানাচ্ছেন, নতুন এসি বসানোর কারণেই প্রতি দিন গড়ে ৮০ মেগাওয়াট করে অতিরিক্ত বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। এসি-র সংখ্যা বেড়েছে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন এলাকাতেও। সেই বিদ্যুতের খোরাক জোগাতে চাপ পড়ছে সিইএসসি ও বণ্টন সংস্থার ট্রান্সফর্মারগুলিতে। ফলে কিছু অঞ্চলে ‘লো’ ভোল্টেজও হচ্ছে। বণ্টন এলাকার মধ্যে পড়ে সল্টলেক। সেখানকার দায়িত্বে থাকা এক বিদ্যুৎকর্তা জানান, এসি-র জন্য তাঁদের গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে প্রতি দিন গড়ে ৩০-৩৫টি করে আবেদনপত্র জমা পড়েছে। |
বৈদ্যুতিন শিল্প মহলের দাবি, গত বছর এসি, রেফ্রিজারেটরের বিক্রি ৩০-৪০ শতাংশ কমে গিয়েছিল। এ বার এসি বিক্রি হয়েছে তার দ্বিগুণেরও বেশি হারে।
উত্তর কলকাতার একটি বৈদ্যুতিন বিপণন সংস্থার ম্যানেজার দেবযানী বর্ধন জানাচ্ছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর তাঁদের এসি বিক্রি প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। তিনি বলেন, “আমাদের মোট ৭টি বিপণন কেন্দ্রে গত কয়েক সপ্তাহে প্রতি দিন গড়ে ১৩০-১৪০টি করে এসি বিক্রি হচ্ছে। গত বারে সে সংখ্যা ছিল ৪৫-৫০টি।” আরও একটি বিপণন সংস্থার মালিক প্রবীর তালুকদার জানান, গত দু’মাসে তাঁদের প্রায় ৬০০টি এসি বিক্রি হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি।
বৈদ্যুতিন শিল্প মহলের সঙ্গে যুক্ত কয়েক জন কর্তা জানান, এ বছর যে রেকর্ড গরম পড়বে, তা অনেক সংস্থাই আঁচ করতে পারেনি। ফলে চাহিদা যে ভাবে বেড়েছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে এসি প্রস্তুতকারকদের।
দেশের একটি নামী এসি প্রস্তুতকারী সংস্থা তরফে জানানো হয়েছে, গত বছরের চেয়ে এ বার শুধু মে মাসেই কলকাতায় তাদের বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৪০%। সংস্থার পূর্বাঞ্চলীয় কর্তা গৌতম সেনগুপ্ত জানান, গত মে মাসে শহরে ২৫০০টি এসি বিক্রি করেছিলেন তাঁরা। এ বার তা বেড়ে হয়েছে ৩২০০টি। |