পড়ার খরচ আসবে কী করে জানে না কেউই |
দয়াল সেনগুপ্ত • সিউড়ি ও খয়রাশোল |
চেয়ে-চিন্তে জোগাড় করা এক সেট বই এবং একজন প্রাইভেট টিউটর। নিত্য অনটনের সংসারে দুই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষর্থী মেয়েদের জন্য এর থেকে ভাল ব্যবস্থা করে দিতে পারেননি বাবা। কিন্তু এ সবের মধ্যেও এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে যথেষ্ট ভাল ফল করেছেন সিউড়ির নগরী গ্রামের দুই বোন বুলটি পাল ও মুনমুন পাল। বোনেদের মধ্যে বুলটিই বড়। কিন্তু পড়াশোনায় বোন খানিকটা এগিয়ে। |
বুল্টি পাল। |
মুনমুন পাল। |
শুভজিৎ মণ্ডল। |
|
নগরী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কলা বিভাগে এ বার উচ্চ মাধ্যেমিক দিয়েছিলেন ওরা। বোন মুনমুনের প্রাপ্ত নম্বর ৪৩২। দিদি বুলটির ৪১১। ওই বিদ্যালয়ের সেরা ছাত্রীও ওরাই। কিন্তু ফল বের হওয়ার পর যে চিন্তাটা এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে সেটা হল সংসারের অভাবের মধ্যে কী ভাবে পড়াশোনা চালাবেন তাঁরা। সমান চিন্তিত ওদের বাবা বিশ্বজিৎ পালও। গ্রামেরই একটি মুরগি খামারে কাজ করে যা পান তাতেই টেনেটুনে চলে সংসার। অভিজিৎবাবু বললেন, “এরপর দুই মেয়ের কলেজে পড়ার খরচ কী ভাবে চলবে জানি না।” ইংরেজি নিয়ে পড়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে বৃহস্পতিবার দুবরারজপুরের হেতমপুর কৃষ্ণচন্দ্র কলেজে ভর্তির আবেদন পত্র তুলতে এসে দুই বোন জানালেন, এ বারেও একই বিষয় বাছার মূলে আছে সেই অভাবই। কারণ, এক বই ও এক টিউশনে যদি কোনও ক্রমে পড়াশোনাটা চানানো যায়।
প্রায় একই হাল খয়রাশোলের রূপসপুর গ্রামের শুভজিৎ মণ্ডলেরও। এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে ৪৪৬ নম্বর পেয়েও ভবিষ্যতে পড়া চালিয়ে যেতে পারবেন কি না তাই নিয়েই চিন্তিত খয়রাশোলের নাকড়াকোন্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র শুভজিৎ। বাবা উত্তম মণ্ডল গ্রামেই কিছু টিউশন পড়িয়ে যা পান তাতেই চলে দুই ছেলে-সহ চার জনের সংসার। উত্তমবাবুর কথায়, “বড় ছেলেটা এত ভাল ফল করল। যদি ওকে ঠিক মত পড়াতে পারতাম তা হলে খুশি হতাম। কিন্তু সেই সামর্থ কোথায়।” আর শুভজিতের কথায়, “বিজ্ঞান বিভাগে পড়লেও সব বিষয়ে টিউশন ছিল না। থাকলেও শিক্ষকেরা সে ভাবে টাকা নিতেন না। ইচ্ছে অঙ্ক নিয়ে পড়া। কিন্তু কী হবে জানি না!”
|
নিজস্ব চিত্র |
|