হাউলার পর আল কুবেইর। সপ্তাহ দু’য়েকের ব্যবধানে ফের রক্তাক্ত সিরিয়া। এ বারের হামলার লক্ষ্য মধ্য সিরিয়ার হামা শহরের কাছে একটি ছোট্ট গ্রামআল কুবেইর। বুধবার সেখানে হামলা চালিয়ে অন্তত ১০০ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করা হয়েছে। এবং এই গণহত্যায় সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকেই দায়ী করেছে বিরোধী পক্ষ সিরিয়ান ন্যাশনাল
সিকিউরিটি কাউন্সিল। তাদের দাবি, নিহতদের মধ্যে অন্তত ২০ জন মহিলা এবং ২০ জন শিশু। যদিও নিহতদের আসল সংখ্যা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। হামলার যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে আসাদ সরকার। বুধবারের এই
হামলায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আমেরিকা সহ রাষ্ট্রপুঞ্জের বেশ কয়েকটি সদস্য দেশ।
সিরিয়ার এক মানবাধিকার সংগঠন সূত্রে খবর, বুধবার আল কুবেইরের একটি খামারে বোমাবর্ষণ করে আসাদের মদতপুষ্ট সেনাবাহিনী। তার পরে বন্দুক এবং ছুরি নিয়ে ওই এলাকায় ঢোকে তারা। রীতিমতো কুপিয়ে, সামনে
থেকে গুলি করে হত্যা করা হয় আল-কুবেইরের অসংখ্য বাসিন্দাকে। এমনকী, প্রচুর পোড়া দেহও মিলেছে বলে খবর। যদিও ওই সংগঠনের দাবি, নিহতদের সংখ্যাটা ৮৭। স্থানীয় এক কো-অর্ডিনেশন কমিটি জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৩৫ জন একই পরিবারের সদস্য ছিলেন। |
সিরিয়ায় বুধবারের গণহত্যার বলি দুই শিশু। ছবি: এএফপি |
তবে, যাবতীয় অভিযোগ সত্ত্বেও নিজেদের বক্তব্যে অনড় আসাদ সরকার। এ দিন সিরিয়ার সরকারি চ্যানেলে জানানো হয়, ওই গ্রামে সক্রিয় এক দল সন্ত্রাসবাদীর উপরই হামলা চালিয়েছে সেনাবাহিনী। গণহত্যার সমস্ত অভিযোগকে ভুয়ো বলে উড়িয়ে দিয়েছে তারা। প্রসঙ্গত গত মাসের শেষের দিকে হাউলা শহরেও প্রায় একই রকম ভাবে গণহত্যা চালায় আসাদের সেনাবাহিনী। এই ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন ১০৮ জন। সেখানেও নিহতদের মধ্যে শিশু ও মহিলাদের সংখ্যাটি ছিল চোখে পড়ার মতো। এবং সে ক্ষেত্রেও একই ভাবে যাবতীয় দায় এড়িয়ে যায় সিরিয়া সরকার।
এ দিন হোয়াইট হাউস সূত্রে জানানো হয়েছে, সিরিয়ার সাধারণ মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ইতিমধ্যেই আসাদ সরকারের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন বন্ধ করার আবেদন জানিয়েছেন মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টন। অবিলম্বে আসাদের হাত থেকে সমস্ত ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ারও দাবি জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সিরিয়াকে সমস্ত ভাবে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার ব্যাপারে একমত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও। এর আগেও এক বার সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভেবেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জ। এমনকী, নিরাপত্তা পরিষদে এই নিয়ে ভোটাভুটিও হয়। কিন্তু রাশিয়া এবং চিনের ভেটোর ফলে সেই
সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। রাশিয়া এবং চিনের দাবি ছিল, সিরিয়ায় সামরিক অভিযান হলে, পশ্চিম এশিয়ার সমস্ত দেশেই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তবে, সিরিয়ায় শান্তি আনতে রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রাক্তন মহাসচিব কোফি আন্নানের পরিকল্পনায় সমস্ত সহযোগিতার আশ্বাস দেয় চিন ও রাশিয়া। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১২-এর এপ্রিল মাস থেকেই সংঘর্ষবিরতি হওয়ার কথা সিরিয়ায়।
কিন্তু সেটি যে বাস্তবে হয়নি, আজকের ঘটনা আবার তা প্রমাণ করে দিল। অসমর্থিত সূত্রের হিসেব অনুসারে ২০১১ সালের মার্চ থেকে এ পর্যন্ত সিরিয়ায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে অন্তত সাড়ে তেরো হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। |