কমিশনারেট গঠনের পরে খনি ও শিল্পাঞ্চলে একে একে ধরা পড়েছে কমল দাস, জয়দেব মণ্ডল, রাজু ঝা, কালে সিংহের মতো তাবড় কয়লা মাফিয়া। পুলিশি অভিযানে বহু টন অবৈধ কয়লাও আটক হয়েছে। কিন্তু কোনও অভিযানে গিয়ে পুলিশের প্রহৃত হওয়া বা অস্ত্র ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেনি। তাই কুলটির সবনপুরে তেমন পরিস্থিতির মুখে পড়ার পরে নড়েচড়ে বসেছে কমিশনারেট। হামলায় জড়িত সন্দেহে ২১ জনকে তড়িঘড়ি গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে খোওয়া যাওয়া দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র। কিন্তু এই হামলার মূল কারবারি বলে যাকে সন্দেহ করছে পুলিশ, সেই কয়লা মাফিয়া কানাই দাসের খোঁজ এখনও মেলেনি।
গত সোমবার সন্ধ্যায় এই কানাইয়ের খোঁজে গিয়েই আক্রান্ত হয় পুলিশ। কে এই কানাই? পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অবৈধ কয়লার কারবারে কানাইয়ের নাম শোনা যেতে শুরু করে ২০০০ সাল থেকে। বছর সাতচল্লিশের এই মাফিয়ার কারবার চলে বরাকর সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমান্তের ডুবুরডিহি চেকপোস্ট থেকে কুলটির চৌরঙ্গি পর্যন্ত এলাকায়। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান কানাই ছোটবেলায় পরিত্যক্ত খনির মাটি খুঁড়ে কয়লা বের করত। তার পরে সেই কয়লা ঝুড়িতে নিয়ে মাথায় করে বয়ে নানা দোকান ও বাড়িতে বিক্রি। এ ভাবে রোজগার করেই সংসারের খরচ জোগাত সে।
পুলিশ জানায়, বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কারবারের পরিধি বাড়াতে শুরু করে কানাই। হাত পাকায় অবৈধ খনন ও কয়লা পাচারে। বন্ধ পড়ে থাকা বিসিসিএলের বামনা কোলিয়ারি থেকে অবৈধ ভাবে কয়লা তুলত সে। একই কাজ শুরু করে সালানপুরে ইসিএলের ডালমিয়া কোলিয়ারিতেও। নিজে লোক লাগিয়ে খননের পাশাপাশি অন্য অবৈধ খননকারীদের থেকে কয়লা কেনা শুরু করে। ঝাড়খণ্ডে বিসিসিএলের একাধিক খনি থেকে অবৈধ ভাবে কয়লা তুলে সাইকেল বা গরুর গাড়িতে করে ডুবুরডিহি চেকপোস্ট পেরিয়ে কানাইয়ের ঠেকে এনে বিক্রি করে চোরেরা।
পুলিশ সূত্রে খবর, এই চোরাই কয়লা নিরাপদে মজুত করার জন্য একাধিক গুল কারখানা বানায় কানাই। লোক দেখানো এই সব কারখানায় অবৈধ কয়লা মজুত করা হয়। ২০০৫ সাল নাগাদ কানাই চাপতারিয়া, কুরকুটিয়া-সহ বিসিসিএলের একাধিক খনি ও ইস্কোর রামনগর কোলিয়ারি সংলগ্ন এলাকায় অবৈধ খাদান তৈরি করে। সে সব জায়গা থেকে তোলা কয়লা শুধু গুল কারখানাগুলিতে মজুত করা সম্ভব হচ্ছে না দেখে পুরনো কল্যাণেশ্বরী মন্দিরের কাছে কুরকুটিয়া জঙ্গল, দেবীপুর ও লাকরা ঝড়িয়া জঙ্গলে মজুত করা শুরু করে। সেখান থেকেই নানা জায়গায় পাচার হয় এ সব কয়লা। পুলিশের দাবি, অবৈধ কয়লা কারবার করে এখন প্রায় কয়েকশো কোটি টাকার মালিক কানাই।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সবনপুরেই বিশাল বাড়ি তৈরি করে থাকে এই মাফিয়া। এলাকার প্রায় সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই তার ওঠাবসা। পুলিশের একাংশও এক সময়ে তাকে মদত দিয়েছে। এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রতবাবু জানান, ২ নম্বর জাতীয় সড়কে ডুবুরডিহি সংলগ্ন এলাকায় একটি হোটেল আছে কানাইয়ের। মধুচক্র চালানোর অভিযোগে সেখানে বেশ কয়েক বার অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ।
এই মাফিয়ার খোঁজে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার পরে পুলিশ তার কিছু সাঙ্গোপাঙ্গোকে ধরেছে। কানাই কিন্তু অধরাই। এডিসিপি (পশ্চিম) অবশ্য বলেন, “কানাই পালিয়ে গেলেও যেখানে সে লুকোতে পারে, তেমন সব জায়গায় তল্লাশি চলছে। তার কয়েক জন সঙ্গীও পলাতক। সবাইকে ধরা হবে।” |