ইউরোপ ঘোরার ফাঁকে ইউরোই তাঁকে নাড়াচ্ছে বেশি। ইস্টবেঙ্গল নয়।
মাদ্রিদ, বার্সেলোনা ইউরোপ চ্যাম্পিয়নদের ফুটবলের আঁতুড়ঘর ঘুরে টোলগে ওজবে এখন মোনাকোয়। ছবির মতো সাজানো শহর মন্টে কার্লোতে বসে। বৃহস্পতিবারই তিনি ১৩ দিনের জন্য চলে যাচ্ছেন ইতালি ইউরোর আর এক ফেভারিট দেশে।
টেকনিক্যাল দৃষ্টিভঙ্গিতে এই ইউরোর তিনটি বিশেষত্ব কী হতে চলেছে? জানতে চাইলে এই মুহূর্তে কলকাতার সবচেয়ে বিতর্কিত ফুটবলারের পর্যবেক্ষণ এ রকম:
• গ্রিসের মতো চমকে দেওয়া কোনও অনামী চ্যাম্পিয়ন দেখা যেতে পারে। যাদের কথা কেউ ভাবছেই না।
• একেবারে নতুন কোনও নায়ক উঠে আসবে।
• অনেক দল রক্ষণাত্মক খেলবে বলে এ বার টুর্নামেন্টে বেশি গোল নাও দেখা যেতে পারে।
ইউরো আসবে, ইস্টবেঙ্গল আসবে না তা হয় কী করে? ‘পুরনো ক্লাবের’ মামলার খবরটা তাঁর কানে গেছে। কিন্ত ইস্টবেঙ্গল-প্রসঙ্গ তেমন গুরুত্বই দেন না টোলগে। ওই বিতর্কে কলকাতার ফ্যানদের জন্য আপনার কী বার্তা? তাঁর জবাব, “আমার মনে হয়, ওঁদের কার্যকলাপে ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের নিজেদেরই লজ্জিত হওয়া উচিত। আমি মনে করি, ওঁরা যেহেতু আমাকে রাখতে পারেননি, তাই সব কিছু ঢাকার চেষ্টা করছেন। চেষ্টা করছেন সব কিছু ঘুরিয়ে দেওয়ার। তবে আমি এ সব শুনে একেবারে চিন্তিত নই। কেননা আমি সত্যিটা জানি। এবং ঈশ্বরও সত্যিটা জানেন।”
|
নতুন চ্যাম্পিয়নদের কথা ভাবলেও ইউরোয় টোলগে ফেভারিট ধরছেন স্পেনকেই। তাঁর উত্তরে আবেগের পাশে যুক্তি, ‘‘রিয়াল মাদ্রিদের স্টেডিয়াম বের্নাবোউ, বার্সেলোনার নৌ কাম্প দুটোই দেখলাম। নৌ কাম্প সত্যি সত্যি অনবদ্য। স্পেনের সব প্লেয়ারই ক্লাস প্লেয়ার। বড় টিমে খেলে। বড় দলের চাপ নিতে পারে।” ইউরো নিয়ে তাঁর পরের সব মন্তব্য এ ভাবে সাজানো যায়।
বিশ্বকাপের পরে কী বদল হয়েছে ফুটবলে: বদলটা যে হয়েছে তা স্পেনের ফুটবল দেখলেই বোঝা যাবে। ওদের ফুটবলাররা বিশ্বকাপ জিতে এখন অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার প্লেয়ারদের খেলায় তার ছাপ পড়েছে।
স্পেনের সাফল্যের রহস্য: ওদের অধিকাংশ প্লেয়ারই বিশ্বের সেরা দুটো ক্লাবের। একসঙ্গে একটা ক্লাবে অনেক দিন ধরে রয়েছে। এখন বার্সেলোনা আর রিয়াল মাদ্রিদের দুটো ধারা চমৎকার ভাবে মিশছে ওদের জাতীয় দলের ফুটবলে।
নতুন কী সিস্টেম উঠে আসতে পারে: একটা সিস্টেমই দেখা যাচ্ছে। ৪-২-৩-১। কেননা এই সিস্টেমে ভাল নিখুঁত রক্ষণ করে অনেক দ্রুত, চটকদার প্রতি-আক্রমণ করা যায়। অধিকাংশ দল এটায় খেলবে।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রভাব কতটা পড়বে ইউরোয়: মনে হয় না পড়বে। স্পেন, জার্মানির ক্লাব হেরে গেছে বলে ওদের জাতীয় দলের খেলায় এর প্রভাব পড়বে না। তবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার জন্য চেলসির প্লেয়াররা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলবে ইউরো কাপে।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রক্ষণাত্মক ফুটবল জেতায় তার প্রভাব এখানে পড়বে কি না: কিছু তথাকথিত ছোট টিম এখানে রক্ষণাত্মক খেলবে। চেষ্টা করবে প্রতি-আক্রমণে খেলার। ও রকম রক্ষণাত্মক খেললে সত্যিই গোল করা কঠিন। তবে একবার একটা টিম সেমিফাইনালে গেলে সবাই আক্রমণাত্মক খেলবে।
|
প্রসঙ্গ ইস্টবেঙ্গল |
“আমার মনে হয়, ওঁদের কার্যকলাপে ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের নিজেদেরই লজ্জিত হওয়া উচিত। ওঁরা যেহেতু আমাকে রাখতে পারেননি, তাই সব কিছু ঢাকার চেষ্টা করছেন। এ সব শুনে একেবারে চিন্তিত নই। কেননা আমি সত্যিটা জানি। এবং ঈশ্বরও সত্যিটা জানেন।” |
|
চার সেমিফাইনালিস্ট কারা হতে পারে: স্পেন তো আছেই। পর্তুগাল, জার্মানি আর ক্রোয়েশিয়া। পর্তুগালের পারফরম্যান্স এখন ভাল নয়। কিন্তু রোনাল্ডোর জন্য ধীরে ধীরে উন্নতি করবে। আমি পর্তুগাল আর ক্রোয়েশিয়ার জন্যই নতুন চ্যাম্পিয়নের কথা বলছি।
এ বারের ডার্ক হর্স: পর্তুগাল। ওরা প্রচণ্ড কঠিন গ্রুপে রয়েছে। অতীতে বিশ্বকাপ আর ইউরো কাপে ওদের পারফরম্যান্স ভাল নয়। কিন্তু পর্তুগাল যা খুশি করে দিতে পারে।
কাকে সমর্থন: বিশ্বকাপ হলে আমি তুরস্ক বা অস্ট্রেলিয়াকে সমর্থন করি। যে দুটো দেশের সঙ্গে আমার জীবন জড়িয়ে। ইউরো কাপে কোনও বিশেষ দলকে সমর্থন করার মতো কেউ নেই। আমি তাই টুর্নামেন্টে আমার ফেভারিট ফুটবলার ও তাঁদের দলকে সমর্থন করি।
বিশ্বকাপ না ইউরো, কোনটা বেশি কঠিন: মনে হয়, বিশ্বকাপ খেলা অনেক কঠিন। কেননা ওখানে অনেক দল থাকে। তার পরে আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার দল থাকে। প্রতিযোগিতা অনেক কঠিন হয়।
সম্ভাব্য সেরা ফুটবলার: যারা সেমিফাইনালে খেলবে, তাদের মধ্যে থেকে কেউ হবে। কিন্তু আমি সবচেয়ে খুশি হব রোনাল্ডো বা ইব্রাহিমোভিচের মধ্যে কেউ টুর্নামেন্টের সেরা হলে।
টোলগের পছন্দের ফুটবলার রোনাল্ডোই। “ওর খেলায় এনটারটেনমেন্টের উপকরণ অনেক। ওর খেলা দুর্দান্ত উপভোগ করি।” মনে হল, রোনাল্ডোর পরেই অস্ট্রেলিয়ান তারকার পছন্দের ফুটবলার ইব্রাহিমোভিচ।
ইউরো শুরুর আগে ইউরোপের সেরা এগারো জনের দল তৈরি করতে বলা হলে সেটাও পলকে তৈরি টোলগের। এখানেও তাঁর ফরোয়ার্ড দেখা গেল রোনাল্ডো ও ইব্রাহিমোভিচ।
অস্ট্রেলিয়ান তারকার পছন্দের ইউরোপের সেরা দল এ রকম: (গোল) ইকের কাসিয়াস। (রক্ষণ) ফিলিপ লাম, জন টেরি, সের্জিও রামোস, অ্যাশলে কোল। (মাঝমাঠ) সেস ফাব্রেগাস, জাবি আলন্সো, আন্দ্রে ইনিয়েস্তা, মেসুট ওজিল। (ফরোয়ার্ড) ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, ইব্রাহিমোভিচ।
ইউরোর প্রথম দিকটা টোলগে দেখবেন ইতালিতে বসে। তাঁর দলে ইতালিয়ান কেউ নেই। ভাবনাতেও ইতালি দল নেই। আগামী ক’দিনে সেটা হয়তো পাল্টাবে। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের নিয়ে তিতকুটে মেজাজটা পাল্টাচ্ছে না। কবে কলকাতা আসছেন? উত্তর তৈরি, “আমি একেবারে প্রি সিজনের প্রথম দিন ফিরব। সেটা মোহনবাগানেই।”
ইউরোর পরে টোলগের ভাবনায় মোহনবাগানই। |