রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মুখে কংগ্রেসের উপর চাপ ক্রমশই বাড়াচ্ছে তাদের সব চেয়ে বড় শরিক তৃণমূল।
গত কাল রাজ্যে ৬টি পুরসভার ফল প্রকাশের পরেই ভবিষ্যতে ‘একলা চলার’ কথা ঘোষণা করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা রেলমন্ত্রী মুকুল রায়। আজ তিনি গরহাজির রইলেন প্রধানমন্ত্রীর ডাকা পরিকাঠামো প্রকল্প সংক্রান্ত বৈঠকে। পাশাপাশি, ইন্ডিয়া ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের (আইটিডিসি) শীর্ষপদে কংগ্রেস নেতা শঙ্কর সিংহ বাঘেলার নিয়োগ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে আজই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় পর্যটন প্রতিমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা সুলতান আহমেদ। তাঁর অভিযোগ, গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রতিমন্ত্রীদের মতামত নেওয়া হয় না।
দেশ জোড়া আর্থিক সঙ্কট থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর উপায় খুঁজতে আজ সন্ধ্যায় পরিকাঠামো সংক্রান্ত মন্ত্রকগুলির মন্ত্রী ও সচিবদের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। পরিকাঠামো ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগে লগ্নি করে কী ভাবে অর্থনীতির ব্যাধি মুক্ত করা সম্ভব, তার রূপরেখা তৈরি হয় ওই বৈঠকে। কিন্তু এমন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে সড়ক বা জাহাজ মন্ত্রীরা থাকলেও গরহাজির রেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মন্ত্রীই।
তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে উত্তরপ্রদেশের মঠ বিধানসভা উপনির্বাচনে দলীয় প্রচার কর্মসূচি থাকায় বৈঠকে যোগ দিতে পারেননি রেলমন্ত্রী। রাষ্ট্রীয় লোকদলের বিধায়ক জয়ন্ত চৌধুরীর ইস্তফা দেওয়ায় এই আসনটি খালি হয়েছে। আজ সেই কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থীর প্রচারেই গিয়েছিলেন মুকুল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকের থেকে কি এই প্রচারে যাওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশে সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা ভোটে দেড়শোর বেশি আসনে প্রার্থী দিয়ে একটিতেও জিততে পারেনি তৃণমূল! দলের তরফে যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, গত বার ওই আসনটিতে তৃণমূল ভাল ফল করেছিল। এ বারও সেই ব্যক্তিকেই প্রার্থী করা হয়েছে। জেতার সম্ভাবনাও রয়েছে। তাই মুকুল প্রচারে গিয়েছেন।
পরে রেলমন্ত্রী বলেন, “আমার ওই রাজনৈতিক সভা পূর্বনির্ধারিত ছিল। তা ছাড়া একেবারে শেষ মুহূর্তে আমার কাছে আমন্ত্রণ আসে। ফলে বৈঠকে যেতে পারিনি। আমার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর এ বিষয়ে কথা হয়েছে। এ নিয়ে জল্পনার কোনও অবকাশ নেই।” দিল্লির রাজনীতির কারবারিরা কিন্তু মনে করছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে সংঘাতের পথে গিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে চাপ বাড়াচ্ছে তৃণমূল। রাজধানীতে জল্পনা হল, আগামিকাল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় পেনশন বিল পেশ হলে তারও বিরোধিতা করে পারে তৃণমূল।
অনেকের মতে এই বিরোধিতার মূল কারণ হল, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার দাবি করা সত্ত্বেও রাজ্যের ঋণের বোঝা লাঘবে এখনও কিছু করেনি কেন্দ্র। কিন্তু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীকে জেতাতে গেলে তৃণমূলের সাহায্য নিতেই হবে কংগ্রেসকে। আর তাই এখন মমতা কংগ্রেসের উপরে চাপ বাড়াচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে মুকুলের অনুপস্থিতির পাশাপাশি আইটিডিসি-র শীর্ষ পদে শঙ্কর সিংহ বাঘেলার নিয়োগ নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সুলতান আহমেদ। তাঁর মন্তব্য, “আমাকে এক বারও না জানিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়াতে আমি হতবাক।” গত কালই এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন সুলতান। তাতে তিনি বলেছেন, আইটিডিসি-র ইতিহাসে এই প্রথম কাউকে চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে, যিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সমমর্যাদা সম্পন্ন। ব্যয়সঙ্কোচের মধ্যেই এমন পদক্ষেপ অর্থহীন বলেই মন্তব্য করেছেন সুলতান। মুকুলের মতো সুলতানেরও অবশ্য দাবি, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংঘাতে যাওয়ার জন্য ওই চিঠি তিনি দেননি। পর্যটন প্রতিমন্ত্রী জানান, আজ সকালেই তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে ফোন করেছিলেন মনমোহন।
কিন্তু এই ‘আপাত হৃদ্যতার’ অন্তরালে কৌশলগত দূরত্ব বাড়ছে বলেই অভিমত কংগ্রেস ও তৃণমূল নেতাদের। |