খর রোদ আর তাপে শহর যখন পুড়ছে, তখন রেসকোর্স ময়দানে পুলিশের চাকরি পাওয়ার জন্য দৌড়ের পরীক্ষা দিচ্ছিলেন একদল যুবক। কিন্তু সেই ‘সক্ষমতায়’ উত্তীর্ণ হতে পারলেন না নোয়াপাড়ার অভিষেক পাল। গরম ও তাপের ধকলে প্রায় ‘অমানুষিক’ এই পরীক্ষা তাঁর মৃত্যুর কারণ হল। মাঠেই পড়ে অচেতন হয়ে যান তিনি। এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে গেলে বুধবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, টানা সাত ঘণ্টা চৈতন্য ফেরেনি ওই যুবকের। শেষে রাতে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। চিকিৎসকদের বক্তব্য, প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে সানস্ট্রোক থেকেই মৃত্যু হয়েছে। সঙ্গে প্রচণ্ড ডিহাইড্রেশনও হয়ে গিয়েছিল অভিষেকের। দেহটির ময়না-তদন্ত হবে। রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।
এই ঘটনা সম্পর্কে লালবাজারের কোনও কর্তা অবশ্য মুখ খোলেননি। পুলিশ কমিশনার থেকে শুরু করে কোনও
|
হাসপাতালে
অভিষেকের দাদা |
|
অভিষেক |
কর্তাকেই ফোনে
ধরা যায়নি। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আপাতত এই পরীক্ষা বন্ধ থাকবে বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে। মৃত অভিষেকের বোনকে সরাসরি চাকরি দেওয়ার কথাও বলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও এই মৃত্যুর কারণ নিয়ে পুলিশের একাংশ ভিন্ন ব্যাখ্যা দিচ্ছে। তাদের বক্তব্য, শুধু গরমের ধকলে নয়, আগে থেকেই কিছুটা ‘অসুস্থ’ ছিল অভিষেক। তবে মৃতের দাদা পার্থ ঘোষের দাবি, “ভাইয়ের কোনও অসুস্থতা ছিল না।”
মাসখানেক ধরেই প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে বিকেল পর্যন্ত কলকাতা পুলিশে নিয়োগের জন্য শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা চলছিল। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, কেউ অসুস্থ থাক বা না-ই থাক এখন এই তীব্র গরমে খোলা ময়দানে এই ধরনের পরীক্ষা নেওয়া কতটা ‘মানবিক’। কিছু দিন আগে চাকরিপ্রার্থীদের খর রোদে খোলা ময়দানে হাঁসফাঁস করতে দেখে মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে চাকরিপ্রার্থীদের জন্য ছাউনি করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ছাউনি তৈরিও হয়। তবে সরকারি সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী কয়েক দিন আগে থেকেই পুলিশকে তীব্র গরমে এই পরীক্ষা বন্ধ রাখার পরামর্শ দিলেও পুলিশ তা বন্ধ করেনি। অভিষেকের মৃত্যুর পরে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী এ ব্যাপারে পুলিশকর্তাদের সুনির্দিষ্ট নির্দেশ দেন।
যদিও এর আগে অভিষেকের অসুস্থ হয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে অতিরিক্ত কমিশনার (৩) দেবাশিস রায় মন্তব্য করেন, “বুধবার বৃষ্টি পড়েছে। গরমও কমেছে। তাই পুলিশে নিয়োগের শারীরিক পরীক্ষার আগামী তারিখগুলি পিছনো হয়নি।”
শুধু চাকরিপ্রার্থীই নয় গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন পুলিশকর্মীরাও। পুলিশ সূত্রে খবর, দুপুরে অসুস্থ হয়ে পড়েন গোয়েন্দা বিভাগের ডাকাতিদমন শাখার কর্মী সৌমেন মুখোপাধ্যায়। মেটিয়াবুরুজে রাস্তায় কতর্ব্যরত এক ট্রাফিক কনস্টেবলও রোদে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর নাম রাজারাম দত্ত। |