হাতে গোনা কয়েকজন ব্যবসায়ীর জন্য ‘প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত শহর’ এই সুনাম নষ্ট হবে তা মেনে নিতে রাজি নন শিলিগুড়িবাসী। চোরাগোপ্তা প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের ব্যবহারের চেষ্টা রুখতে ওই ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে পুলিশে সুনির্দিষ্ট ভাবে অভিযোগ জানাবেন পুর কর্তৃপক্ষও। তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তাঁরা। বুধবার বিধান মার্কেটে অভিযানের সময় কিছু ব্যবসায়ী ফের বাধা দিলে সেই মতো তাদের নামে পুলিশে অভিযোগও জানানো হয়। অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন পুরসভার চেয়ারম্যান তথা এলাকার কাউন্সিলর নান্টু পাল-সহ বাসিন্দাদের একাংশ। পুলিশ ওই ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করে অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে। বারবার ব্যবসায়ীদের বোঝানোর পরেও তাঁদের একাংশ লুকিয়ে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের চেষ্টা করায় ক্ষুব্ধ বিধান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির কর্মকর্তারাও। মঙ্গলবার পুরসভা এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের যৌথ অভিযানের সময় ওই ব্যবসায়ীদের একাংশ বাধা দেন। অভিযানে সামিল কর্মী আধিকারিকদের টম্যাটো, পচা ফল ছুঁড়ে মারেন বলে অভিযোগ ওঠে। পুলিশে অভিযোগও জানানো হয়। এ দিন তাই অভিযানের সময় সঙ্গে পুলিশ রাখা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও পুরসভার কর্মীরা একটি ফলের দোকান থেকে প্ল্যাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বাজেয়াপ্ত করে দোকান মালিককে জরিমানা করেন। সে সময় ওই ফল বিক্রেতা-সহ আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী তাঁদের ঘিরে ধরে জরিমানার নথিপত্র কেড়ে নেন বলে অভিযোগ। সঙ্গে দুই তিন জন পুলিশ থাকলেও ব্যবসায়ীরা তাঁদের ঘিরে ধরেন। পর্যাপ্ত পুলিশ নেই দেখে তাঁরা শেষ পর্যন্ত ফিরে যান। পরে মূল অভিযুক্ত ব্যবসায়ীর নাম করে পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়। মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, ‘‘ডেপুটি মেয়র বিষয়টি দেখছেন। প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের চেষ্টা করা হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ভক্তিনগর থানা থেকে পর্যাপ্ত পুলিশ নিয়েএ দিনই অবশ্য চয়নপাড়া বাজার এবং ঘোঘোমালি বাজারে অভিযান চালানো হয়েছে। শহরের ব্যবসায়ী এবং সচেতন বাসিন্দাদের অনেকেই চোরাগোপ্তা প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের চেষ্টায় ওই ব্যবসায়ীদের কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়শনের (এটোয়া)-এর অন্যতম কর্মকর্তা সম্রাট সান্যাল বলেন, “শিলিগুড়ির শহর প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত বলে দেশ বিদেশের পর্যটকরা প্রশংসা করেন। তা শুনে শহরের বাসিন্দা হিসাবে আমরাও গর্বিত। অথচ সেই সম্মান নষ্ট করার চেষ্টা করা হলে তা দুর্ভাগ্যের। বাসিন্দাদের সচেতন হতে হবে। এ ধরনের গুটিকয়েক ব্যবসায়ী প্ল্যাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করতে চেষ্টা করলে সকলকেই এগিয়ে এসে প্রতিরোধ করতে হবে।” এলাকার কাউন্সিলর নান্টুবাবু বলেন, “ওই ব্যবসায়ীরা ঠিক কাজ করছেন না। অভিযুক্তদের পুলিশ গ্রেফতার করুক।” উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী দাস বলেন, “প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ পরিবেশের পক্ষে অন্ত্যন্ত ক্ষতিকারক। শহরকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত করা হয়েছে। বাসিন্দাদের মধ্যে একটা ভাল অভ্যাস গড়ে উঠেছে। কয়েকজন এ ভাবে তা নষ্ট করতে চাইলে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।” বিধান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বাদল গুহ জানান, মঙ্গলবারের ঘটনার পর ব্যবসায়ীদের ডেকে সতর্ক করা হয়েছিল। এ ধরনের ঘটনা হবে না বলে তাঁরা আশ্বাস দিয়েছিলেন। তার পরেও ফের একই ঘটনায় তাঁরাও ক্ষুব্ধ। |