দেখা করলেন মনমোহন
স্মৃতির সরণিতে বন্ধু সু চি-কে আমন্ত্রণ
খনও নিজের দেশটাকে বর্মা নামেই ডাকেন। বাণিজ্যনগরীর নাম বলতে গিয়ে রেঙ্গুন-ই বলেন, ইয়াঙ্গন নয়। ভারতের কথা উঠলেই হারিয়ে যান প্রায় পাঁচ দশক আগে দিল্লিতে ফেলে আসা স্কুল-কলেজের জীবনে, যেখানে আজও তাঁর স্মৃতির অনেকটা জুড়ে ‘পণ্ডিতজি’, জওহরলাল নেহরু।
তিনি আউং সাং সু চি। যাঁর হাত ধরে দিন বদলের স্বপ্ন দেখছে মায়ানমার। অথচ নোবেলজয়ী সেই স্বপ্নের কাণ্ডারী নিজে বদলাননি একটুও। মঙ্গলবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে বৈঠকেও তাই দেশের বিরোধী দলনেত্রী তথা ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক’ রইলেন এতটাই কাছের মানুষ হয়ে। আর সেই আবহেই তাঁকে ভারতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত করার বার্তা দিলেন মনমোহন। হাতে তুলে দিলেন ‘পণ্ডিতজি’র উত্তরসূরির পাঠানো বক্তৃতার আমন্ত্রণপত্র। জানালেন, যে দেশের সঙ্গে সু চি-র এত দীর্ঘ সম্পর্ক, বন্ধুত্বের স্মারক হিসেবে সেখানে তিনি আবার ঘুরে যান। মনমোহনের কথায়, “সু চি-র সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাওয়া একটা বিরাট সম্মান, বিরাট সুযোগ।” প্রসঙ্গত, সু চি-র সঙ্গে দেখা করতেই নেপিদও থেকে এ দিন ইয়াঙ্গন আসেন মনমোহন।
সু চি-ও বৈঠক শেষে জানান, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করবেন তিনি। স্মারক বক্তৃতা দেওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েও তিনি খুশি। একই সঙ্গে গণতন্ত্রকামী এই নেত্রীর মতে, ভারত-মায়ানমারের সম্পর্ক উন্নত হলে তা শুধু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করবে না, বরং গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষায় দু’দেশ পরস্পরকে সাহায্য করবে। তার কারণ শুধু ভৌগোলিক অবস্থান নয়, দু’দেশের ইতিহাস, মূল্যবোধ ও লক্ষ্য এক। সু চি-র কথায়, “দু’দেশের বন্ধুত্ব তখনই গভীর হয় যখন নাগরিকদের মধ্যে সম্পর্ক বাড়ে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে সেই কথা জানিয়েছি।” মনমোহন সিংহও এ দিন জানান, মায়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেন সুইয়ের উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক সংস্কার কর্মসূচিতে সু চি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন বলেই তিনি আশা করছেন।
ইয়াঙ্গনে বৈঠকের আগে মনমোহন ও সু চি। ছবি: পিটিআই
ইয়াঙ্গনে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ৪৫ মিনিট কথা হয় সু চি-র। সেখানেই সু চি বলেন, “আমরা ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের সম্মান করি। তবে নেহরু পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। খুবই ছোট বয়সে পণ্ডিতজিকে ওই নামে ডাকতে শিখি।” মনমোহন সিংহের কথায়, “ওঁর লড়াই সারা বিশ্বের মানুষকে ভরসা জুগিয়েছে। ভারত যথেষ্ট গর্বিত কারণ সু চি-র সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বহু পুরনো। আমরা আশা করি উনি নিজের লক্ষ্যে সফল হবেন।” পরে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে মনমোহন জানান, ভারতে আগামী জওহরলাল নেহরু স্মারক বক্তৃতা দেওয়ার জন্য সু চি-কে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী।
প্রসঙ্গত, ভারত চায় পুরোপুরি ভাবে গণতান্ত্রিক পথে হাঁটতে শুরু করুক মায়ানমার। তাতে নেপাল ও বাংলাদেশের মতো তাদের সঙ্গেও নয়াদিল্লির যোগাযোগ বাড়বে। শিল্প-বাণিজ্য ক্ষেত্রে সদর্থক প্রভাবও পড়বে। উত্তর-পূর্বে জঙ্গি অনুপ্রবেশ রুখতে মায়ানমারের সাহায্য দরকার, সেটা কিছুটা দেরিতে হলেও বুঝেছে নয়াদিল্লি। সম্প্রতি ভারত সফরে এসে মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টনও নয়াদিল্লিকে মায়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার পরামর্শ দেন। সেটা গুরুত্ব দিয়েই দেখছে কেন্দ্র। সোমবারই ‘পূবে তাকাও’ নীতির রূপায়ণে মায়ানমারের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।
এর আগে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম, উপ-রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি মায়ানমার সফরে এলেও তাঁরা সু চি-র সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাননি। তবে প্রত্যেকেই এসে সু চি-র খোঁজ নিয়েছেন। সে দিক থেকে মনমোহন সিংহের এই সফর যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। সু চি-র সঙ্গে তাঁর বৈঠক সার্বিক ভাবেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে সদর্থক ভূমিকা নেবে বলে আশা করছেন দু’দেশের কূটনীতিকরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.