কোথাও যেতে হবে না। নথিপত্রের প্রয়োজন নেই। পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা দিতেই মিলছে তফসিলি জাতি, উপজাতি অথবা ওবিসির শংসাপত্র। মালদহের চাঁচল মহকুমা জুড়ে এ ভাবেই জমে উঠেছে জাল শংসাপত্রের কারবার। বিষয়টি নজরে আসতে প্রশাসনের তরফে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। চাঁচলের মহকুমাশাসক পলাশ সেনগুপ্ত বলেন, “জাল শংসাপত্রগুলি হুবহু আসলের মতো দেখতে। মহকুমাশাসকের সিল, সই সব কিছু রয়েছে। খুঁটিয়ে না দেখলে সেটা জাল বোঝার উপায় নেই। সম্প্রতি ওই ধরনের কয়েকটি শংসাপত্র আমাদের নজরে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক তদন্তের পাশাপাশি পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে।” প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দেড় বছর আগে মহকুমার ৬টি ব্লক থেকে শংসাপত্রের জন্য পড়ে থাকা আবেদনপত্রের সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার। ক্রমশ তা কমে দাঁড়িয়েছে দেড় হাজারে। দ্রুত শংসাপত্র বিলির জন্য যখন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তখন যেন কেউ দালাল চক্রের ফাঁদে না পড়েন সেজন্য প্রচারে নামার কথা ভাবছে মহকুমা প্রশাসন। প্রশাসনের এক কর্তা জানান, সম্প্রতি অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীপদে চাকরি হয়েছে এমন কয়েকজন মহিলার শংসাপত্র ‘ভেরিফিকেশনের’ জন্য মহকুমাশাসকের দফতরে পাঠানো হয়। সেখানে দেখা যায় ৬ জনের শংসাপত্র জাল। এ ছাড়াও নামের বানান সংশোধনের জন্য আসা কয়েকটি জাল শংসাপত্রও নজরে আসে। জানা গিয়েছে, হরিশ্চন্দ্রপুরের রীতা সাহা নামে এক মহিলা তার শংসাপত্র ঠিক কিনা জানতে মহকুমাশাসকের দফতরে যান। দেখা যায়, রেজিস্ট্রারে ওই সিরিয়াল নম্বরে ২০০৩ সালে রতুয়ার এক মহিলাকে শংসাপত্র ইস্যু করা হয়েছে। এর পরে মোটা টাকা নিয়ে এক ব্যক্তি তাকে শংসাপত্র দিয়েছে বলে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানান রীতাদেবী। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় অভিযোগ জানান মহকুমাশাসক। রীতাদেবী বলেন, “তিন হাজার টাকা নিয়ে স্থানীয় এক ব্যক্তি আমাকে শংসাপত্র দেয়। ওই ব্যক্তি জানায়, নথিপত্রের প্রয়োজন নেই। তাঁদের মাধ্যমে গেলে কয়েকদিনের মধ্যে মহকুমাশাসকের দফতর থেকে শংসাপত্র পেয়ে যাবেন। সেটা হাতে পেয়ে ঠিক কিনা মহকুমাশাসকের দফতরে খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারি জাল।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শংসাপত্র পেতে বংশতালিকা জরুরি। কিন্তু সেটা অনেকের না থাকায় অনেকে ফাঁদে পা দিচ্ছে।প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, চাঁচল, হরিশ্চন্দ্রপুর, রতুয়া জুড়ে ওই চক্র সক্রিয়। চক্রের পান্ডা চাঁচলের খরবা এলাকার বলে জেনেছে পুলিশ। হরিশ্চন্দ্রপুরের আইসি বিপুল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে তদন্ত চলছে। দু’জনের নাম জানা সম্ভব হয়েছে। ওই দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।” |