শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে ‘আশ্রয়’ দিয়েছেন অভিযোগে কোচবিহারের চিলকিরহাটে খোকন নারায়ণ নামে এক তৃণমূল নেতার বাড়ি ভাঙচুর করল উত্তেজিত জনতা। সোমবার দুপুরে এই ঘটনার পরে পুলিশও জনতার ক্ষোভের মুখে পড়ে। পুলিশকে লক্ষ করে শুরু হয় ইটবৃষ্টি। বেশ কয়েকটি বোমাও ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। পুলিশের দু’টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। স্থানীয় এক বাসিন্দার মোটরসাইকেলও পুড়িয়ে দেয় ক্ষুব্ধ জনতা। অবস্থা সামাল দিতে পুলিশ লাঠি চালায় ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। ঘটনায় ৬ জন পুলিশ কর্মী জখম হন।
শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্ত তরুণ রায় নামে ওই যুবককে আটক করেছে পুলিশ। পাশাপাশি খোকনবাবুর বাড়ি ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তরুণবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, “আমাকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।” খোকনবাবু অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁকে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করাতে হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, অভিযুক্ত যুবক তৃণমূল কর্মী। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “অভিযুক্ত তৃণমূলের কেউ নন। বিপদে পড়ে কেউ কারও বাড়িতে ঢুকে পড়তেই পারেন। এটাকে আশ্রয় দেওয়াও বলে না। বামপন্থীদের একাংশ এ সব রটিয়ে এলাকায় উত্তেজনা ছড়াতে চাইছে। পুলিশকে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।” জেলা তৃণমূল নেতা আব্দুল জলিল আহমেদের দাবি, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মহিলাদের সঙ্গে অভব্য আচরণের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, তরুণবাবু শনিবার রাতে এক বধূর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। ওই বধূর চিৎকারে বাড়ির লোকজন উঠে পড়ায় তিনি পালিয়ে যান। ওই বধূর পরিবারের লোকদের দাবি, রবিবার অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় শ্লীলতাহানির অভিযোগ জানানো হয়। তার পরে সোমবার সকালে চিলকিরহাট বাজারে ওই বধূর এক আত্মীয়াকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। তার পরে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই সময়েই তরুণবাবু ঢুকে পড়েন তৃণমূলের চিলকিরহাট অঞ্চল সভাপতি খোকনবাবুর বাড়িতে। উত্তেজিত জনতা তাঁর বাড়ি ঘেরাও করে। সেই বাড়িরই একটি ঘর থেকে তরুণবাবুকে বার করে এনে শুরু হয় মারধর। পুলিশ গিয়ে তরুণবাবুকে উদ্ধার করে। খোকনবাবুর ভাই প্রসেনজিৎ নারায়ণ বলেন, “সাতসকালে তরুণ কখন আমাদের বাড়িতে ঢুকে পড়েছিল, তা কেউ জানতাম না। পরে জনতা বাড়ি ঘেরাও করলে অবাক হয়ে যাই।”
জেলার পুলিশ সুপার প্রণব দাস বলেন, “অভিযুক্ত যুবককে তাঁদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে বলে জনতা দাবি তুলেছিল। পুলিশ তাদের বোঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু জনতা তা মানতে চায়নি। তার মধ্যেই পুলিশ কর্মীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করে জনতা। কয়েকজন পুলিশ কর্মী তাতে জখম হন। বাধ্য হয়েই তখন লাঠি চালাতে ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে হয়েছে।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই দিন শূন্যে কয়েক রাউন্ড গুলিও চালিয়েছে পুলিশ। পুলিশ সুপার অবশ্য সে কথা অস্বীকার করেছেন। এলাকায় প্রচুর পুলিশ, র্যাফ, কমব্যাট ফোর্স টহলদারিতে নেমেছে। |