বেলপাহাড়ির ‘অশান্তি’তেও তৃণমূলের শক্তিবৃদ্ধির জল্পনা
ফের অশান্ত হয়ে উঠছে বেলপাহাড়ি। তৃণমূল-কর্মীর ছেলে খুন এবং এক ‘প্রাক্তন মাওবাদী’র গুলিবিদ্ধ হওয়ার পিঠোপিঠি ঘটনায় অস্বস্তি বেড়েছে প্রশাসনেরও। অস্থিরতার সুযোগে এলাকায় ফের মাওবাদী-সক্রিয়তা বাড়ার আশঙ্কাও করছে প্রশাসনের একাংশ।
একদা মাওবাদীদের ধাত্রীভূমি বেলপাহাড়িতে নতুন করে সন্ত্রাস ছড়ানোর জন্য ‘সিপিএম-মাওবাদী-ঝাড়খণ্ডী জোট’কেই দায়ী করছে প্রধান শাসকদল তৃণমূল। রাজনৈতিক মহলের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, ‘সন্ত্রাসে’র অভিযোগকে হাতিয়ার করে বেলপাহাড়িতে রাজনৈতিক-জমি তৈরিতে তৎপর প্রধান শাসকদলই। গত শুক্রবার গভীর রাতে ভেলাইডিহা অঞ্চলের বড়শোল গ্রামে তৃণমূল-কর্মী সুধীর সাহার ছেলে শ্যামল-খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের সিংহভাগই ঝাড়খণ্ডী নেতা-কর্মী। অন্য দিকে, রবিবার রাতে বাঁশপাহাড়ি অঞ্চলের কাশমাড় গ্রামে ‘প্রাক্তন মাওবাদী’ ফরেন সিংহ সর্দারের উপর হামলায় ঘটনায় সিপিএমের স্থানীয় লোকজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ছর্রা গুলিতে জখম ফরেনবাবু ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওই হামলায় অভিযুক্ত কাশমাড় গ্রামের দুই সিপিএম সমর্থক চারু সর্দার ও চামটু সর্দারকে সোমবার গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার তাঁদের আদালতে হাজির করা হবে।
জেলা তৃণমূল নেতা নির্মল ঘোষের দাবি, “মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে দিক্ভ্রষ্টদের অনেকেই মূলস্রোতে ফিরে আসছেন। ফরেনবাবুও সম্প্রতি আমাদের দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। এতেই শঙ্কিত হয়ে সিপিএমের বাঁশপাহাড়ি এলাকার হার্মাদ-বাহিনী ফরেনবাবুকে খুন করতে চেয়েছিল। সিপিএমের সঙ্গে মাওবাদী ও ঝাড়খণ্ডীদের একটা অংশও যোগ দিয়েছে।” রাজনৈতিক মহলের মতে, বেলপাহাড়িতে তৃণমূলের সংগঠন সে রকম মজবুত নয়। অভাব রয়েছে যোগ্য নেতৃত্বেরও। ফলে পঞ্চায়েত ভোটের আগে সিপিএম ও ঝাড়খণ্ডীদের একযোগে কোণঠাসা করতে পারলে রাজনৈতিক সুবিধা হবে তৃণমূলের। দলের জেলা নেতা নির্মল ঘোষের বক্তব্যে সেই ইঙ্গিতই স্পষ্ট। পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত-স্তরে ঝাড়খণ্ডীদের সাম্প্রতিক অগ্রগতিতেও যথেষ্টই অস্বস্তিতে রয়েছে তৃণমূল।
২০০৮ পর্যন্ত বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতায় ছিল ঝাড়খণ্ডী-জোট। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ঝাড়খণ্ডীদের একাংশের সঙ্গে কার্যত ‘সমঝোতা’ করেই পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতা দখল করে সিপিএম। ‘বিক্ষুব্ধ’ তিন সিপিএম সদস্যের সমর্থন নিয়ে গত এপ্রিলে পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম-সভাপতি হাড়িরাম সিংহের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে তাঁকে অপসারিত করে ঝাড়খণ্ডীরা ক্ষমতা দখল করেছে।
ইতিমধ্যে বেলপাহাড়ির হাড়দা গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম-প্রধান বিকাশচন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধেও অনাস্থা এনেছে ঝাড়খণ্ডীরা। আগামী বৃহস্পতিবার অনাস্থার তলবি-সভা ডাকা হয়েছে। হাড়দা পঞ্চায়েতের মোট সদস্য ১২। এর মধ্যে সিপিএম ৬, ঝাড়খণ্ডী ৫ ও নির্দল ১। প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা-প্রস্তাব এনেছেন ৫ ঝাড়খণ্ডী সদস্য। আদতে সিপিএমের প্রধান হলেও বিকাশবাবুও কয়েক মাস যাবত স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে ‘সুসম্পর্ক’ রেখে চলছিলেন বলেই স্থানীয় সূত্রে খবর। যে কারণে নিজের দল সিপিএমও বিকাশবাবুর পাশে নেই। অন্য দিকে, গত বিধানসভা ভোটে বিনপুর কেন্দ্রে চুনিবালা হাঁসদার পরাজয়ের জেরে এবং রাজ্যের ক্ষমতায় তৃণমূলের সরকার আসার পর ঝাড়খণ্ডী নেতা-কর্মীদের একটি অংশ তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। গত কয়েক মাসের মধ্যে বেলপাহাড়ি ব্লকের ৫টি স্কুল পরিচালন কমিটির দখলও নিয়েছে তৃণমূলপন্থীরা। তবে, চুনিবালার নেতৃত্বে ঝাড়খণ্ডীরা বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতি দখল করায় সম্প্রতি ভেলাইডিহার মৃত্যুঞ্জয় ঘোষালের মতো তৃণমূলে যোগ দেওয়া অনেক দলছুটই ফের ঝাড়খণ্ড পার্টিতে ফিরেছেন। শ্যামল-খুনের অভিযোগে সেই মৃত্যুঞ্জয়বাবু-সহ ৫ জন গ্রেফতার হয়ে এখন পুলিশ হেফাজতে। ৫ জনের চার জনই ঝাড়খণ্ডী নেতা-কর্মী। এক জন সিপিএম সমর্থক।
একযোগে সিপিএম-ঝাড়খণ্ডীদের ‘জব্দ’ করে পঞ্চায়েত ভোটের আগে এলাকায় তৃণমূল শক্তি বাড়াতে চাইছে বলেই ব্যাখ্যা স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.