|
|
|
|
পুরকথায় পাঁশকুড়া ২... |
অধিকাংশ নালাই কাঁচা, পাঁচ বছরে হাল ফেরেনি নিকাশির |
আনন্দ মণ্ডল • কলকাতা |
গ্রাম থেকে শহরে উন্নীত হওয়ার সময় নানা আশায় বুক বেঁধেছিলেন পাঁশকুড়ার পুর-নাগরিকরা। মোরাম থেকে কংক্রিট বা পিচ রাস্তা, বাড়ি বাড়ি নলবাহিত পানীয় জল, পর্যাপ্ত পথবাতি আর বর্ষায় জমা জলের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে পাকা নর্দমা পরিষেবার প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছিল উত্তরণের স্বপ্ন। কিন্তু ২০০২ থেকে ২০১২ পুরসভার ১০ বছরের জীবনে বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। প্রথম ৫ বছর পুরসভা বামেদের দখলে থাকলেও গত ৫ বছর ক্ষমতাসীন কংগ্রেস-তৃণমূল। এক বছর হল রাজ্যপাটেও জোটই। ফলে, পাঁশকুড়ার মানুষের চাহিদা পূরণ না হওয়ার জবাবদিহি তাদেরই করতে হবে।
একদা কৃষিভিত্তিক পাঁশকুড়া পুর এলাকায় বাজার সম্প্রসারণের পাশাপাশি বেড়েছে জলাজমি ভরাট করে বসতি তৈরির প্রবণতা। নিকাশি খালের বাঁধ, পাড় দখল করে গড়ে উটেছে ঘরবাড়ি, দোকানপাট। পরিণাম ফি বর্ষায় কার্যত বানভাসি পাঁশকুড়া বাজার এলাকা। কাঁসাই ও সংলগ্ন একাধিক বড় খালেও সমস্যার সমাধান হয় না। পুরসভায় উন্নীত হওয়ার পরেও বাহারগ্রাম, সুরানানকার, প্রতাপপুর, গড়পুরুষোত্তমপুর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার নিকাশির হাল ফেরেনি বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু নিকাশি নালা আংশিক পাকা করা হলেও নিকাশির প্রধান খালগুলি সংস্কার করা হয়নি। ফলে, বর্ষার জমা জল বেরনোর জো নেই। এই জমা জলেই বন্দি হয়ে থাকতে হয় বেশ কিছু ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের। অভিযোগ, কাঁসাই নদী এবং মেদিনীপুর ও সুরার ক্যানাল থাকা সত্ত্বেও উপযুক্ত পরিকল্পনা করে নিকাশি সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়নি। পুরপ্রধান আব্দুল হাকিম খান অবশ্য বলেন, “নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়নে পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ১২, ১৩, ১৪, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে হাইড্রেন তৈরির প্রস্তাব পাশ হয়েছে।”
পাঁশকুড়া পুর এলাকার প্রাণকেন্দ্র স্টেশন বাজার সংলগ্ন ৭, ৮, ৯, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে নিকাশি সমস্যা প্রবল। এক দিকে সুরার ক্যানাল বর্জ্য জমে বেহাল। তার উপর স্টেশন চত্বরের জলও এই ওয়ার্ডগুলিতেই এসে পড়ে। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বাসিন্দা সেরাজুল খান বলেন, “গোটা বর্ষাকালই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পুরসভা হওয়ার ১০ বছর পরেও নিকাশি সমস্যা মিটল না।” ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর তথা বিদায়ী বোর্ডে উপ-পুরপ্রধান আশুতোষ চক্রবর্তী স্বীকারোক্তি, “আমরা ক্ষমতায় আসার পর সব থেকে গুরুত্ব দিয়েছি পানীয় জলের সমস্যা সমাধানে। এরপর রাস্তা ও নিকাশির হাল ফেরাতে চেষ্টা করেছি। জলপ্রকল্পের টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এ বার অগ্রাধিকার পাবে নিকাশির উন্নয়ন।”
উপ-পুরপ্রধান আরও জানালেন, পাঁশকুড়ার নিকাশির ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কাঁসাইয়ের সঙ্গে যুক্ত মেদিনীপুর ও সুরার ক্যানালের। দু’টি ক্যানালই সেচ দফতরের অধীন। তবে দ্রুত ক্যানাল দু’টি সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে। সুরার ক্যানালের ডুবাপুলে স্ল্যুইস গেট বানানো জরুরি। আর ক্যানালটি সোয়াদিঘি খালের সংযোগস্থল পর্যন্ত মেরামত করা প্রয়োজন। আর মেদিনীপুর ক্যানাল সংস্কার হলে ১, ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে নিকাশির হাল ফিরবে। কিন্তু এখন প্রশ্ন গত ৫ বছর ক্ষমতায় থাকলেও এ ক্ষেত্রে কেন তৎপর হয়নি কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের পুরবোর্ড? উপ-পুরপ্রধানের অবশ্য দাবি, সেচ দফতরের সঙ্গে খাল সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
পুরসভার ১৪, ১৫, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে গড়পুরুষোত্তমপুর, চাঁপাডালি, রূপদয়পুর এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থা কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শেখ সলুলুদ্দিনের কথায়, “এলাকার সব নিকাশি নালা এখনও কাঁচা। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তাঘাট ডুবে যায়। গত ১০ বছরে কোনও কাজই হয়নি।” নিকাশি ব্যবস্থার মানোনন্নয়নে ক্ষমতাসীন পুরবোর্ড যে ব্যর্থ, সে কথা জানিয়ে পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের নকুল চাউলিয়া বলেন, “নিকাশি সমস্যার সমাধানে এই পুরবোর্ড কোনও পরিকল্পনাই নেয়নি।” অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন পুরপ্রধান। তাঁর বক্তব্য, “কাঁসাইয়ের সঙ্গে সংযুক্ত খাল সংস্কার, হাইড্রেন তৈরি-সহ নিকাশির সামগ্রিক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।”
পুরপ্রধানের দাবি আর বাস্তবের মধ্যে কতটা মিল, কতটাই বা ফারাক তা জানেন পাঁশকুড়াবাসী। আসন্ন নির্বাচনে সেই অভিজ্ঞতারই প্রতিফলন হতে চলেছে ইভিএমে। |
|
|
|
|
|